শিক্ষণীয় গল্প: মা-বাবার সেবা করা স্ত্রীর দায়িত্ব নয়!

সোহেল চুপচাপ স্ত্রী ঝুমুরের কথা শুনলো! তারপর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, তুমি সত্য বলেছো। আল্লাহ্‌ তোমাকে শ্বশুর শাশুড়িকে সেবা করতে বাধ্য করেননি। কিন্তু মানবিকতা বলে তো একটা কথা আছে। আমি মা বাবার একমাত্র সন্তান। উনারা দুজনেই অসুস্থ, আমি চাকুরী করি। এখন উনাদের পাশে থাকা কি তোমার দায়িত্ব না?

– দায়িত্ব বলছো কেন? আল্লাহ্‌ তো আমাকে এই দায়িত্ব দেননি! তুমি অন্য ব্যবস্থা করো। দেখো তাদের দেখাশোনা করতে কোন কাজের লোক পাওয়া যায় কিনা!

– কাজের লোক কি নিজের লোকের মত দেখাশোনা করবে? আমাদের বাঙালী সমাজ কি শ্বশুর শাশুড়িকে দেখাশোনা করা দায়িত্ব মনে করেনা?

– তুমি ইসলাম নিয়ে কথা বলো। বাঙালী সমাজে অনেক কিছু আছে যা ইসলাম বিরোধী।

সোহেল বেশ কিছুক্ষন নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলো। তারপর ধীরে ধীরে বললো, আলহামদুলিল্লাহ্‌। তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি আশা করবো তুমি সব সময় বাঙালী সেন্টিমেন্ট পরিহার করে চলবে। আমার সাথে কোন ক্ষেত্রে যেন এই সেন্টিমেন্ট না দেখাও।

– অবশ্যই দেখাবোনা। ইসলামের উপর থাকলে আমার কোন কথা থাকবেনা।

– তোমাকে আবারো ধন্যবাদ। আমার বাবা মায়ের যেহুতু আমি ছাড়া কেউ নেই সেহুতু ব্যবস্থা আমাকেই করতে হবে। আর কাজের লোক দিয়ে যেহুতু প্রপারলি আমার কাজ সম্পাদন হবেনা তাই দ্রুত আমি আরো একটি বিয়ে করে মা বাবার কাছে রেখে আসবো। ইসলাম আমাকে চারটি বিয়ের অনুমতি দিয়েছে। তোমার নিশ্চয় কোন আপত্তি নেই?

ঝুমুর এক দৃষ্টিতে সোহেলের দিকে তাকিয়ে থাকলো। সোহেল একটু পিঠ চাপড়ে দিয়ে বললো, চলো ঘুমাতে যাই।



সোহেল ঘুম থেকে উঠে দেখে ঝুমুর পাশে নেই। বেড রুম থেকে ড্রয়িং রুমে এসে দেখে সে ব্যাগ গুছিয়ে বসে আছে। একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, তুমি এই সকালে কোথায় যাচ্ছো?

– তুমি রেডি হয়ে নাও। আমাকে বাবা মায়ের কাছে রেখে আসো। এই সময় উনাদের পাশে আমার থাকা উচিৎ।

– কেন তোমার বাবা মায়ের কি হয়েছে?

– আমি আমার শ্বশুর শাশুড়ির কথা বলছি।

– ও আচ্ছা! আমাকে দশটা মিনিট সময় দাও। রেডি হতে এর থেকে এক সেকেণ্ডও বেশি সময় লাগবেনা….

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাবিরোধী রবীন্দ্রনাথের সমস্ত লিখনী বাদ দেওয়া হোক

১৯১২ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্টা পায়।এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোর বিরোধী ছিল রবীন্দনাথ।
১. ১৯১২ খ্রিস্টাব্দের ২৮ মার্চ কলিকাতার গড়ের মাঠে এক বিরাট সমাবেশ করা হয়। তখন কবির বয়স ছিল ৫১ বছর। ঠিক তার দু’দিন পূর্বে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং হয়েছিল। সেখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, ঢাকায় ইউনিভার্সিটি হতে দেওয়া যাবে না। ঐ গুরুত্বপূর্ণ সভায় বাঘা বাঘা হিন্দু নেতারা উপস্থিত ছিল। নতুন রাজ্য পুনর্গঠনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজন কিনা? বা শিক্ষা বিষয়ে করণীয় কি? আলোচনার জন্য এক জনপ্রতিনিধিত্বপূর্ণ সভা হয় কলকাতার টাউন হলে। উক্ত উভয় সভার সভাপতি ছিল রবীন্দ্রনাথ। (কলকাতা ইতিহাসের দিনলিপি, ড. নীরদ বরণ হাজরা, ২য় খণ্ড, ৪র্থ পর্ব)।
২. “তাহলে কি রবীন্দ্রনাথ চায়নি যে, তার জমিদারীর অন্তর্ভুক্ত মুসলমান কৃষক ও শ্রমিক সন্তান এবং অনুনয়তরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের আলো পেয়ে ধন্য হোক।… বলতে আরো লজ্জা হয় যে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আশুতোষ মুখার্জীর নেতৃত্বে সেই সময়কার ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জকে (যাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় না হয় তার জন্য) ১৮ বার স্মারকলিপি দিয়ে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। নীচতা এত নীচে নেমেছিল যে, তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিদ্রপ করে বলত মক্কা বিশ্ববিদ্যালয়।” (তথ্য, জীবনের স্মৃতিদ্বীপে : ডক্টর রমেশচন্দ্র মজুমদার, আবুল আসাদের ১০০ বছরের রাজনীতি থেকে উদ্ধৃত, পৃ. ৭২) (উলে-খ্য, উক্ত আশু বাবু ছিলেন রবি ঠাকুরের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়)
৩. ১৯১২ সালের ২৮ মার্চ কলকাতার গড়ের মাঠে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে হিন্দুরা প্রতিবাদ সভা ডাকে। প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। কারণ সে ছিল জমিদার। সে মুসলমান প্রজাদের মনে করত গৃহপালিত পশু। (নীরদ চন্দ্র চৌধুরী, দি অটোবায়োগ্রাফী অব আননোন ইন্ডিয়া)।
আফসোস আজ সে বিশ্ববিদ্যালয়েই রবীন্দ্র এর লিখনী পড়ানো হয়!
আমাদের আত্বসম্মানবোধ কি এতই নিন্ম ?

কাতার ও সৌদি বিরোধে আমেরিকা-ইসরাঈলের নীলনকশা

মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব:

পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের আরব দেশগুলোর মধ্যকার চলমান সংকট শান্তিপূর্ণভাবে নিরসনের জন্য বিভিন্ন মধ্যস্থতা ও উদ্যোগের পাহাড় জমে যাচ্ছে। কাতারের সমস্যা তার নিকটতম প্রতিবেশী পারস্য ও রোমানদের (ইরানি ও তুর্কিদের প্রাচীন স্থানীয় নাম) সঙ্গে।
আপাতদৃষ্টিতে কাতারকে সবচেয়ে বেশি সমর্থন করছে তুরস্ক । তুরস্ক এমন একটি বিল অনুমোদন করেছে, যার ফলে আরও বেশি সৈন্য কাতারে পাঠানো যাবে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট মধ্যস্থতা করতেও প্রস্তাব দিয়েছেন। আরব বিশ্বে হৈচৈ শুরু হয়েছে তার মধ্যস্থার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে।

সেবাদাস-মিডিয়ায় কর্মরত দালাল শ্র্রেণীর বিশ্লেষকরা বলছেন, “তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান শুরু থেকেই পরিস্কারভাবে ‘কাতারি উপন্যাসের’ প্রতি ঝুঁকে পড়েছেন। এটি হয়তবা তার মধ্যস্থতার বিশ্বাসযোগ্যতাকে দুর্বল করে দেবে। কেননা তিনি খোলামেলাই বলেছেন, ‘নিশ্চয় কাতার মাজলুম। তাকে দায়ী করা ঠিক হবে না।” (আল আরাবিয়া নেট)
তবে তুরুস্ক কেন কাতারের পক্ষ নিল সেই প্রশ্নের উত্তরটাই বড় বিষয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে পেট্রোডলারের দেশগুলোতে আধিপত্য বিস্তারের ধারাবাহিকতায় ইসরাইল ও মিসরকে কড়া নিয়ন্ত্রণ, লিবিয়া, ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেনকে ধ্বংস করে গন্তব্যের শেষের দিকে এসে পৌছেছে। এই আধিপত্য বিস্তারের ব্যাপারে তাদের একমাত্র প্রতিবন্ধক প্যান-ইসলামিক শক্তি অর্থাৎ মুসলিম ব্রাদারহুড এবং এই ধরনের অন্যান্য সংগঠন। এই প্রতিবন্ধক শক্তিকে নির্মূল করার জন্য প্রচার মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালানোর পরও কাঙ্খিত ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। বিরামহীন প্রচারণার ফলে ইসলামোফোবিয়া পশ্চিমা বিশ্বের শিরা-উপশিরায় ব্লাড-ক্যান্সারের মতো প্রবাহ হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে ভয়াবহ হামলার মধ্য দিয়ে এ ক্যান্সারের যাত্রা শুরু। শুরুতে ব্রেইন ক্যান্সার। তারপর দেহ। এখন শিরা-উপশিরায়। এখনও তা চলছে। শুরুটা ছিল আধিপত্যবাদী মোড়ল রাষ্ট্রগুলোর যাত্রার সূচনা। এ যাত্রায় তারা গন্তব্য পানে অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছুটে চলছে।
নাইন-ইলেভেনের পর বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের বিচরণ সঙ্কীর্ণ করে দেওয়া হয়েছে। এখন পশ্চিমা দেশগুলোতে কোনো ব্যক্তির মুসলমান অথবা ইসলামি ঐতিহ্যের ধারক হওয়া অপরাধ হিসেবে গণ্য হচ্ছে। পশ্চিমা ও বিশ্ব মিডিয়া মুসলমানদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে প্রোপাগাণ্ডা চালাচ্ছে। উগ্রপন্থী ও সন্ত্রাসী জাতি হিসেবে মুসলমানদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে ইসলামের। পশ্চিমা সংস্কৃতির জন্য ইসলামকে সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। সোস্যাল মিডিয়াতে ইসলাম ও মুসলমানদের সবচেয়ে সমালোচনার লক্ষ্যবস্তু বানানো হচ্ছে।
পাশ্চাত্যে ক্রম বর্ধমান ইসলামভীতি সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা লাভ করা যায়, যখন আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরব সফর করে বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে মুসলমানদেরই কেবল সন্ত্রাসের নির্মূলের উপদেশ দিচ্ছেন। আমেরিকান ইসলামিক সামিট না করে আমেরিকান ইসরাইল সামিট করে তাদেরকে সন্ত্রাস ছাড়ার উপদেশ তো ট্রাম্প দিচ্ছেন না। সত্য হলো, নাইন-ইলেভেন, প্যারিস হামলা ও অন্য সব দৃশ্যপটও একেকটি নাটক। এর নেপথ্য উদ্দেশ্য, মধ্যপ্রাচ্যের তেল দখল, ইসরায়েলকে শক্তিশালী এবং বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করা।

মার্কিন খপ্পরে পড়া উপসাগরীয় দেশগুলো একবার একটু ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখতে পাবে, যাদেরকে সন্ত্রাসের জন্য দায়ী করা হচ্ছে, ঐতিহাসিক উগ্রবাদ ও সহিংসতার ইতিহাস কি তারা রচনা করেছিল? না এই ঘৃণ্য ইতিহাস রচিত হয়েছে খোদ উপদেশ দাতাদের দ্বারাই? কাতারকে যখন অবরুব্ধ করা হলো ইসরাইলের যুদ্ধমন্ত্রী এভিগডোর লিবারম্যান বলল, ‘সন্ত্রাসীদের প্রতি দোহার সমর্থনের কারণে কাতারের সঙ্গে আরব দেশগুলোর সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ায় এখন ইসরাইল ও অন্য আরব দেশ মিলে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জোট গঠন করতে পারবে।’ লিবারম্যান আরো দাবি করেন, ‘আরব দেশগুলো এটা বুঝতে পেরেছে যে, মধ্যপ্রাচ্যের প্রকৃত হুমকি ইসরাইল ও ইহুদিরা নয় বরং সন্ত্রাসবাদই প্রধান বিপদ।’

যে ইসরাইল আজ ‘সন্ত্রাসী’দের মদদ দেওয়ার অভিযোগে কাতার অবরোধকে বড় গলায় সমর্থন করছে সে ইসরাইলই ১৯৮২ সালে লেবাননে হামলা চালিয়ে ১৭ হাজার ৫০০ নিরপরাধ বেসামরিক লোককে শহীদ করেছে। বর্তমানে যে আইএস সিরিয়ায় বোমাবর্ষণ করছে, প্রতিদিন হাজার হাজার নিষ্পাপ শিশু, বুড়ো, যুবক ও মহিলাকে বোমা মেরে মেরে ফেলা হচ্ছে সে আইএসের সৃষ্টিও হয়েছে ইসরাইল থেকেই। ১৯৪৮ সালের ১৫ মে মুসলিম ফিলিস্তিনে মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া রূপে আত্মপ্রকাশকারী ইহুদি রাষ্ট্রটির লাগামহীন সন্ত্রাসের গতি রোধ করা খোদ আমেরিকার পক্ষেও অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে।
কাতার অবরোধের সঙ্গে সঙ্গে যে আমেরিকা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পথচলার সূচনা হয়েছে বলে কৃতিত্ব দাবি করেছে তাদের ইতিহাস কিন্তু রক্তের ইতিহাস। ইরাক ও আফগানিস্তানের সম্পদ পাওয়ার জন্য জোর দখল করে এ অঞ্চলের মানুষ ও মানবতাকে পিষে দিয়ে পীড়াদায়ক জুলুমের নিষ্ঠুর কাহিনি রচনা করেছে এই আমেরিকা। এক উসামা বিন লাদেন-এর খোঁজে ১২ লাখ নিরপরাধ মানুষকে নির্দয়ভাবে হত্যা করেছে আমেরিকা। ১০ লাখের বেশি ইরাকি মুসলমানকে মেরে ফেলার পর নির্লজ্জভাবে স্বীকার করেছে, ইরাকে হামলা বড় ধরনের ‘ভুল’ ছিল।

লিবিয়ায় হামলা করে সেখানকার প্রতিষ্ঠিত সরকারকে উৎখাত করে গৃহযুদ্ধ বাঁধিয়ে দেওয়া হয়েছে। ড্রোন হামলার নামে পাকিস্তানে হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এসব কথিত শান্তির ঠিকাদাররা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে মুহূর্তেই লাখ লাখ নিরপরাধ মানুষকে দুনিয়ার ওপারে পাঠিয়ে দিয়েছিল। তারাই যখন সন্ত্রাসের অভিযোগে কাতারকে অবরোধ করার জন্য উপসাগরীয় দেশগুলোকে উস্কে দেয় তখন এরদোগানের ন্যায় নেতারা কাতারের পক্ষ অবলম্বন করাতে দোষের কিইবা আছে।

দালাল বিশ্লেষকদের ভাবনা হচ্ছে, ‘তাহলে কি সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মিশর, জর্দান ও মৌরতানিয়া এবং অন্যান্য দেশের কাতারের বিরুদ্ধে তাদের কি কোনো দলিল নেই?’

আসলে সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়া, ইরানকে সমর্থন করা এগুলো হচ্ছে মানুষকে বোকা বানানোর প্রচেষ্টা মাত্র। কাতারের বিরুদ্ধে যা করা হচ্ছে তা মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল এবং আমেরিকার তৈরি নীলনকশারই অংশ মাত্র। আমেরিকা ও ইসরাইলঘেঁষা সৌদি জোটের মূল ক্ষোভের কারণ হচ্ছে গাজায় ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর একমাত্র প্রতিরোধ শক্তি হামাসের প্রতি কাতারের সমর্থন।
পশ্চিমা বিশ্ব জানে যে, কাতারের একমাত্র সাহসী এবং প্রতিবাদী মিডিয়া আল-জাজিরার মাধ্যমে ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর অপকর্মের মুখোশ খুলে যাচ্ছে। খুলে যাচ্ছে মিসরের স্বৈরাচারী মুবারকসহ অন্যান্য আরব শাসকদের মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে করা নির্মম নিপীড়ন। সুতরা আল-জাজিরা তাদের ক্ষমতার মসনদে টিকে থাকার পথে ব্রাদারহুড ও হামাসের চেয়ে কোনো অংশে কম প্রতিবন্ধক নয়। তাইতো আল-জাজিরাকে স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য এতো আয়োজন। আর আল-জাজিরার কণ্ঠরোধ করতে পারলে বিশ্বজনমতকে অন্ধকারে রেখে এই লক্ষ্য অর্জন করা হবে অনেক সহজ।
যাইহোক, তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু দোহায় সফরের পর রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আনাদোলুকে বলেন, অবশ্যই সংলাপ ও শান্তির মাধ্যমে সংকট নিরসন করতে হবে। তুরুস্ক সংকট নিরসনে অংশ নিবে। তুর্কি প্রচেষ্টার জন্য আমরা সফলতা কামনা করি।

লেখক: সম্পাদক, মাসিক আলহেরা

সেলফি আসক্তি, আমাদের করণীয়

বর্তমান সময়ে সেলফি-আসক্তি অনেকটা মনোরোগের পর্যায়ে চলে গেছে। মনস্তত্ববিদগণ এভাবেই তা ব্যাখ্যা করছেন। সেলফির বিচিত্র রূপ ও ব্যাপক বিস্তার সামনে রাখলে তাদের ব্যাখ্যার যথার্থতা বেশ বুঝে আসে।
.
কিছু কিছু সেলফি আছে যা সরাসরি নিজের প্রাণকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা। হিংস্র প্রাণীর সাথে সেলফি, চলন্ত ট্রেনের সামনে সেলফি, পাহাড়ের চূড়ার প্রান্তে পা ঝুলিয়ে সেলফি, আরো কত রকমের সেলফি যে মানুষ তুলছে এবং দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আহত-নিহত হচ্ছে তা একজন সাধারণ পত্রিকা-পাঠকেরও অজানা নয়। এখন তো সেলফির দৌরাত্ম্য ইবাদত-বন্দেগী পর্যন্তও পৌঁছে গেছে। মুসলমানের বহু কাঙ্ক্ষিত ইবাদত হজ্বে ও তাওয়াফেও সেলফির ছড়াছড়ি!
.
সেলফির মূল কথাটি হচ্ছে নিজেকে বা নিজের বিশেষ কোনো মুহূর্তকে নিজে ধারণ করা। এই ধারণের প্রেরণা কী, উদ্দেশ্য কী? সাধারণত তা হয় মনের ইচ্ছা পূরণ, ক্ষণিকের আনন্দ এবং অন্যের কাছে নিজেকে উপস্থাপন ।
.
মনের সকল ইচ্ছা পূরণ কি মানুষের জন্য কল্যাণকর? আর মানুষের কাছে সবকিছু উপস্থাপন করে কী লাভ? নিজেকে ও নিজের সকল মুহূর্তকে উপস্থাপন করতে হবে একমাত্র আল্লাহর কাছে। কুরআন মাজীদ আমাদের শেখাচ্ছে, ‘আমার সালাত, আমার ইবাদত, আমারজীবন, আমার মরণ আল্লাহর জন্য, যিনি রাব্বুল আলামীন।’
.
আমারহজ্ব, আমার তাওয়াফ তো মানুষের জন্য নয়, আমার নিজের ইচ্ছা পূরণ বা বিনোদনের জন্যও নয়, এ তো আল্লাহকে সন্তুষ্ট করবার জন্য। আমি কি চিন্তা করেছি, সেলফির মতো সামান্য একটি ইচ্ছাপূরণের দ্বারা আমার ইবাদতটিই মাটি হয়ে যাচ্ছে? সেলফির দ্বারা তো ইবাদতের স্বরূপই বদলে যায়। বলুন তো ইবাদতের মধ্যে যে আল্লাহর বান্দা সেলফিগ্রস্ত হয় তার উদ্দেশ্য কি ইবাদত থাকে, না ইবাদতের অঙ্গ-ভঙ্গি? সে তো ইবাদত করছে না, ছবি তোলার জন্য ইবাদতের অঙ্গ-ভঙ্গি করছে। কিংবা অন্তত আল্লাহকে ভুলে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই প্রাণহীন অঙ্গ-ভঙ্গির কী মূল্য তাহলে আল্লাহর কাছে হতে পারে? কুরআন মাজীদের এক জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
لَیْسَ الْبِرَّ اَنْ تُوَلُّوْا وُجُوْهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَ الْمَغْرِبِ وَ لٰكِنَّ الْبِرَّ مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ وَ الْمَلٰٓىِٕكَةِ وَ الْكِتٰبِ وَ النَّبِیّٖنَ وَ اٰتَی الْمَالَ عَلٰی حُبِّهٖ ذَوِی الْقُرْبٰی وَ الْیَتٰمٰی وَ الْمَسٰكِیْنَ وَ ابْنَ السَّبِیْلِ وَ السَّآىِٕلِیْنَ وَ فِی الرِّقَابِ وَ اَقَامَ الصَّلٰوةَ وَ اٰتَی الزَّكٰوةَ وَ الْمُوْفُوْنَ بِعَهْدِهِمْ اِذَا عٰهَدُوْا وَ الصّٰبِرِیْنَ فِی الْبَاْسَآءِ وَ الضَّرَّآءِ وَ حِیْنَ الْبَاْسِ اُولٰٓىِٕكَ الَّذِیْنَ صَدَقُوْا وَ اُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْمُتَّقُوْنَ.
পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফিরানোতে কোনো পুণ্য নেই; পুণ্য (বান তো সে) যে, ঈমান এনেছে আল্লাহর উপর, শেষ দিবসের উপর, সমস্ত ফেরেশতা, কিতাবসমূহ ও নবীগণের উপর… -সূরা বাকারা (২) : ১৭৭
.
ঈমানদারের জন্যও এ আয়াতে এই গভীর শিক্ষা আছে যে, তার ইবাদত-বন্দেগীও যেন শুধু অঙ্গভঙ্গিতে পর্যবসিত না হয়।
.
আরেক জায়গায় মুমিনদের লক্ষ্য করে ইরশাদ হয়েছে-
لَنْ یَّنَالَ اللهَ لُحُوْمُهَا وَ لَا دِمَآؤُهَا وَ لٰكِنْ یَّنَالُهُ التَّقْوٰی مِنْكُمْ كَذٰلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمْ لِتُكَبِّرُوا اللهَ عَلٰی مَا هَدٰىكُمْ وَ بَشِّرِ الْمُحْسِنِیْنَ.
আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না তার (কুরবানীর প্রাণীর) গোশত ও রক্ত; বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া…। -সূরা হজ্ব (২২) : ৩৭
.
অথচ কুরবানীর মতো ইবাদতও যারা ভিডিও করে থাকেন তারা কি কুরবানীর পশুর রক্ত-মাংসের মধ্যেই বাধা পড়ে গেলেন না?
.
আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ইবাদতের প্রাণ হচ্ছে ‘যিকরুল্লাহ’আল্লাহর স্মরণ। একারণেই সালাত ও কুরবানী, হজ্ব ও তাওয়াফ সব ক্ষেত্রেই কুরআন-সুন্নাহয় ‘আল্লাহর স্মরণ’কথাটি উল্লেখিত হয়েছে। ছবি তোলা, ভিডিও করা ইত্যাদির মাধ্যমে ইবাদতের এই বড় অনুষঙ্গটি যে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা তো বলাই বাহুল্য।
.
দ্বিতীয়ত, সেলফি যদি হয় বিনোদন তাহলে ইবাদত-বন্দেগীতে সেলফিগ্রস্ততার দ্বারা কি ইবাদতকে বিনোদনে পরিণত করা হয় না?
.
দ্বীন-ধর্মকে ক্রীড়া ও বিনোদনে পর্যবসিত করা তো অনেক বড় অপরাধ।
.
তৃতীয়ত, সেলফিতে যখন যোগ হয় লোকের বাহবা পাওয়ার চিন্তা তখন এর মাধ্যমে ইবাদত রিয়াগ্রস্ত হয়, যাকে হাদীস শরীফে বলা হয়েছে ‘শিরকে আসগর’।
.
চিন্তা করলে দেখা যায়, উপরের যে কোনো একটি বিষয়ই ইবাদতকে বিনষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। কাজেই সামান্য ইচ্ছা পূরণের জন্য হজ্ব-কুরবানীর মতো বাঞ্ছিত ও প্রতীক্ষিত ইবাদতকে নষ্ট করে ফেলা কত বড় নির্বুদ্ধিতা! দেখুন, শয়তান কত সহজে আমাদের বহু আকাক্সিক্ষত ইবাদতগুলো মাটি করে দেয়!
.
এরপর আসুন ঝুঁকিপূর্ণ সেলফি প্রসঙ্গে। যে সেলফির জন্য তরুণ-যুবকেরা জীবনের ঝুঁকি পর্যন্ত নিয়ে ফেলছেন তারা হয়তো সচেতন নন যে, এভাবে তারা একটি গর্হিত কাজে লিপ্ত হচ্ছেন। শরীয়তের বিধানে এটা বৈধ নয়। এ তো উপযুক্ত কারণ ছাড়া নিজেকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করা, যা পরিষ্কার নিষেধ। হাদীস শরীফে তো মৃত্যুর কামনা করতেও নিষেধ করা হয়েছে তাহলে নিজেকে মৃত্যু-ঝুঁকির মুখোমুখি করার তো প্রশ্নই আসে না।
.
মানুষের জীবন অতি মূল্যবান। এই একটিমাত্র জীবনকে কাজে লাগিয়ে যেমন মানুষকে আখিরাতের চিরস্থায়ী মুক্তি ও সাফল্য অন্বেষণ করতে হয় তেমনি পৃথিবীর অনেক এবং অনেকের দায়-দায়িত্বও পালন করতে হয়। তাহলে অর্থহীন কাজে এই জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলা মর্মান্তিক অবিবেচনা নয় কি? হায়! মানুষের প্রকাশ্য দুশমন শয়তান যে মানুষকে কতভাবে প্ররোচিত ও ক্ষতিগ্রস্ত করে!
.
প্রিয় বন্ধু! আপনি কি একজন সাহসী যুবক? আপনি কি আনন্দ পান অন্যের চেয়ে এগিয়ে যাওয়া বা আলাদা হওয়ার মধ্যেই? তাহলে আপনাকে স্বাগতম! ইসলাম আপনাকে স্বাগত জানায় অর্থহীন কাজে নয়, অর্থপূর্ণ কর্মের বিস্তৃত অঙ্গনে-মানবসেবায়, জাতিগঠনে, ন্যায়ের বিস্তারে, অন্যায়ের প্রতিরোধে। দেখুন, একজন বহু সাধ্য-সাধনা করে তেলতেলে মুলিবাঁশ বেয়ে উঠে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করল। এই কর্মে সে এমনই অভাবিতপূর্ব সাফল্য অর্জন করল যে, শুধু মাটির মানুষ নয়, গাছের বানরও অভিভূত হয়ে গেল; বলুন তো এতে তার কী প্রাপ্তি ঘটল?
.
তাই আজেবাজে কাজ নয়, এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্র হচ্ছে জ্ঞান-প্রজ্ঞা ও কর্ম-কুশলতা। চলুন না, এই সব ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে যাই। আর এগিয়ে যাই একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে সন্তুষ্ট করবার জন্য, একমাত্র যাঁর কাছেই আমাদের সকল কর্ম ও মুহূর্ত থাকবে চির অক্ষয়।
.
— গোলাম এলাহী
.
[ মাসিক আলকাউসার » জুমাদাল উখরা ১৪৩৮ . মার্চ ২০১৭ ]

কেমন ছিল আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ)এর ঈদ আনন্দ?

ইস…কেমন ছিল আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ)এর ঈদ আনন্দ,আসুন সবাই দেখে নেই…….

প্রিয়নবী সা. মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় এলেন। দেখলেন এখানকার লোকেরা বছরে দুটি উৎসব পালন করেন। আনন্দ-ফূর্তির মধ্যে পুরো দিন কাটান। দিনভর খেলাধূলায় ব্যস্ত থাকেন। নবীজী জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কিসের উৎসব পালন কর? লোকেরা বলল, আমরাতো জাহেলি যুগ থেকেই এই উৎসব পালন করে আসছি। তবে কেন করছি তাতো বলতে পারবো না। নবীজী বললেন, আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ দুটি দিন নির্ধারণ করে দিয়েছেন। ঈদুল ফিতর আর ঈদুল আজহা। দিন দুটি তোমরা এ রকম

আনন্দ-উল্লাসে কাটাবে। তবে তোমাদের আনন্দ-ফূর্তি তো আর তাদের মতো হবে না। এই দুটি দিন ইবাদতেরও। আনন্দের মধ্যেও ইবাদত হতে পারে। তোমরা দুই ঈদে নামাজ পড়বে; আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবে আর সবাইকে নিয়ে আনন্দ-উল্লাসে দিন কাটাবে। সাহাবারা এই খবরে আনন্দিত হলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে এই খবর ছড়িয়ে পড়লো মদিনার ঘরে। সবার চোখে-মুখে খুশির বন্যা। দ্বিতীয় হিজরি থেকে শুরু হলো ঈদের প্রচলন। মুসলমানরা বছরে দুটি দিন আনন্দের পাশাপাশি ইবাদতের মধ্যে কাটাতে থাকলেন।

সেই ঈদ আমাদের পর্যন্ত এসে হাজির। আমরাও প্রতি বছর দুটি ঈদ পালন করি। সারা বছর প্রতীক্ষায় থাকি কবে আসবে ঈদ; মনখুলে আনন্দ করবো; সবার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হবে। ঈদের আনন্দতো আনন্দই; কোনো কিছুর সঙ্গেই তুলনা চলে না এই আনন্দের। ঈদ মানেই নতুন জামা। ঈদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ফিরনি-সেমাই; মিষ্টি-পোলাও আরো কত কি! ঈদ এলেই আমরা বেড়াতে বের হই। সারা বছর দেখা-সাক্ষাৎ না হলেও ঈদে অনেকের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। আব্বু-আম্মু, ভাই-বোন, পাড়-প্রতিবেশী সবাইকে নিয়েইতো ঈদ। আর ঈদ মানেই তো আনন্দ। সে আনন্দ মানে না কোনো বাধা। সারা বছর কষ্টে দিন কাটলেও ঈদের একদিন তো আমরা সবাই আনন্দ করি। মনে শত কষ্ট থাকলেও ঈদের দিন কেউ মুখ গোমড়া করে বসে থাকে না।

কেমন ছিল মদিনার সেই ঈদ
আমরা যে ঈদ পালন করি এর সূচনা মদিনা থেকে। এখন থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে। প্রিয়নবীজী সা. ঈদ পালন করতেন সাহাবায়ে কেরামদের নিয়ে। আজ ঈদ নিয়ে যত মাতামাতি হয় ততটা ছিল না সে সময়। আজ ঈদকে কেন্দ্র করে যে বিশাল খরচপাতি হয় এর ছিটেফোঁটাও ছিল না তখন। ঈদে আমরা এখন যত আনুষ্ঠানিকতা পালন করি সে সময় তা ছিল না। তবে সেই ঈদে ছিল প্রাণ। সেই ঈদ ছিল নির্মল ও স্বচ্ছ। লোক-দেখানো কোনো ভাব ছিল না সেই ঈদে। সবার অন্তর ছিল স্বচ্ছ; মনে ছিল নিখাদ আনন্দ। নতুন জামা, খাওয়া-দাওয়ার বিশাল আয়োজন না থাকলেও সেই ঈদে আনন্দের কোনো কমতি ছিল না। প্রিয়নবীজীকে কাছে পাওয়াই ছিল সাহাবায়ে কেরামের আসল ঈদ। নবীজীর ইমামতিতে দুই রাকাত নামাজ কত প্রশান্তির তা কি ভাবা যায়!

তাই বলে সেই ঈদ নীরস ছিল এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। নবীজীর রসবোধ; তাঁর কৌতুক তো কোনো অংশেই কম ছিল না। মা আয়েশা রা. বলেন, ঈদের দিন নবীজী ঘরে এলেন। তখন আমার কাছে দুটি মেয়ে গান গাইছিল। তাদের দেখে নবীজী অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে পড়লেন। আমার বাবা আবু বকর সিদ্দিক রা. এ অবস্থা দেখে আমাকে ধমকাতে লাগলেন। বললেন, নবীজীর কাছে শয়তানের বাঁশি! এ কথা শুনে রাসূল সা. বললেন, মেয়ে দুটিকে গাইতে দাও।

আরেক ঈদের বর্ণনা দিয়ে মা আয়েশা সিদ্দিকা রা. বলেন, ঈদের দিন আবিসিনিয়ার কিছু লোক লাঠি-শোঠা নিয়ে খেলা করছিল। নবীজী আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আয়েশা তুমি কি দেখতে চাও? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি আমাকে তাঁর পেছনে দাঁড় করিয়ে দিলেন, আমার গাল তাঁর গালের উপর রাখলাম। তিনি তাদের উৎসাহ দিয়ে বললেন: হে বনি আরফেদা, তোমরা শক্ত করে ধর। এরপর আমি যখন ক্লান্ত হয়ে গেলাম তখন তিনি বললেন, তোমার দেখা হয়েছে তো? আমি বললাম হ্যাঁ। তিনি বললেন: তাহলে এবার যাও।

মদিনা ছিল তখন অনেক কম লোকের বসবাস। অন্য ধর্মের লোকেরাও বাস করতো সেই শহরে। নবীজীর মসজিদে তাঁকে কেন্দ্র করেই জমে উঠত ঈদ। মদিনার অলিতে গলিতে বিরাজ করতো ঈদের আনন্দ। অনেক দূন থেকেও সাহাবারা ছুটে আসতেন নবীজীর পেছনে নামাজ আদায় করতে। নবীজী ছোট-বড় সবার আনন্দের প্রতি নজর রাখতেন। ঈদে বালিকা আয়েশা রা.-এর আবদার তিনি পূরণ করেছেন। শিশু হাসান-হোসাইনের ঈদ আনন্দের ভাগিদার হতেন রাসূল সা.। মদিনার ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের সঙ্গেও আনন্দ করতেন নবীজী। শরিয়তের সীমা অতিক্রম না করলে তিনি কোনো আনন্দ-ফূর্তিতে বাধা দিতেন না। ঈদের দিন কিছু ভালো খাবারের ব্যবস্থা রাসূলের ঘরেও হতো। সাহাবায়ে কেরামও নিজের সাধ্যমতো ভালো খাবারের ব্যবস্থা করতেন। মদিনার অলিতে-গলিতে শিশুরা মেতে উঠতো ঈদ আনন্দে। কত পবিত্র সেই আনন্দ; কী স্বচ্ছ সেই ফূর্তি।

ঈদের দিনে নবীজীর আমল
নবীজী সা. দিনে বের হয়ে দু’রাকাত ঈদের সালাত আদায় করেছেন। ঈদের দিন নবীজী গোসল করতেন। আতর-খুশবু মাখতেন। ভালো কাপড় পরতেন। রাসূল সা. ও সাহাবায়ে কেরাম ঈদের জামাতে যেতেন পায়ে হেঁটে। যেতেন এক পথে, ফিরতেন অন্য পথে। মুখে থাকতো তাকবির ধ্বনি। পথে পথে সালাম ও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন। ঈদুল ফিতরে নামাজের আগে মিষ্টি জাতীয় কিছু খেয়ে বের হতেন। আর ঈদুল আজহায় নামাজের জন্য বের হওয়ার আগে কিছুই খেতেন না। নবীজীর এই আমলই সবার জন্য সুন্নত। ঈদে পরস্পরকে শুভেচ্ছা জানানোও রাসূলের সুন্নত। সাহাবায়ে কেরাম ঈদের দিন পরস্পরকে বলতেন, ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা’ অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা আমাদের ও আপনার ভালো কাজগুলো কবুল করুন। নবীজী দুই ঈদেই ঈদগাহে যাওয়ার আগে সর্বোত্তম পোশাক পরতেন। ঈদের খুতবা পড়া এবং শোনা উভয়টিই সওয়াবের। নবীজী সাহাবায়ে কেরামকে খুতবা শোনার তাগিদ দিতেন। ঈদের নামাজ শেষে রাসূল সা. দোয়া করতেন কেঁদে কেঁদে। সঙ্গে চোখের পানি ফেলতেন সাহাবায়ে কেরাম।

নবীজী যখন এতিমের বাবা
Eid-kids-69এক ঈদে নবীজী বের হলেন নামাজ পড়ানোর জন্য। রাস্তার পাশে শিশুরা খেলছিল। কিন্তু মাঠের এক কোণে বসে কাঁদছিল একটি শিশু। পরনে তার ছেঁড়া-ময়লা কাপড়। নবীজী চোখে পড়ল শিশুটি। তিনি শিশুটির কাছে গেলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কাঁদছো কেন? ছেলেটি জানালো, তার মা বেঁচে নেই, বাবাও যুদ্ধে মারা গেছেন। নিকটজন বলতে কেউ নেই। ঈদের আনন্দ করার মতো তার কেউ নেই। নবীজীর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ছেলেটি কান্নায় ভেঙে পড়লো। নবীজীর চোখও ছলছল করতে লাগলো। ছেলেটির মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললেন, তোমার মা-বাবা নেই তাতে কী! আজ থেকে আমি তোমার বাবা, আর আয়েশা তোমার মা। ফাতেমা তোমার বোন। হাসান-হোসাইন তোমার খেলার সাথী। এতে কি তুমি সন্তুষ্ট! ছেলেটি বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এতকিছু পেয়েও কি সন্তুষ্ট না হয়ে পারি!

এরপর নবীজী ছেলেটিকে বাসায় নিয়ে গেলেন। গোসল করিয়ে সুন্দর জামা পরতে দিলেন। পেট ভরে খাওয়ালেন। এবার ছেলেটির মুখে ফুটে উঠল তৃপ্তির হাসি। সে ফিরে এলো মাঠে। অন্য ছেলেমেয়েদের সঙ্গে মিশে গেল আনন্দে। তার খেলার সাথীরা কিছুটা হতবাক হলো। সবাই জানলো, আজ থেকে নবীজী এই ছেলেটির বাবা। তিনিই তার অভিভাবক। এত বড় ছায়া যার মাথায় তার কি কোনো দুঃখ-কষ্ট থাকতে পারে!

ঈদের দিনের কিছু দায়িত্ব
ঈদের আনন্দে নিজের আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ নেয়া, তাদের বাড়িতে যাওয়া নবীজীর সুন্নত। রাসূল সা. বলেন, ‘পরকালে যার বিশ্বাস আছে সে যেন আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখে।’ আর সুখ-দুঃখ দুটি মুহূর্তেই আত্মীয়-স্বজনের পাশে থাকা ইসলামের শিক্ষা। এজন্য ঈদের দিনে পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যেতে হয়। তাদেরকেও নিজের বাড়িতে আদর-আপ্যায়ন করতে হয়। এছাড়া কারো সঙ্গে মনোমালিন্য থাকলে ঈদের দিন তা ধরে রাখা যাবে না। খোলামেলা মন নিয়ে সবার সঙ্গে মিশতে হবে। কোনো মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে মনোমালিন্য যেন তিন দিনের বেশি না থাকে সে নির্দেশ রাসূল সা. দিয়েছেন। দুজনের মধ্যে মনোমালিন্য দূর করার চেষ্টাও ধর্মীয় দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত।

ঈদ মানেই আনন্দ। তবে আনন্দের মাত্রা যেন শরিয়তের সীমা অতিক্রম না করে সে দিকেও খেয়াল রাখতে বলেছেন রাসূল সা.। আমরা অনেকেই মনে করি, এই দিনে যা খুশি তাই করবো। না, ইসলাম সেই অনুমতি দেয়নি। অন্য সময় যা অবৈধ ঈদের দিনও তা অবৈধই। ঈদের আনন্দটা সবাইকে নিয়ে করতে হবে। যারা অভাব-অনটনের কারণে ঈদ-আনন্দে অংশ নিতে পারছে না তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। প্রয়োজনে নিজে কম খেয়ে, কম টাকার জামা পরে পাড়া-প্রতিবেশীর অভাব মোচন করতে হবে। এটাই নবীজীর আদর্শ, এটাই তাঁর সুন্নত।

ঈদ আমাদের ধর্মীয় উৎসব; আনন্দের মুহূর্ত। ঈদের সূচনা আমাদের প্রিয়নবী সা. এর মাধ্যমে। তিনি যেভাবে ঈদ পালন করেছেন, ঈদের দিনে তিনি যেসব কাজ করেছেন সেভাবেই আমাদেরও ঈদ পালন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের এই উৎসব শুধুই আনন্দের জন্য নয়; ঈদ একটি ইবাদত। আর কোনো ইবাদত নিজের মনগড়াভাবে করা যায় না। তাই আমাদের ঈদ হোক নবীজীর মতো। মদিনার সেই ঈদ আবার ফিরে আসুক বাংলার ঘরে ঘরে।

শিক্ষণীয় গল্প: বোরকা পরা মেয়েকে ইভটিজিং

.
রাস্তাদিয়ে বোরকা পরা এক মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে।

চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দেয়া ছেলেদের মধ্যে একজন বাজি ধরে বললো, আমি যদি মেয়েটির ফোন নাম্বার এনে দিতে পারি তাহলে আমাকে কী দিবে…???

অন্যরা সমস্বরে বল্ল একটা গ্রিল খাওয়াব!
– আচ্ছা ঠিক আছে! .

মেয়ের পিছুনিলো ছেলেটি। ফাকা রাস্তায় সুযোগ বুঝে মেয়েটাকে সরাসরি বললো, “আমি কী আপনার ফোন নাম্বার পেতে পারি?”

হঠাৎ এমন অপরিচিত লোকের কথায় মেয়েটি কিছুটা ভয় পেয়ে গেল! অত:পর কিছুক্ষণ চুপ থেকে উওর দিলোঃ- ১৮-১২, ২৪-৩০

ছেলেটি বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করলো, “এটা কোন অপারেটর?”
মেয়েটি বললঃ- “এই অপারেটরের নাম ‘ইসলাম’”
কোরআনের ১৮ (আঠারোতম) পারার, ১২ (বারো) নং পৃষ্ঠা ও ২৪ (চব্বিশ) নাম্বার সূরার ৩০ (ত্রিশ) নাম্বার আয়াত। বাড়ি গিয়ে ডায়াল করবেন!
ছেলেটি ব্যর্থতার চিহ্ন মুখে নিয়ে বন্ধুদের কাছে ফিরলে সবাই তাকে নিয়ে রসিকতা শুরু করলো।
ছেলেটি বন্ধুদের সাথে রাগ করে বাড়ি চলে গেলো। এবং কোরআনের নির্দিষ্ট স্থানটি বের করে দেখলো তাতে লেখা
রয়েছেঃ– “হে নবী, মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।”
[সূরা আন-নূর ( মদীনায় অবতীর্ণ ), আয়াত নং-৩০]

অতপর ছেলেটি কুদৃষ্টির বদলে মেয়েটিকে সম্মান করতে শুরু করলো।
বোঝার ব্যাপারহলো, সকল সমস্যার সমাধান মহান গ্রন্থ ‘‘আল কুরআন’’
যদি কেউ তার যথাযথ ব্যাবহার করতে জানে!

আল্লাহ আমাদের সবাইকে বুঝার তাওফিক দিন! (আমিন)

শিয়া; তাদের উৎপত্তি, দল-উপদল, আকীদা-বিশ্বাস, রেফারেন্স-গ্রন্থ ও লিংকসমূহ

#শিয়া; তাদের উৎপত্তি, দল-উপদল, আকীদা-বিশ্বাস, রেফারেন্স-গ্রন্থ ও লিংকসমূহ, স্বভাব প্রকৃতি, হাকীকত উন্মোচন, কিছু টীকা ও সতর্কবাণী, কয়েকটি সংশয় নিরসন এবং শেষে তাদের প্রতি বিনীত আহ্বান… সহ অনেক কিছু :

(#এক.)
আরবি শিয়া শব্দের অর্থই হলো গোষ্ঠী।
শিয়ারাই হলো আদর্শিক ও রাজনৈতিক কারণে মুসলিমদের মূল জামা’আত থেকে স্বেচ্ছায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া প্রথম গোষ্ঠী, যারা পরবর্তীতে নিজেদের মনগড়া ভ্রান্ত আকিদা গড়ে নিয়েছে। শিয়া মতবাদ উদ্ভাবনকারী মুনাফিক আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা একজন ইহুদীর সন্তান। মুসলিমদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করতেই সে ইসলাম গ্রহহণের অভিনয় করেছিল।

শিয়াদের মধ্যেও ভাগ আছে। ইমামিয়্যাহ, ইসনে আশারিয়্যাহ, ইসমাইলি, নুসাইরিয়্যাহ প্রভৃতি। এদেরকেই ‘রাফেজি’ও বলা হয়।
শুধুমাত্র যায়িদিয়া সম্প্রদায় ছাড়া বাকি শাখাগুলোর আকিদা কুফরে পরিপূর্ণ।

(#দুই.)
প্রায় পুরো দুনিয়ার উলামায়ে ইসলামের ঐক্যবদ্ধ ফায়সালা ও ফতোয়া হল- শিয়াদের ৯০ পার্সেন্টই কাফের, বিশেষ করে বর্তমান ইরানের যারা আছে, এবং যারা ইসনা আশারিয়্যা, নুসাইরিয়া… মতবাদের অনুসারী।

তাই তাদের বাহ্যিক উন্নতিতে মুসলমানদের খুশি হওয়ার কোন কারণ নেই। তারা সুযোগ পেলে ইহুদী – খৃষ্টানদের আগে সুন্নীদেরকে খতম করবে! সর্ব যুগের ইতিহাস এমনই।
আর তলে তলে ইহুদীদের সাথে ও আমেরিকার সাথে যে শিয়াদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সবসময়ই থাকে, সেটা তো এখন আশা করি তাদের কাছে মোটেও অস্পষ্ট নয়, বিশেষ করে যারা বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে গভীর চিন্তা ভাবনার সাথে একটু বিস্তারিত খোঁজ খবর রাখার চেষ্টা করেন।
কেবলই ইহুদী নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ার উপর ভরসা করেন না।
——————————
(তিন.)
#তাদের_ভয়াবহ_কিছু_আকীদা :

1. কুরআন বিকৃত এবং এর ১ চতুর্থাংশ ফেলে দেয়া হয়েছে!

2. ৩/৪ জন সাহাবা ছাড়া তিন খুলাফায়ে রাশেদ সহ সকল সাহাবী (নাঊযুবিল্লাহ) কাফের, মুরতাদ, গাদ্দার!
তাদের নাপাক যবান থেকে ৪/৫ জন সাহাবী বাদে প্রথম ৩ খোলাফায়ে রাশেদীন থেকে শুরু করে কেউই রক্ষা পায় নি!

3. মুতআ’ (নির্দিষ্ট সময়ের জন্য চুক্তি ভিত্তিক বিয়ে। তারা এক রাতের জন্য পতিতাদের বিয়ে করাও হালাল মনে করে!)

4. তাকিয়্যা (একজন মনেপ্রাণে যা বিশ্বাস
করে, তার ঠিক বিপরীত বলা বা করার ভান
করা) বৈধ। (তারা মুখে মুসলিম ভ্রাতৃত্তের কথা বলে, কিন্তু সুযোগ পেলেই মুসলিমদের হত্যা করে
(মিথ্যা বলা খুবই ভাল এবং সাওয়াবের
কাজ। নিজের বিশ্বাসকে গোপন রাখা অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ!! প্রতারণা এবং প্রবঞ্চনা একটি মহৎ কাজ।)

মুতআ’ ও তাকিয়্যা মত নিকৃষ্ট আকীদা সম্ভবত দুনিয়ার আর কোন জাতি গোষ্ঠীর মাঝে নেই। এর মাধ্যমে তারা মিথ্যা এবং বেশ্যাবৃত্তি ও অবাধ যৌনাচারের বৈধতার সার্টিফিকেটই কেবল দেয় না, মহা সওয়াবের গ্যারান্টি দিয়ে উৎসাহও দিয়ে থাকে।

5. রাজআত ()

6. ইমামত (তাদের দৃষ্টিতে তাদের ইমামগণ নবীদের সমতুল্য, বরং তার চেয়ে বেশি )

7. বাদা’ (আল্লাহ তায়ালারও মাঝে মাঝে ভুল হয়ে থাকে, নাঊযু বিল্লাহ )

8. শিয়াদের কালিমা মুসলিমদের শাহাদাহ
থেকে ভিন্ন। তাদের কালিমা হলো – লা
ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহি
‘আলিউন ওয়ালিউল্লাহি ওয়াসিয়্যু
রাসুলুল্লাহি ওয়া খালিফাতুহু বিলা
ফাসলিন।
শিয়ারা তাদের আযানে “আশহাদু আন্না
‘আলিউন ওয়ালিউল্লাহ” ও “হুজ্জাতুল্লাহ”
এবং “হাইয়্যা আলা খাইরিল আমাল” যুক্ত
করেছে।

সহ আরো বিকৃত ও জঘন্য সব কুফরী আকীদা।
“““““““““““`
(#চার.)
তাদের কারো সাথে কথা বলে তো লাভ নাই, কারণ সেই তাকিয়্যা!
যারা বলে, এগুলো শিয়াদের বিশ্বাস নয়, হয় তারা তাকিয়্যা করে, না হয় তারা তাদের ধর্ম সম্পর্কে জানেই না। যেমন অনেক নামকেওয়াস্তে মুসলমানের ইসলাম সম্পর্কে সামান্যই জানা থাকে।

তাই তাদের কথা নয়, তাদের বড়দের কিতাবসমূহের রেফারেন্স ধর্তব্য হবে:

#তাই এগুলোর বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও তাদের বড়দের কিতাবসমূহ থেকেই রেফারেন্স জানতে দেখুন-

#শিয়া_মতবাদ_বিষয়ে_কয়েকটি_গ্রন্থ :

১.ইরানী ইনকিলাব ইমাম খোমেনী ও শিয়া মতবাদ, আল্লামা মনযুর নোমানী, মদীনা পাবলিকেশন্স, বাংলাবাজার, ঢাকা।

২. علماء دين كا فيصله-حبيب الرحمن قاسمي

৩. اختلاف امت اور صراط مستقيم- حضرت یوسف لدھیانوی شہید رح
https://goo.gl/sPrsgi

৪. شیعہ سنی اختلاف اور صراط مستقيم – حضرت یوسف لدھیانوی شہید رح
https://goo.gl/sY4iB4

৫. ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ, মাওলানা হেমায়েতুদ্দীন, মাকতাবাতুল আবরার, ইসলামী টাওয়ার, বাংলাবাজার ঢাকা।

৬. تحفہ اثنا عشريہ – شاہ عبد العزیز رح
https://goo.gl/AlSBqu

৭. مجمل عقائد الشيعة

Click to access elebda3.net-wq-5075.pdf

৮. ইতিহাসের কাঠগড়ায় হযরত মুআবিয়া রাযি. – মাওলানা তাকী উসমানী, ইসলামী টাওয়ার, বাংলাবাজার, ঢাকা।
https://goo.gl/Y8Q6fu

” ” ” ” ” ” ” ” ” ” ” ” ” ” ” ” ” ” ” ” ” ”
(#পাঁচ.)
নিম্নে উল্লিখিত লিংকসমূহেও শিয়াদের মুখোশ উন্মোচন সহ কিছু কিছু বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাবেন-
#বেশকিছু_গুরুত্বপূর্ণ_লিংক:

1.
শিয়ারা কি মুসলিম??!
উ: না.! সপক্ষে প্রমাণ ও যুক্তি ->
ধারাবাহিক পর্ব – ১
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=359739011090061&id=300199090377387

1.
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1794229740866205&id=1629238320698682

2.
#শীআকথনatikullahatik

3.
https://m.facebook.com/groups/1566266773700865?view=permalink&id=1722383078089233

4.
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=867589866703419&id=196608060468273

5.
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1837093659843502&id=100006286573206

https://en.wikipedia.org/wiki/Iran%E2%80%93Israel_relations

6.
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1642192836070787&substory_index=0&id=1631946583762079

7. তাদের জনক:
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1365933586768430&id=100000554058678

8.
http://islamhouse.com/bn/books/735785/
http://islamhouse.com/bn/books/434032/
http://islamhouse.com/bn/books/430747/
http://islamhouse.com/bn/books/409011/
http://islamhouse.com/bn/books/395670/
http://islamhouse.com/bn/books/393768/
http://islamhouse.com/bn/books/392816/
http://islamhouse.com/bn/books/386814/
http://islamhouse.com/bn/books/373484/
http://islamhouse.com/bn/books/364836/
http://islamhouse.com/bn/books/370147/
http://islamhouse.com/bn/books/353681/
http://islamhouse.com/bn/books/340530/
http://islamhouse.com/bn/books/324697/
http://islamhouse.com/bn/books/735787/
http://www.mediafire.com/?izd11egtci3ei3j

9. শিয়াদের কুখ্যাত ইতিহাস
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=258037807952869&id=100012399545987

10. শিয়া সম্প্রদায় ও তাদের কুফরি আকিদা:১
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=231244057298911&id=100012399545987
সিয়াদের কুফুরি আক্বিদা-২
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=231247010631949&id=100012399545987
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷

#সতর্কবাণী ⚠

শিয়াদের বিষয় বড় স্পর্শকাতর !
বহু বিষয়ে প্রচুর বানোয়াট বর্ণনা ছড়ানো হয়েছে। তাই সতর্ক থাকা উচিত। বহু বানোয়াট ও আজগুবি কেচ্ছা কাহিনী শিয়ারা বাজারে ছেড়েছে, শিয়া ধর্মটাকে সাজানোর জন্য। কারণ এছাড়া যে তাদের ‘কাম’ চলবেনা!
তাই ওগুলো পড়ে ধোকা খাওয়ার কোন কারণ দেখছি না।
এখানে সংক্ষেপে বোঝানো সম্ভব নয়, তাই ঠাণ্ডা মাথায় বইগুলো পড়ুন, জবাব পেয়ে যাবেন-
এসবের হাকীকত জানা, ও নিজের ঈমান রক্ষার তাগিদেই বইগুলো পড়তে জোর আহ্বান জানাচ্ছি।
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°

(সাত.)
#কিছু_টিকা:
১. ৯০ পার্সেন্ট শিয়ারা তো মুসলমানই নয়। তাই এর কারণে মুসলিমদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলা ঠিক নয়।
নিজেদের সাধারণ মুসলমানদেরকে বাতিল আকীদা-বিশ্বাস থেকে রক্ষা করার জন্য এবং সতর্ক করার জন্য কোন বিষয় খোলাসা করলে এটাকে বিভেদ সৃষ্টি বলে না।

২.ইসলাম আর কুফরের মাঝে কি সন্ধি হতে পারে? দুটো তো দুই মেরুর জিনিস! যতক্ষণ না শিয়াগণ সকল কুফরী আকীদা থেকে তাওবা করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের কোলে ফিরে আসে।

(#আট.)
১৪০০ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে, যুগে যুগে ইহুদী খৃষ্টান মুশরিক শিয়া সহ সমস্ত কুফরী শক্তি ইসলামের বিরুদ্ধে বহু অপচেষ্টা চালিয়েছে। তারীখে ইসলামের সবচে’ মযলূম শহীদ খলীফায়ে রাশেদ হযরত উসমান রাযি. এবং হযরত হুসাইন রাযি. এর সেই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে মু’তাযিলা ও গ্রিক দর্শনের ফিতনা, ক্রুসেড ও ভয়াবহ তাতারী আক্রমণ গণহত্যা সহ এমন বহু ভয়ংকর সব ট্রাজেডি ইসলামের ইতিহাসে সংঘটিত হয়েছে, সাময়িক ভাবে তখন মনে হয়েছিল- দুনিয়ার বুক থেকে ইসলাম এবার নিশ্চহ্ন হয়েই যাবে! কারণ এমন পরিস্থিতিতে সাধারণভাবে টিকে থাকার কথা নয়।
এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ খৃস্টধর্ম, হযরত ঈসা আ. এর প্রকৃত শিক্ষাকে ইহুদী পৌল বিকৃত করতে সমর্থ হয়।
অবশ্য ইহুদী আব্দুল্লাহ বিন সাবা শিয়া গ্রুপ সৃষ্টিই করেছিল ইসলামকে বিকৃত করার জন্য, সে সুর তো শিয়াদের কণ্ঠে বাজতেই থাকবে। যেমন ইহুদী পৌল খৃষ্টধর্মের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে।
.

কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ, ইসলামের এক চুল পরিমাণও ক্ষতি কিংবা এক হরফ বিকৃতি সাধনে কেউই সমর্থ হয়নি।
হবে কিভাবে? এ যে মহান আল্লাহর দৃপ্ত ঘোষণা –
انا نحن نزلنا الذكرى و انا له لحافظون!
‘আমি নিজেই এ কুরআন নাযিল করেছি, আমি নিজেই এর সংরক্ষক !’, সূরা হিজর, আয়াত নম্বর ৯
এটা ইসলামের মু’জিযা এবং সত্যতার প্রমাণও বটে!
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
(#নয়.)
মুতা, তাকিয়্যা, গালিগালাজ এগুলো তো শিয়াদের আইকন। এটা থেকে লোভ সামলানো তাদের জন্য তো বড়ই কঠিন, করবেই!
তাদের নাপাক যবান থেকে ৪/৫ জন সাহাবী বাদে প্রথম ৩ খোলাফায়ে রাশেদীন থেকে শুরু করে কেউই রক্ষা পায় নি।

কুকুর কামড় দিলে আমরা মানুষ তো জবাবে কুকুরকে কামড় দিতে পারি না।
আমরা তাদের জবাবে শুধু হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কয়েকটি হাদীস পেশ করতে পারি, এবং দোয়া করতে পারি-
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ((لاَ تَسُبُّوا أَصْحَابِي فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا أَدْرَكَ مُدَّ أَحَدِهِمْ وَلاَ نَصِيفَهُ)). قَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ. وَمَعْنَى قَوْلِهِ: ((نَصِيفَهُ)) يَعْنِي نِصْفَ الْمُدِّ.

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُغَفَّلٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ((اللَّهَ اللَّهَ فِي أَصْحَابِي اللَّهَ اللَّهَ فِي أَصْحَابِي لاَ تَتَّخِذُوهُمْ غَرَضًا بَعْدِي فَمَنْ أَحَبَّهُمْ فَبِحُبِّي أَحَبَّهُمْ وَمَنْ أَبْغَضَهُمْ فَبِبُغْضِي أَبْغَضَهُمْ وَمَنْ آذَاهُمْ فَقَدْ آذَانِي وَمَنْ آذَانِي فَقَدْ آذَى اللَّهَ وَمَنْ آذَى اللَّهَ فَيُوشِكُ أَنْ يَأْخُذَهُ)).
যার সারমর্ম হলো – রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন:
‘আমার সাহাবাকে গালি দিওনা, সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণও স্বর্ণ দান করে ফেলে, তবু তাদের একজনের এক মুদ পরিমাণ কিংবা এর অর্ধেকেরও কাছে যেতে পারবে না।
আমার সাহাবীদের ব্যাপারে সাবধান! আমার সাহাবীদের ব্যাপারে সাবধান! যে তাদেরকে ভালবাসবে সে তো আমার ভালবাসার তাগিদেই তাদেরকে ভালবাসবে, আর যে তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে সে যেন আমার প্রতি বিদ্বেষ এর কারণেই করল। যে তাদেরকে কষ্ট দিবে সে আমাকেই কষ্ট দিল, আর যে আমাকে কষ্ট দিল সে আল্লাহকে কষ্ট দিল, আর যে আল্লাহকে কষ্ট দিল, আশংকা হয় আল্লাহ তাকে পাকড়াও করবেন! ‘

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে হিফাযত করুন, হিদায়াত দান করুন, আমীন!
_____________________
#শেষ_কথা:
আমি স্পষ্টভাবেই বলছি, শুনুন-
আমরাও এ দন্দ্বের অবসান চাই, এক হতে চাই। তবে একটাই শর্ত-
শিয়াদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এবং প্রধান নেতা জনাব ইমাম খোমেনী সাহেবকে বলুন, সকল কুফরী আকীদা থেকে নিজেদের বারাআত যাহির করে (সম্পর্কচ্ছেদ ও দায়মুক্তি) জনসম্মুখে এবং মিডিয়ার সামনে ঘোষণা দিতে।
তখনই দেখবেন পুরো বিশ্বের সকল উলামায়ে কেরাম তাদেরকে বুকে টেনে নিতে একটুও দ্বিধা করবে না। আমরা এ জন্য সর্বদা প্রস্তুত। আমাদের সাথে তো শিয়াদের জমিজমা নিয়ে বিরোধ নেই!

#.
আর আমরা সবাই সবসময় আল্লাহর কাছে এ দোয়া করতে থাকি-
اللهـم أرنا الحق حقا وارزقنا اتباعه و أرنا الباطل باطلا و ارزقنا اجتنابه!
“হে আল্লাহ! আমাদেরকে সত্য দেখান এবং সত্যের অনুসরণের তাওফীক দান করুন, এবং আমাদের সামনে বাতিল স্পষ্ট করে দিন ও এর থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দান করুন!”
আমীন!! ইয়া রব্বাল আলামীন!!!

মহিলাদের ইতিকাফ সংক্রান্ত বিবিধ মাসআলা

রমযানের শেষ দশকে শবেকদরের খোঁজে হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইতিকাফ করতেন। একাধিক হাদিসে বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে। হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ সন্তুষ্টির নিয়তে যে ব্যক্তি মাত্র একদিন ইতিকাফ করবে আল্লাহতায়ালা তার ও জাহান্নামের মাঝে তিনটি পরিখার সমান দূরত্ব সৃষ্টি করে দেবেন। যে পরিখাগুলোর প্রতিটির দূরত্বই আসমান-জমিনের মধবর্তী দূরত্বের সমান। ইতিকাফ শুধু পুরুষের জন্য নয়। নারীরাও কিন্তু ইতিকাফ করতে পারেন। হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সহধর্মিণীরা ইতিকাফ করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজরত নবী করিম (সা.) তার ওফাত পর্যন্ত রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ করতেন। তার ওফাতের পর তার স্ত্রীরা ইতিকাফ করেছেন। -সহিহ বোখারি: ২০২৬ ও সহিহ মুসলিম: ১১৭২

মাসয়ালা: মহিলাদের নামাজের স্থান তাদের ঘরের অন্দরমহল, মসজিদ নয়। কিন্তু মহিলারা সওয়াবের ক্ষেত্রে ঘরে নামাজ পড়ে ও ঘরে ইতিকাফ করে পুরুষদের মসজিদে নামাজ পড়ার সমপরিমাণ সওয়াবের অধিকারী বলে সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এ অর্থে মহিলাদের ঘরকে মসজিদের সাদৃশ্য আখ্যা দেওয়া হয়েছে। যেন মহিলারা বেশি সওয়াব হাসিল করার আশায় মসজিদে আসার জন্য উদগ্রিব না হয়। মসজিদে গিয়ে শেষ ১০ দিন ইতিকফ সুন্নতে মোয়াক্কাদার হুকুম পুরুষদের জন্য, মহিলাদের জন্য নয়। সুতরাং মহিলারা চাই ঘরে ইতিকাফ করুক চাই মসজিদে পুরুষদের দায়িত্ব আদায় হবে না। তবে পুরুষদের মধ্যে একজনও যদি মসজিদে ইতিকাফ করে তাহলে গ্রামবাসীর পক্ষ হতে তা আদায় হয়ে সবাই দায়মুক্ত হয়ে যাবে। -সহহি বোখারি, হাদিস: ২০৩৩, উমদাতুল কারী: ১১/১৪৮, বাদায়েউস সানায়ে: ২/১১৩, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া: ১৩/১৪৫

মাসয়ালা: মহিলারা ঘরে নামাজ ও অন্যান্য ইবাদতের জন্য নির্ধারিত স্থানে ইতিকাফ করবেন। যদি আগে থেকেই ঘরে নামাজের জন্য কোনো স্থান নির্ধারিত না থাকে তাহলে ইতিকাফের জন্য একটি স্থান নির্ধারিত করে নেবেন। সেখানেই ইতিকাফ করবেন। হেদায়া: ১/২৩০, আলমগীরি: ১/২১১

মাসয়ালা: রমজানের (শেষ দশকের ইতিকাফ পুরুষের জন্য সুন্নতে মুয়াক্কাদা আলাল কিফায়া, তবে নারীদের জন্য তা মুস্তাহাব।

মাসয়ালা: বিবাহিত নারীকে রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ বা অন্য সময়ের নফল ইতিকাফের জন্য স্বামীর অনুমতি নিতে হবে। স্বামীর অনুমতি ছাড়া ইতিকাফ করা অনুচিত। স্বামীদের উচিত, যুক্তিসঙ্গত, গ্রহণযোগ্য কারণ ছাড়া স্ত্রীদের ইতিকাফে বাধা না দেওয়া। তাদের ইতিকাফের সুযোগ দেওয়া। এতে কিন্তু উভয়ই সওয়াব পাবেন। শামী: ৩/৪২৯, আলমগীরি: ১/২১১

মাসয়ালা: স্বামী স্ত্রীকে ইতিকাফের অনুমতি দেওয়ার পর আর বাধা দিতে পারবেন না। বাধা দিলেও সে বাধা মানা স্ত্রীর জন্য জরুরি নয়। -শামী: ৩/৪২৮, আলমগীরি: ১/২১১

মাসয়ালা: ইতিকাফ অবস্থায় (রাতেও) স্বামী-স্ত্রী মেলামেশা করা যাবে না। করলে ইতিকাফ ফাসিদ হয়ে যাবে। -সূরা বাকারা: ১৮৭, বাদায়ে: ২/২৮৫, শামী: ৩/৪৪২

মাসয়ালা: মহিলাদের ইতিকাফের জন্য হায়েজ-নেফাস থেকে পবিত্র হওয়া শর্ত। হায়েজ, নেফাস অবস্থায় ইতিকাফ সহিহ হয় না। -বাদায়ে: ২/২৭৪, আলমগীরি: ১/২১১

মাসয়ালা: মহিলাদের ইতিকাফে বসার আগেই হায়েজ-নেফাসের দিন-তারিখ হিসাব করে বসা উচিত। যাতে ইতিকাফ শুরু করার পর পিরিয়ড শুরু হয়ে না যায়। তবে কারও রমজানের শেষ দশকে পিরিয়ড হওয়ার নিয়ম থাকলে তিনি পিরিয়ড শুরু হওয়া পর্যন্ত নফল ইতিকাফ করতেই পারেন।

মাসয়ালা: ওষুধ-বড়ি খেয়ে পিরিয়ড বন্ধ রেখে রোজা রাখলে, ইতিকাফ করলে রোজা ও ইতিকাফ সহিহ হবে।

মাসয়ালা: ইতিকাফ শুরু করার পর পিরিয়ড শুরু হয়ে গেলে ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। পরে শুধু একদিনের ইতিকাফ রোজাসহ কাজা করতে হবে। -আহসানুল ফাতাওয়া: ৪/৫০২

মাসয়ালা: মহিলারা ঘরের যে স্থানটিকে ইতিকাফের জন্য নির্ধারিত করবেন তা মসজিদের মতো গণ্য হবে। মানবিক প্রয়োজন ছাড়া তারা সেখান থেকে বের হতে পারবেন না। মানবিক প্রয়োজন ছাড়া সে স্থানের বাইরে গেলে ইতিকাফ ফাসিদ হয়ে যাবে। -আলমগীরি: ১/২১১, বাদায়ে: ২/২৮২

মাসয়ালা: মানবিক প্রয়োজন বলতে বুঝায়, প্রস্রাব-পায়খানা। সুতরাং ইতিকাফ অবস্থায় মহিলারা প্রস্রাব-পায়খানার জন্য ইতিকাফের স্থান থেকে বের হতে পারবেন। অজুর জন্য বাইরে যেতে পারবেন।

মহিলারা খুব কমই ইতিকাফ করেন। অথচ ইতিকাফ অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। মহিলাদের জন্য ইতেকাফ খুব সহজও। কারণ তারা ঘরেই ইতিকাফ করবেন। ফলে সংসারের খোঁজখবরও নিতে পারবেন। সংসার ঠিক রেখে তাদের ইতিকাফও হয়ে যাবে। সুতরাং এমন সুযোগ হাতছাড়া করা মোটেই উচিত নয়। নারীদের মধ্যে ইতিকাফের ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করা উচিত। পুরুষদের উচিত নারীদের ইতিকাফের জন্য উদ্বুদ্ধ করা এবং সুযোগ তৈরি করে দেয়া। তাহলে পুরুষরাও সওয়াব পাবেন।

কুরআন তিলাওয়াত ও তারাবীর তিলাওয়াত : আমাদের অসতর্কতা

কুরআনুল কারীম আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কালাম। মহান প্রভুর মহান বার্তা। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
لَّا یَمَسُّهٗۤ اِلَّا الْمُطَهَّرُوْنَ تَنْزِیْلٌ مِّنْ رَّبِّ الْعٰلَمِیْنَ
যারা অত্যন্ত পবিত্র তারাই কেবল একে স্পর্শ করে। এটা জগৎসমূহের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। -সূরা ওয়াকেয়া (৫৬) : ৭৯-৮০
আমরা কুরআন তিলাওয়াত করি। তিলাওয়াত কুরআনের বড় একটি হক। আল্লাহ তাআলা আদেশ করেছেন-
اتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ
(হে নবী!) ওহীর মাধ্যমে তোমার প্রতি যে কিতাব নাযিল করা হয়েছে তা তিলাওয়াত কর। -সূরা আনকাবূত (২৯) : ৪৫
তিলাওয়াতের অনেক গুরুত্ব, অনেক ফযীলত। তিলাওয়াতকারীর লাভ ও সওয়াবকে অল্লাহ এমন ব্যবসার সাথে তুলনা করেছেন, যে ব্যবসা কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হয় না-
إِنَّ الَّذِينَ يَتْلُونَ كِتَابَ اللهِ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَأَنْفَقُوا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَعَلَانِيَةً يَرْجُونَ تِجَارَةً لَنْ تَبُورَ .
যারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে, নামায কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে (সৎকাজে) ব্যয় করে গোপনে ও প্রাকশ্যে। তারা এমন ব্যবসায়ের আশাবাদী, যাতে কখনও লোকসান হয় না। -সূরা ফাতির (৩৫) : ২৯
মহান আল্লাহ তাআলার কালাম তিলাওয়াতের বিশেষ নিয়ম ও আদব রয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيلًا
কুরআন তিলাওয়াত কর ধীরস্থির ভাবে, স্পষ্টরূপে। -সূরা মুযযাম্মিল (৭৩) : ৪
হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
زينوا القرآن بأصواتكم
সুন্দর সূরের মাধ্যমে কুরআনকে (এর তিলাওয়াতকে) সৌন্দর্যমণ্ডিত কর। -সুনানে আবু দাউদ,হাদীস ১৪৬৮
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাযি থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লম ইরশাদ করেছেন, (কিয়ামতের দিন) কুরআনের তিলাওয়াতকারী বা হাফেজকে বলা হবে-
اقْرَأْ، وَارْتَقِ، وَرَتِّلْ كَمَا كُنْتَ تُرَتِّلُ فِي الدُّنْيَا، فَإِنَّ مَنْزِلَكَ عِنْدَ آخِرِ آيَةٍ تَقْرَؤُهَا.
তিলাওয়াত করতে থাক এবং উপরে উঠতে থাক। ধীরে ধীরে তিলাওয়াত কর, যেভাবে ধীরে ধীরে দুনিয়াতে তিলাওয়াত করতে। তোমার অবস্থান হবে সর্বশেষ আয়াতের স্থলে যা তুমি তিলাওয়াত করতে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৪৬৪; জামে তিরমিযী, হাদীস ২৯১৪
এই ধীরস্থির বা তারতীলের সাথে তিলাওয়াত কেমন হবে তা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখিয়ে গেছেন, শিখিয়ে গেছেন। হযরত উম্মে সালামাহ রাযি.-কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামায ও তিলাওয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, তাঁর তিলাওয়াত ছিল-
قِرَاءَةً مُفَسَّرَةً حَرْفًا حَرْفًا
প্রতিটি হরফ পৃথক পৃথকভাবে উচ্চারিত। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৯২৩
অর্থাৎ কোনো জড়তা, অস্পষ্টতা ও তাড়াহুড়া ছিল না।
হযরত আনাস রাযি.-কে নবীজীর তিলাওয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, তাঁর তিলাওয়াত ছিল (মদের স্থানে) টেনে পড়া। এর পর তিনি بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ পাঠ করে শোনান এবং اللهِ , الرَّحْمٰنِ ও الرَّحِيمِ এ সব জায়গার মদগুলো টেনে উচ্চারণ করে দেখান। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫০৪৬
সাহাবায়ে কেরামের তিলাওয়াতের বৈশিষ্ট্যও এমনই ছিল। ধীরস্থিরভাবে তিলাওয়াত করতেন তাঁরা। নিজেরা করতেন, অন্যদেরকেও তাগিদ দিতেন।
قَالَ عَلْقَمَةُ : صَلَّيْتُ مَعَ ابْنِ مَسْعُودٍ مِنْ أَوَّلِ النَّهَارِ إِلَى انْصِرَافِهِ مِنَ الْفَجْرِ فَكَانَ يُرَتِّلُ.
হযরত আলকামাহ রাহ. বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর সাথে নামায পড়লাম দিনের শুরু থেকে ফজর পর্যন্ত। তিনি তিলাওয়াত করছিলেন তারতীলের সাথে, ধীরস্থিরভাবে। -মুখতাছারু কিয়ামিল লাইল পৃ. ১৩১
وَقَرَأَ عَلْقَمَةُ عَلَى عَبْدِ اللَّهِ وَكَانَ حَسَنَ الصَّوْتِ. فَقَالَ: رَتِّلْ فِدَاكَ أَبِي وَأُمِّي. فَإِنَّهُ زَيْنُ الْقُرْآنِ
আলকামাহ রাহ. একবার হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি.-কে কুরআন তিলাওয়াত করে শোনাচ্ছিলেন। তিনি সুমধুর কণ্ঠের অধিকারী ছিলেন। (তো তিনি কিছুটা দ্রুত পড়ে যাচ্ছিলেন) তখন ইবনে মাসউদ রাযি. বললেন, আমার বাবা-মা তোমার উপর কুরবান হোক! ধীরস্থিরভাবে তারতীলের সাথে তিলাওয়াত কর। এটা কুরআনের (তিলাওয়াতের) ভূষণ। -মুখতাসারু কিয়ামিল লাইল, পৃ. ১৩১
হযরত ইবনে মাসউদ রা.কে এক ব্যক্তি বলল,
إِنِّي لَأَقْرَأُ الْمُفَصَّلَ فِي رَكْعَةٍ، فَقَالَ عَبْدُ اللهِ: هَذًّا كَهَذِّ الشِّعْرِ، إِنَّ أَقْوَامًا يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ لَا يُجَاوِزُ تَرَاقِيَهُمْ، وَلَكِنْ إِذَا وَقَعَ فِي الْقَلْبِ فَرَسَخَ فِيهِ نَفَعَ
আমি এক রাকাতেই মুফাস্সালের [সূরা ক্বাফ থেকে সূরা নাস পর্যন্ত। (ফাতহুল বারী ২/২৫৮)] সব সূরা পড়ে নিই। হযরত ইবনে মাসউদ রাযি তখন বললেন, সে তো কবিতা আওড়ানোর মত পাঠ করা।
অনেক মানুষ কুরআন তিলাওয়াত করে, কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালির নিচেও যায় না। অথচ কুরআন তিলাওয়াত তখনই (পরিপূর্ণ) উপকারী হয় যখন তা অন্তরে গিয়ে বসে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮২২
وَعَنِ ابْنِ أَبِي مُلَيْكَةَ: سَافَرْتُ مَعَ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ مِنْ مَكَّةَ إِلَى الْمَدِينَةِ وَهُمْ يَسِيرُونَ إِلَيْهَا وَيَنْزِلُونَ بِاللَّيْلِ، فَكَانَ ابْنُ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ يَقُومُ نِصْفَ اللَّيْلِ فَيَقْرَأُ الْقُرْآنَ حَرْفًا حَرْفًا، ثُمَّ حَكَى قِرَاءَتَهُ: ثُمَّ يَبْكِي حَتَّى تَسْمَعَ لَهُ نَشِيجًا.
হযরত ইবনে আবী মুলাইকা রাহ. বলেন, এক সফরে মক্কা থেকে মদীনায় যাওয়ার পথে আমি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-এর সাথে ছিলাম। দিনভর আমরা পথ চলতাম আর রাতে কোথাও তাবু ফেলে বিশ্রাম করতাম। হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. মাঝরাতে নামাযে দাঁড়িয়ে যেতেন এবং খুব ধীরে ধীরে থেমে থেমে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। এক একটি শব্দ স্পষ্ট ও পৃথক পৃথক শোনা যেত। আর নামাযে তিনি ডুকরে ডুকরে কাঁদতেন। এমনকি তাঁর হেঁচকির আওয়ায পর্যন্ত শোনা যেত। -মুখতাসারু কিয়ামিল লাইল পৃ. ১৩১
আরেক বর্ণনায় হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি.তিনি বলেন-
لَا تَهُذُّوا الْقُرْآنَ كَهَذِّ الشِّعْرِ، وَلَا تَنْثُرُوا كَنَثْرِ الدَّقَلِ، وَقِفُوا عِنْدَ عَجَائِبِهِ وَحَرِّكُوا بِهِ الْقُلُوبَ، وَلَا يَكُونُ هَمُّ أَحَدِكُمْ مِنَ السُّورَةِ آخِرَهَا.
তোমরা কবিতা পাঠের মত গড়গড় করে দ্রুত কালামে পাক তিলাওয়াত করো না এবং নষ্ট খেজুর যেমন ছুড়ে ছুড়ে ফেলা হয় তেমন করে পড়ো না বরং এর বিস্ময়কর বাণী ও বক্তব্যগুলোতে এসে থেমে যাও, হৃদয়কে নাড়া দাও। এ ভাবনা যেন না থাকে যে, এ সূরা কখন শেষ হবে! -মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদীস ৮৮২৫
উলামায়ে কেরাম বলেন, কুরআন তারতীলের সাথে পড়া সুন্নত হওয়ার কয়েকটি কারণ :
১. তারতীলের সাথে তিলাওয়াত করা হলে কুরআনে বর্ণিত বিষয়গুলোর প্রতি মনোনিবেশ করা যায়।
২. আল্লাহ তাআলার কালামের প্রতি অধিক সম্মান প্রদর্শিত হয়।
৩. অন্তরে অধিক ক্রিয়া সৃষ্টি করে। -আলইতকান ফী উলূমিল কুরআন ১/১০৬
সুতরাং যারা অর্থ বুঝেন না তাদের জন্যও ধীরে তিলাওয়াত করা মুস্তাহাব। কারণ কুরআনের অর্থ বুঝতে না পারলেও কুরআনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও অন্তরে ক্রিয়া সৃষ্টি হওয়া তো অবশ্যই সম্ভব।
উলামায়ে কেরাম এ বিষয়েও একমত যে, কুরআন তিলাওয়াত খুব দ্রুত করা ক্ষেত্রবিশেষে নাজায়েয।
আল্লামা যারকাশী রাহ. বলেন, তারতীল মানে কুরআনের শব্দগুলো ভরাট উচ্চারণে পাঠ করা এবং হরফগুলো স্পষ্ট করে উচ্চারণ করা। অন্যথায় এক হরফ আরেক হরফের সাথে যুক্ত হয়ে যাবে। কারো কারো মতে এটা তারতীলের সর্বনিম্ন মাত্রা।
নামাযে আমরা কুরআন তিলাওয়াত করে থাকি নামাযের ফরয বিধান হিসাবে। কুরআন তিলাওয়াতের যে আদবসমূহ উপরে আলোচিত হল সেগুলো নামাযে তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে আরও বেশি প্রযোজ্য। নামাযে তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে ধীরস্থিরতা ও ভাবগাম্ভীর্য আরো বেশি মাত্রায় থাকতে হবে। তখন এগুলো শুধু তিলাওয়াতের বিষয় হিসাবেই থাকে না বরং এই ধীরস্থিরতা ও আত্মনিমগ্নতা নামাযেরও বিষয়।
নামাযের খুশু-খুযুর জন্য তিলাওয়াত তারতীলের সাথে হওয়া খুব জরুরি। তাছাড়া এত দ্রুত তিলাওয়াতের কারণে মদ্দ-গুন্নাসহ তাজবীদের অনেক কায়েদা লঙ্ঘিত হয় এবং হুরূফের ছিফাতের প্রতিও যথাযথ লক্ষ্য রাখা যায় না, ফলে দ্রুত পড়তে গিয়ে ص এর জায়গায় س হয়ে যাওয়া, ش এর জায়গায় س হয়ে যাওয়া, ﻁ এর জায়গায় ت হয়ে যাওয়া কিংবা যেখানে টান নেই সেখানে টান হয়ে যাওয়া বা কোথাও টান আছে সেখানে টান না হওয়া (দ্রুত পড়তে গেলে এই টানের ভুল সব চেয়ে বেশি হয়) খুব সহজেই ঘটে যেতে পারে।
মোটকথা নামাযে দ্রুত তিলাওয়াত করতে গিয়ে নামায নষ্ট হয়ে যাওয়ার মত ভুল যদি নাও হয় বরং শুধু যদি এটুকু হয় যে, উচ্চারণে মাকরূহ পর্যায়ের বিঘ্ন ঘটছে তাহলে সেই নামাযও কি ত্রুটিযুক্ত হয়ে পড়ল না? আর যদি ধরে নেওয়া হয় যে, কেউ সকল উচ্চারণ ঠিক রেখে খুব দ্রুত পড়ে যেতে পারেন তার জন্যও তো নামাযে অন্তত এমনটি না করা উচিত। কারণ তাতে কুরআন তিলাওয়াতের ন্যূনতম আদবটুকুও যেমন রক্ষিত হয় না তেমনি নামাযে খুশু-খুযু রক্ষা করাও সহজ হয় না।
ফরয নামায ও অন্যান্য নামাযে আমরা কিছুটা ধীরস্থির তিলাওয়াত করে থাকি। কিন্তু রমযানে তারাবীতে এত দ্রুত পড়ে থাকি, এতই দ্রুত যে তারতীলের ন্যূনতম মাত্রাও সেখানে উপস্থিত থাকে না। মদ্দ (টান), গুন্নাহ ও শব্দের উচ্চারণ বিঘ্নিত হয়ে তিলাওয়াত মাকরূহ পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে; বরং অর্থের পরিবর্তন হয়ে নামায নষ্ট হয়ে যায়, আমাদের অজান্তেই। আর খুশু-খুযু, ধ্যানমগ্নতা তো নষ্ট হচ্ছেই। আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে আল্লাহর সুমহান কালাম পড়ছি বা শুনছি এমন ভাব-তন্ময়তা তো দূরের কথা কখন বিশ রাকাত তারাবী শেষ হবে এই চিন্তাই যেন সকলকে তাড়িত করতে থাকে।
নামায বা তিলাওয়াতের যে আদবটুকু ফরয নামাযে রক্ষা হয় তারাবীতে সেটুকু পাওয়াও দুষ্কর। দ্রুত তিলাওয়াত, দ্রুত রুকু, সেজদা, দ্রুত তাসবীহ। অনেকের মাঝে ধারণা জন্মে গেছে, তারাবী মানেই তাড়াতাড়ি পড়া। যার কারণে দেখা যায় যে, যারা ‘সূরা’-তারাবী পড়েন তারাও ভীষণ দ্রুত পড়েন।
অনেকেই মুসল্লিদের কষ্টের কথা বলে থাকেন। কিন্তু চিন্তা করে দেখুন, ধীরস্থিরভাবে বিশ রাকাত নামায পড়ার কারণে যতটুকু কষ্ট-ক্লান্তি আমাদের হয় তার চেয়ে বেশি হয় কিয়াম, রুকু, সেজদা,তাসবীহ দ্রুত করার কারণে। দুই রাকাত শেষে সালাম ফিরিয়েই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে যাওয়া। চার রাকাত পড়ে খুব সামান্য একটু সময় বসে আবার শুরু করা। অথচ সালাফে সালেহীনের আমল কেমন ছিল তা আমরা পূর্বেই দেখে এসেছি।
মক্কা-মদীনার তারাবীর খোঁজ নিয়ে দেখুন, সেখানে কত ধীরস্থির তিলাওয়াত, দীর্ঘ বিশ্রাম, লম্বা সময় নিয়ে তারাবী। সেখানে কত দেশের, কত ধরনের, কত বয়সের মানুষ রয়েছে! অথচ আমাদের অবস্থা হল, বিরতিহীন উঠাবসার মাধ্যমে বিশ রাকাত শেষ করার এক প্রতিযেগিতা। অথচ হাদীস শরীফে কাকের ঠোকরের মত রুকু, সেজদা করা থেকে কত শক্তভাবে নিষেধ করা হয়েছে।
এর চেয়ে তিলাওয়াত ধীরে করে কিয়াম একটু লম্বা করলে, রুকু, সেজদায় সময় নিলে এবং উঠাবসায় ধীরস্থিরতা অবলম্বন করলে কষ্ট অনেকই কমে যাবে। বয়স্কদের কথা যদি বলেন তাদের জন্য তো ধীরস্থিরতাই সহজ। তাছাড়া বৃদ্ধ ও শিশুদের জন্য কেরাত ছোট করার কথা হাদীসে রয়েছে। তাড়াতাড়ি করার কথা তো নেই! এদের যদি খতম তারাবী একেবারেই কষ্ট হয়ে যায় তাহলে সূরা তারাবী পড়তে পারেন।
তারাবীর নামায যেমন গুরুত্বপূর্ণ আমল তেমনই ফযীলতের। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ.
যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সাথে, সওয়াবের আশায় রমযানে কিয়াম করে (তারাবী, তাহাজ্জুদ সবই এর অন্তর্ভুক্ত) আল্লাহ তাআলা তার পেছনের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেবেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২০০৯
অন্য হাদীসে ইরশাদ হয়েছে-
خَرَجَ مِنْ ذُنُوبِهِ كَيَوْم وَلَدَتْهُ أُمُّهُ
…সে যাবতীয় গুনাহ থেকে নবজাত শিশুর মত পবিত্র হয়ে যাবে। -সুনানে নাসায়ী, হাদীস ২২১০;সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৩২৮
এই যে এত এত সওয়াবের কথা হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হল এগুলো পাওয়ার জন্য কি আমল সহীহ ও নির্ভুল হওয়া শর্ত নয়?! কিংবা আল্লাহ আমাকে এত সওয়াব দান করবেন, এর জন্য একটু ধৈর্য, একটু ধীরস্থিরতা, অন্তত সর্বনিম্ন আদবটুকু রক্ষা করাও কি আমার কর্তব্য নয়?
সুতরাং আমাদের অবশ্যকর্তব্য হচ্ছে, নামাযের কিয়াম, রুকু, সেজদা ও তিলাওয়াতে ধীরস্থিরতা অবলম্বন করা ও নির্ভুল পড়া।

আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমীন।

সুত্র: আলকাওসার

বাইয়াত ও পীর-মুরীদ : ইসলামী দৃষ্টিকোণ

বাইয়াত ও পীর-মুরীদ : ইসলামী দৃষ্টিকোণ
……মুফতী মুহাম্মাদ আব্দুর রহমান গিলমান

(পীর মুরীদ ও বাইয়াতের ওপর যারা শরীয়তের প্রমাণ খুজছেন, তাদের জন্য কুরআন হাদিস থেকে কিছু দলিল ও পীর মুরীদ সংক্রান্ত কিছু বিষয় নিয়ে সামান্য আলোকপাত করেছি।)

বাইয়াত : বাইয়াত শব্দটি ‘বাইউন’ শব্দ থেকে নির্গত হয়েছে। যার অর্থ হল ক্রয়-বিক্রয় করা। এক্ষেত্রে ক্রয়-বিক্রয় এর অর্থ হচ্ছে, নিজেকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট বিক্রি করে দেয়া এবং তার পরিবর্তে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে জান্নাত খরিদ করে নেয়া। কুরআনে কারিমে সূরায়ে সফে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ ক্রয়-বিক্রয়ের কথা এভাবে উল্লেখ করেছেন- ‘মুমিনগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন বাণিজ্যের সন্ধান দেব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে? তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন সম্পদ ও জীবনপণ করে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝ।’ (সফ : ১০, ১১) পারিভাষিকভাবে বাইয়াত বলা হয়, শরিয়তের কোন বিষয়ের উপর মানুষদের থেকে অঙ্গিকার নেওয়া যে, ঐ কাজটি সম্পাদন করবে। এই অঙ্গিকার পূর্ণাঙ্গ শরিয়তের উপরও হতে পারে অথবা নির্দিষ্ট কোন মাসআলার উপরও হতে পারে।

বাইয়াত এর প্রকারভেদ : কুরআন ও সুন্নাহর মাধ্যমে তিন প্রকারের বাইয়াত পাওয়া যায়।
জিহাদের বাইয়াত : অর্থাৎ, সংশ্লিষ্ট আমিরের হাতে তাঁর নির্দেশ অনুযায়ি জিহাদ করার বাইয়াত গ্রহণ করা। যেমন : হুদাইবিয়ার সন্ধির সময় যখন হযরত উসমান রা.-এর শাহাদাতের সংবাদ আসল, তখন সমস্ত সাহাবায়ে কিরাম হুজুর সা. -এর হাতে হযরত উসমান রা. -এর শাহাদাতের বদলা নেওয়ার জন্য বাইয়াত গ্রহণ করেছিলেন। সূরায়ে ফাতাহ এর মধ্যে তা এভাবেই বর্ণিত হয়েছে- ‘যারা আপনার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করে, তারা তো আল্লাহর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করে। আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর রয়েছে, অতএব যে বাইয়াত ভঙ্গ করে; অবশ্যই সে তা নিজের ক্ষতির জন্যই করে এবং যে আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গিকার পূর্ণ করে আল্লাহ সত্ত্বরই তাকে মহাপুরষ্কার দান করবেন’। (সূরা ফাতাহ : ১০)
খিলাফতের বাইয়াত : অর্থাৎ, ইসলামী রাষ্ট্রের খলিফার হাতে তার আনুগত্যের বাইয়াত গ্রহণ করা। যেমন: খোলাফায়ে রাশেদার প্রত্যেকের হাতে সাহাবায়ে কিরাম বাইয়াত গ্রহণ করেছিলেন।

আত্মশুদ্ধির জন্য শায়েখের হাতে বাইয়াত : মানুষের অন্তরের ভিতর যে রোগগুলো থাকে তা সংশোধন এবং আমলের উন্নতির জন্য একজন আল্লাহওয়ালার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করা। এ প্রসঙ্গে কুরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে- ‘হে নবী! ঈমানদার নারীরা যখন আপনার কাছে এসে বাইয়াত গ্রহণ করে যে, তারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করবে না, চুরি করবেনা, ব্যাভিচার করবে না, তাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, জারয সন্তানকে স্বামীর ঔরশ থেকে আপন গর্ভজাত সন্তান বলে মিথ্যা দাবি করবে না এবং ভাল কাজে আপনার অবাধ্যতা করবে না, তখন তাদের আনুগত্য গ্রহণ করুন এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, অত্যান্ত দয়ালু।’ (মুমতাহিনা : ১২)

পীর : পীর শব্দটি ফার্সি। আরবীতে বলা হয় মুর্শিদ। আর মুর্শিদ অর্থ হল পথ প্রদর্শক। যিনি মানুষদেরকে আল্লাহর বিধি-বিধান পালন করার জন্য পথ প্রদর্শন করেন।

প্রয়োজনীয়তা : আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বিধানাবলী সাধারণত দুই প্রকার। প্রথমত বাহ্যিক বিধান। যেমন: নামায, রোজা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি। দ্বিতীয়ত বাতেনী বিধান। যেমন: ইখলাস, সত্যবাদীতা, আল্লাহ পাকের মহব্বত ইত্যাদি। বাহ্যিক বিধানগুলো পালন যেমন জরুরি, বাতেনী বিধানগুলো পালন তেমন জরুরি। এ বাতেনী বিধানগুলো পালন করাকে বলা হয় ইসলাহে নফস, তাযকিয়া বা আত্মশুদ্ধি ইত্যাদি। সাধারণত যেকোনো বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করার জন্য উস্তাদের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। দুনিয়ার যে কোন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে হলে উস্তাদের শরণাপন্ন হতে হয়। সে হিসেবে শরিয়তের বাহ্যিক বিধান হোক বাতেনী বিধান হোক তা শিক্ষা গ্রহণ করে ঐ অনুযায়ি আমল করার জন্য কোন না কোন উস্তাদের শরণাপন্ন হতে হবে। শরিয়তের ঐ বাতেনী বিষয়গুলো সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন এবং তদানুযায়ি আমল করার জন্য যে উস্তাদের নিকট গমন করা হয়, তাকেই পীর বা মুর্শিদ বলে। কুরআন এবং সুন্নাহর বিভিন্ন যায়গায় এ বাতেনী বিষয়গুলোর উপর আমল করা এবং এর জন্য হক্কানী পীর-মাশায়েখদের শরণাপন্ন হওয়ার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যেমন : সূরায়ে তাওবার ১১৯নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদার বান্দাগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক।’ মানুষ যত প্রকার অন্যায় কাজ করে, সকল প্রকার অন্যায় থেকে বিরত থাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল অন্তরে আল্লাহর ভয় থাকা। কারণ, আল্লাহর ভয় যদি অন্তরে থাকে তাহলে যে কোন অন্যায় কাজ করতে গিয়ে সে এ কারনেই থমকে দাঁড়াবে যে, আল্লাহ তাআলা আমাকে দেখছে। এর জন্য আমাকে আল্লাহর তাআলার দরবারে জিজ্ঞাসা করা হবে। তাই এই তাকওয়া বা খোদাভীতির মাধ্যমে সকল প্রকার অন্যায় থেকে বিরত থাকা সম্ভব। কিন্তু এই তাকওয়া কিভাবে অর্জন হবে তাও আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সাথে সাথে বলে দিয়েছেন যে, ‘তোমরা সত্যবাদীদের সাথী হও’। বস্তুত: হক্কানী পীরগণ সত্যবাদী হয়ে থাকেন এবং তাঁদের হাতে যারা বাইয়াত গ্রহণ করেন তাঁদের আল্লাহভীতির শিক্ষা দান করেন। তাইতো অনেক হক্কানী পীরের মুরীদদের দেখা যায়, তাঁদের মাঝে আল্লাহভীতি থাকার কারণে অনেক গুণাহ থেকে মুক্ত থাকেন।

কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে পীর : কুরআনে কারিমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, ‘যাকে আল্লাহ হেদায়াত দেন, সে হেদায়াত প্রাপ্ত। আর যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্য কোন মুর্শিদ বা পথ প্রদর্শক রাখেন না।’(সূরা কাহাফ:১৭) এই আয়াতের দ্বারা বুঝা যায়, যাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হেদায়াত দিতে চান তার জন্য মুর্শিদ বা পথ প্রদর্শক এর ব্যবস্থা করে দেন। আর পীর দ্বারা সাধারণত যে অর্থ বুঝানো হয় তার আরবী শব্দ হলো মুর্শিদ। সূরা মুমতাহিনায় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন, ‘হে নবী! ঈমানদার নারীরা যখন আপনার কাছে এসে বাইয়াত গ্রহণ করে যে, তারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করবে না, চুরি করবেনা, ব্যাভিচার করবে না, তাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, জারয সন্তানকে স্বামীর ঔরশ থেকে আপন গর্ভজাত সন্তান বলে মিথ্যা দাবি করবে না এবং ভাল কাজে আপনার অবাধ্যতা করবে না, তখন তাদের আনুগত্য গ্রহণ করুন এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, অত্যান্ত দয়ালু।’ (মুমতাহিনা : ১২)

অন্য আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথী হও।’ (সূরা তাওবা) এ আয়াতের ওপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা পূর্বে উল্লেখ হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হযরত আবু মুসা আশআরী রা. হতে বর্ণিত, হুজুর সা. বলেন, “পুন্যবান সঙ্গী এবং অসৎ সঙ্গী যথাক্রমে মেশক বহনকারী আর হাপরে ফুৎকার দানকারীর ন্যায়। মেশক বহনকারী হয়ত তোমাকে মেশক প্রদান করবে বা তার নিকট হতে তুমি ক্রয় করবে। তাও না হলে সুগন্ধি তুমি অবশ্যই পাবে। পক্ষান্তরে হাপরে ফুৎকারকারী হয়ত তোমার কাপড় জ্বালাবে, নতুবা দূর্গন্ধতো অবশ্যই পাবে। (বুখারী শরীফ : ২/৮৩০, হাদিস নং- ৫৫৩৪)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন- ‘তোমাদের সর্বোৎকৃষ্ট সঙ্গী সে, যাকে দেখলে আল্লাহ তাআলার কথা স্বরণ হয়; যার কথায় ইলম বৃদ্ধি পায়; যার কাজ-কর্ম তোমাদেরকে পরকালের কথা স্বরণ করিয়ে দেয়।” (আবদ ইবনে হুমাইদ, আবু ইয়ালা-ইতহাফুল খিয়ারা ৮/১৬৩) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় প্রখ্যাত মুহাদ্দিস মুনাভী রহ. বলেন, যে ব্যক্তির মধ্যে ঈমানী গুণাবলীর সমন্বয় ঘটে, ইসলামের আদব-শিষ্টাচার পূর্ণতা লাভ করে এবং যার অন্তর সৎচরিত্রে আলোকিত, যার অন্ত:করণ ইহসানের চূড়ায় আরোহন করে, তিনি নির্মলতায় হন আয়নাতুল্য। মুমিনগণ তাঁর দিকে তাকালে তাঁর স্বচ্ছতায় নিজেদের দোষগুলো দেখতে পায়। ভেসে উঠে তাঁর সুন্দরতম চরিত্রে নিজেদের অশুভ কার্যকলাপসমূহ। (ফয়যুল কাদীর ৬/২৫১-২৫২) এছাড়াও এ বিষয়ের উপর কুরআন ও সুন্নাহর মাঝে অসংখ্য দলীল-প্রমাণ বিদ্যমান। এই সংক্ষিপ্ত পরিসরে তার বিস্তারিত আলোচনা সম্ভব নয়।

সঠিক পীরের পরিচয় : হক্কানী পীর-মাশায়েখদের সংস্পর্শে এসে বহুলোক দীনের পথে আসছে। সঠিক পথের সন্ধান পাচ্ছে। এজন্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ পীর-মাশায়েখদের প্রতি দুর্বল। তাদেরকে অত্যান্ত শ্রদ্ধার সাথে দেখে। তাই এই দুর্বলতাকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে ইয়াহুদি-খ্রিস্টান চক্র তাদের পা চাটা কিছু মূর্খ মানুষকে পীর সাজিয়ে, তাদের মাধ্যমে কিছু অদ্ভুট ভ্রান্ত আকিদা প্রচার করে সাধারণ মুসলমানদের ঈমান আকিদা ধ্বংস করার চক্রান্ত শুরু করেছে। তাই পীর গ্রহণ করতে অত্যান্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কুরআন-সুন্নাহর কষ্টিপাথরে পরখ করে দেখতে হবে, যার হতে বাইয়াত হতে যাচ্ছি, তিনি সঠিক পীর কিনা? বাজারে সাধারণ দশ টাকা বিশ টাকার সদাই কিনতে গিয়ে অনেক পরখ করা হয় তা সঠিক কিনা? সেক্ষেত্রে যার হাতে আমার ঈমান-আমল সংশোধন করবো তাকে অবশ্যই ভালভাবে পরখ করতে হবে যে, তার হাতে বাইয়াত হলে আমার ঈমান-আমল সংশোধন হবে না ধ্বংস হবে। হাকিমুল উম্মত, মুজাদ্দিদে মিল্লাত আশরাফ আলী থানবী রহ. কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সঠিক পীরের কতগুলো আলামত বর্ণনা করেছেন। সঠিক পীর চেনার ক্ষেত্রে এই আলামতগুলো যথেষ্ট সহায়ক হবে।

০১। পীর তাফসীর, হাদীস, ফিকাহ শাস্ত্রের অভিজ্ঞ আলেম হবেন। অন্ততপক্ষে মিশকাত শরীফ ও জালালাইন শরীফ বুঝে পড়েছেন এই পরিমাণ ইলম থাকা আবশ্যক।
০২। পীরের আমল-আকিদা শরিয়ত অনুযায়ি হতে হবে। তাঁর স্বভাব চরিত্র ও অন্যান্য গুণাবলী শরিয়ত যেমন চায় তেমনি হতে হবে।
০৩। পীরের মধ্যে কোন প্রকার লোভ (টাকা-পয়সা, সম্মান, যশ-খ্যাতি ইত্যাদি) থাকবে না এবং নিজেকে কামেল হওয়ার দাবী করবে না।
০৪। তিনি নিজে কোন কামেল ও সঠিক পীরের কাছ থেকে আত্মশুদ্ধি ও তরিকত অর্জন করে থাকবেন।
০৫। সমসাময়িক দীনদার আলেমগণ এবং খাঁটি সুন্নাত তরীকার পীর-মাশায়েখগণ তাকে ভাল বলে মনে করবেন।
০৬। দুনিয়াদার অপেক্ষা দীনদার লোকেরাই তাঁর প্রতি বেশি ভক্তি শ্রদ্ধা রাখে এমন হতে হবে।
০৭। তাঁর মুরীদদের অধিকাংশ এমন যে, তারা শরিয়তের পাবন্দি করে এবং দুনিয়ার লোভ-লালসা কম করে।
০৮। পীর মনোযোগ সহকারে মুরিদদের তালীম-তারবিয়াত ও আত্মশুদ্ধি করেন, তাদের কোন দোষ-ত্রুটি দেখলে সংশোধন করে দেন, তাদের ইচ্ছা অনুযায়ি স্বাধীন ছেড়ে দেন না।
০৯। তার সংস্পর্শে কিছু দিন থাকলে দুনিয়ার ভালবাসা কম ও আখিরাতের চিন্তা বেশি হতে থাকে।
১০। পীর নিজেও নিয়মিত যিকির-আযকারে মশগুল থাকেন। (অন্ততপক্ষে: নিয়মিত যিকির-আযকার করার পরিপূর্ণ ইচ্ছা রাখেন) কেননা নিজে আমল না করলে তার তালীম-তারবিয়াতে বরকত হবেনা।

উল্লেখিত গুণগুলো যার মধ্যে আছে তিনি একজন কামেল বা সঠিক পীর। তার হাতে নির্দিধায় বাইয়াত হওয়া যাবে। এই গুণাবলী থাকার পর তার কারামাত আছে কিনা? তার কাশফ হয় কিনা বা তিনি কারো মনের ভাব জানতে পারেন কিনা? তার দোয়া কবুল হয় কিনা? তিনি ভবিষ্যৎবানী করেন কিনা ইত্যাদি বিষয়গুলো দেখার প্রয়োজন নেই। কারণ, অলি বা খোদার প্রিয় বান্দা হওয়ার জন্য এসব বিষয় জরুরি নয়।

মুরীদ : মুরীদ শব্দটি ইরাদাহ থেকে নির্গত হয়েছে। যার অর্থ হচ্ছে ইচ্ছা করা। অর্থাৎ, যে ব্যক্তি কোন সঠিক পীরের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করে এই ইচ্ছা পোষণ করল যে, সে আল্লাহ তাআলার সকল প্রকার আদেশ নিষেধ মেনে চলবে তাকে মুরীদ বলে। মুরীদ হওয়ার উদ্দেশ্য একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন। আসল উদ্দেশ্য আল্লাহকে পাওয়া। আর আল্লাহকে পাওয়ার অর্থ হচ্ছে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা। আল্লাহ তাআলাকে সন্তুষ্ট করার একমাত্র উপায়, আজীবন তাঁর যাবতীয় হুকুম পালন করা। মুরীদ হওয়ার সময় এ ধরনের উদ্দেশ্য অন্তরে থাকা ঠিক নয় যে, মুরীদ হলে আমার থেকে অনেক প্রকারের কারামত প্রকাশ পাবে, আমি যতই অন্যায় কাজ করিনা কেন, পীর সাহেব আমাকে কিয়ামতের দিন পার করে নিবেন, পীর সাহেব এক নজরেই আমাকে কামেল বানিয়ে দিবেন। আমার কোন আমল বা পরিশ্রম করার প্রয়োজন হবেনা অথবা আমার ভিতরে অনেক জযবা সৃষ্টি হবে, আমি অনেক চিল্লা-পাল্লা করব ইত্যাদি নানাহ বেহুদা উদ্দেশ্য অন্তরে যেন না আসে।

মুরীদের করণীয় : ০১. শরীয়তের খেলাফ না হলে পীরের সব কথা ভক্তি সহকারে পালন করতে হবে।
০২. অন্তরে এই বিশ্বাস রাখা যে, এই পীর থেকেই আমার আত্মশুদ্ধি অর্জন হবে, অন্যদিকে মন দিলে ফয়েয ও বরকত থেকে বঞ্চিত হয়ে যাবে।
০৩. পীর যা কিছু দরুদ-অজিফা বা যিকিরের সবক দিবেন তাই পালন করবে, অন্য কোন অজিফা বা আমল নিজ থেকে বা অন্য কারো বলা থেকে শুরু করলে তা পীরকে বলে ছেড়ে দিবে।
০৪. পীরের কারামত বা অলৌকিক কিছু দেখার ইচ্ছা করবে না।
০৫. প্রয়োজন এবং অনুমতি ব্যতিত তার সংস্পর্শ ছেড়ে অন্যত্র যাবেনা।
০৬. নিজের অন্তরের ভাল মন্দ সব অবস্থা পীরকে অবগত করে যথাযথ ব্যবস্থা জেনে নিবে। তিনি কাশফের দ্বারা জেনে নিবেন এই ভরসায় বসে থাকবেন না।
০৭। পীর ব্যতিত অন্য কাউকে জিকির আযকারের অবস্থা এবং হালত সম্পর্কে বলবে না। এতে বরকত নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

সারকথা হল, পীর মুরীদের আসল উদ্দেশ্য নেক কাজে অলসতা আসলে তার মোকাবেলা করে কাজটি সম্পাদন করা এবং গুণাহের চাহিদা আসলে তা দমন করে বিরত থাকা। যে ব্যক্তি এ পর্যায়ে পৌঁছতে পেরেছে, তার আর কোন কিছুর প্রয়োজন নেই। এটাই পীর-মুরীদীর মূল কথা। অথচ এ ব্যাপারে উদাসীনতার কারণে, স্পষ্ট ধারণার অভাবে কিছু লোক পীর মুরীদী সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণায় পতিত হয়েছে এবং একে বিদআত বা শরিয়ত বিরোধী বলে আখ্যা দিয়েছে। অথচ সত্যিকারের পীর-মুরীদীর মাঝে শরিয়তের অনুস্বরণ-অনুকরণ ব্যতিত অন্য কিছুর সামান্যতম মিশ্রণ পর্যন্ত নেই।