শিয়া; তাদের উৎপত্তি, দল-উপদল, আকীদা-বিশ্বাস, রেফারেন্স-গ্রন্থ ও লিংকসমূহ

#শিয়া; তাদের উৎপত্তি, দল-উপদল, আকীদা-বিশ্বাস, রেফারেন্স-গ্রন্থ ও লিংকসমূহ, স্বভাব প্রকৃতি, হাকীকত উন্মোচন, কিছু টীকা ও সতর্কবাণী, কয়েকটি সংশয় নিরসন এবং শেষে তাদের প্রতি বিনীত আহ্বান… সহ অনেক কিছু :

(#এক.)
আরবি শিয়া শব্দের অর্থই হলো গোষ্ঠী।
শিয়ারাই হলো আদর্শিক ও রাজনৈতিক কারণে মুসলিমদের মূল জামা’আত থেকে স্বেচ্ছায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া প্রথম গোষ্ঠী, যারা পরবর্তীতে নিজেদের মনগড়া ভ্রান্ত আকিদা গড়ে নিয়েছে। শিয়া মতবাদ উদ্ভাবনকারী মুনাফিক আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা একজন ইহুদীর সন্তান। মুসলিমদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করতেই সে ইসলাম গ্রহহণের অভিনয় করেছিল।

শিয়াদের মধ্যেও ভাগ আছে। ইমামিয়্যাহ, ইসনে আশারিয়্যাহ, ইসমাইলি, নুসাইরিয়্যাহ প্রভৃতি। এদেরকেই ‘রাফেজি’ও বলা হয়।
শুধুমাত্র যায়িদিয়া সম্প্রদায় ছাড়া বাকি শাখাগুলোর আকিদা কুফরে পরিপূর্ণ।

(#দুই.)
প্রায় পুরো দুনিয়ার উলামায়ে ইসলামের ঐক্যবদ্ধ ফায়সালা ও ফতোয়া হল- শিয়াদের ৯০ পার্সেন্টই কাফের, বিশেষ করে বর্তমান ইরানের যারা আছে, এবং যারা ইসনা আশারিয়্যা, নুসাইরিয়া… মতবাদের অনুসারী।

তাই তাদের বাহ্যিক উন্নতিতে মুসলমানদের খুশি হওয়ার কোন কারণ নেই। তারা সুযোগ পেলে ইহুদী – খৃষ্টানদের আগে সুন্নীদেরকে খতম করবে! সর্ব যুগের ইতিহাস এমনই।
আর তলে তলে ইহুদীদের সাথে ও আমেরিকার সাথে যে শিয়াদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সবসময়ই থাকে, সেটা তো এখন আশা করি তাদের কাছে মোটেও অস্পষ্ট নয়, বিশেষ করে যারা বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে গভীর চিন্তা ভাবনার সাথে একটু বিস্তারিত খোঁজ খবর রাখার চেষ্টা করেন।
কেবলই ইহুদী নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ার উপর ভরসা করেন না।
——————————
(তিন.)
#তাদের_ভয়াবহ_কিছু_আকীদা :

1. কুরআন বিকৃত এবং এর ১ চতুর্থাংশ ফেলে দেয়া হয়েছে!

2. ৩/৪ জন সাহাবা ছাড়া তিন খুলাফায়ে রাশেদ সহ সকল সাহাবী (নাঊযুবিল্লাহ) কাফের, মুরতাদ, গাদ্দার!
তাদের নাপাক যবান থেকে ৪/৫ জন সাহাবী বাদে প্রথম ৩ খোলাফায়ে রাশেদীন থেকে শুরু করে কেউই রক্ষা পায় নি!

3. মুতআ’ (নির্দিষ্ট সময়ের জন্য চুক্তি ভিত্তিক বিয়ে। তারা এক রাতের জন্য পতিতাদের বিয়ে করাও হালাল মনে করে!)

4. তাকিয়্যা (একজন মনেপ্রাণে যা বিশ্বাস
করে, তার ঠিক বিপরীত বলা বা করার ভান
করা) বৈধ। (তারা মুখে মুসলিম ভ্রাতৃত্তের কথা বলে, কিন্তু সুযোগ পেলেই মুসলিমদের হত্যা করে
(মিথ্যা বলা খুবই ভাল এবং সাওয়াবের
কাজ। নিজের বিশ্বাসকে গোপন রাখা অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ!! প্রতারণা এবং প্রবঞ্চনা একটি মহৎ কাজ।)

মুতআ’ ও তাকিয়্যা মত নিকৃষ্ট আকীদা সম্ভবত দুনিয়ার আর কোন জাতি গোষ্ঠীর মাঝে নেই। এর মাধ্যমে তারা মিথ্যা এবং বেশ্যাবৃত্তি ও অবাধ যৌনাচারের বৈধতার সার্টিফিকেটই কেবল দেয় না, মহা সওয়াবের গ্যারান্টি দিয়ে উৎসাহও দিয়ে থাকে।

5. রাজআত ()

6. ইমামত (তাদের দৃষ্টিতে তাদের ইমামগণ নবীদের সমতুল্য, বরং তার চেয়ে বেশি )

7. বাদা’ (আল্লাহ তায়ালারও মাঝে মাঝে ভুল হয়ে থাকে, নাঊযু বিল্লাহ )

8. শিয়াদের কালিমা মুসলিমদের শাহাদাহ
থেকে ভিন্ন। তাদের কালিমা হলো – লা
ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহি
‘আলিউন ওয়ালিউল্লাহি ওয়াসিয়্যু
রাসুলুল্লাহি ওয়া খালিফাতুহু বিলা
ফাসলিন।
শিয়ারা তাদের আযানে “আশহাদু আন্না
‘আলিউন ওয়ালিউল্লাহ” ও “হুজ্জাতুল্লাহ”
এবং “হাইয়্যা আলা খাইরিল আমাল” যুক্ত
করেছে।

সহ আরো বিকৃত ও জঘন্য সব কুফরী আকীদা।
“““““““““““`
(#চার.)
তাদের কারো সাথে কথা বলে তো লাভ নাই, কারণ সেই তাকিয়্যা!
যারা বলে, এগুলো শিয়াদের বিশ্বাস নয়, হয় তারা তাকিয়্যা করে, না হয় তারা তাদের ধর্ম সম্পর্কে জানেই না। যেমন অনেক নামকেওয়াস্তে মুসলমানের ইসলাম সম্পর্কে সামান্যই জানা থাকে।

তাই তাদের কথা নয়, তাদের বড়দের কিতাবসমূহের রেফারেন্স ধর্তব্য হবে:

#তাই এগুলোর বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও তাদের বড়দের কিতাবসমূহ থেকেই রেফারেন্স জানতে দেখুন-

#শিয়া_মতবাদ_বিষয়ে_কয়েকটি_গ্রন্থ :

১.ইরানী ইনকিলাব ইমাম খোমেনী ও শিয়া মতবাদ, আল্লামা মনযুর নোমানী, মদীনা পাবলিকেশন্স, বাংলাবাজার, ঢাকা।

২. علماء دين كا فيصله-حبيب الرحمن قاسمي

৩. اختلاف امت اور صراط مستقيم- حضرت یوسف لدھیانوی شہید رح
https://goo.gl/sPrsgi

৪. شیعہ سنی اختلاف اور صراط مستقيم – حضرت یوسف لدھیانوی شہید رح
https://goo.gl/sY4iB4

৫. ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ, মাওলানা হেমায়েতুদ্দীন, মাকতাবাতুল আবরার, ইসলামী টাওয়ার, বাংলাবাজার ঢাকা।

৬. تحفہ اثنا عشريہ – شاہ عبد العزیز رح
https://goo.gl/AlSBqu

৭. مجمل عقائد الشيعة

Click to access elebda3.net-wq-5075.pdf

৮. ইতিহাসের কাঠগড়ায় হযরত মুআবিয়া রাযি. – মাওলানা তাকী উসমানী, ইসলামী টাওয়ার, বাংলাবাজার, ঢাকা।
https://goo.gl/Y8Q6fu

” ” ” ” ” ” ” ” ” ” ” ” ” ” ” ” ” ” ” ” ” ”
(#পাঁচ.)
নিম্নে উল্লিখিত লিংকসমূহেও শিয়াদের মুখোশ উন্মোচন সহ কিছু কিছু বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাবেন-
#বেশকিছু_গুরুত্বপূর্ণ_লিংক:

1.
শিয়ারা কি মুসলিম??!
উ: না.! সপক্ষে প্রমাণ ও যুক্তি ->
ধারাবাহিক পর্ব – ১
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=359739011090061&id=300199090377387

1.
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1794229740866205&id=1629238320698682

2.
#শীআকথনatikullahatik

3.
https://m.facebook.com/groups/1566266773700865?view=permalink&id=1722383078089233

4.
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=867589866703419&id=196608060468273

5.
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1837093659843502&id=100006286573206

https://en.wikipedia.org/wiki/Iran%E2%80%93Israel_relations

6.
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1642192836070787&substory_index=0&id=1631946583762079

7. তাদের জনক:
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1365933586768430&id=100000554058678

8.
http://islamhouse.com/bn/books/735785/
http://islamhouse.com/bn/books/434032/
http://islamhouse.com/bn/books/430747/
http://islamhouse.com/bn/books/409011/
http://islamhouse.com/bn/books/395670/
http://islamhouse.com/bn/books/393768/
http://islamhouse.com/bn/books/392816/
http://islamhouse.com/bn/books/386814/
http://islamhouse.com/bn/books/373484/
http://islamhouse.com/bn/books/364836/
http://islamhouse.com/bn/books/370147/
http://islamhouse.com/bn/books/353681/
http://islamhouse.com/bn/books/340530/
http://islamhouse.com/bn/books/324697/
http://islamhouse.com/bn/books/735787/
http://www.mediafire.com/?izd11egtci3ei3j

9. শিয়াদের কুখ্যাত ইতিহাস
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=258037807952869&id=100012399545987

10. শিয়া সম্প্রদায় ও তাদের কুফরি আকিদা:১
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=231244057298911&id=100012399545987
সিয়াদের কুফুরি আক্বিদা-২
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=231247010631949&id=100012399545987
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷

#সতর্কবাণী ⚠

শিয়াদের বিষয় বড় স্পর্শকাতর !
বহু বিষয়ে প্রচুর বানোয়াট বর্ণনা ছড়ানো হয়েছে। তাই সতর্ক থাকা উচিত। বহু বানোয়াট ও আজগুবি কেচ্ছা কাহিনী শিয়ারা বাজারে ছেড়েছে, শিয়া ধর্মটাকে সাজানোর জন্য। কারণ এছাড়া যে তাদের ‘কাম’ চলবেনা!
তাই ওগুলো পড়ে ধোকা খাওয়ার কোন কারণ দেখছি না।
এখানে সংক্ষেপে বোঝানো সম্ভব নয়, তাই ঠাণ্ডা মাথায় বইগুলো পড়ুন, জবাব পেয়ে যাবেন-
এসবের হাকীকত জানা, ও নিজের ঈমান রক্ষার তাগিদেই বইগুলো পড়তে জোর আহ্বান জানাচ্ছি।
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°

(সাত.)
#কিছু_টিকা:
১. ৯০ পার্সেন্ট শিয়ারা তো মুসলমানই নয়। তাই এর কারণে মুসলিমদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলা ঠিক নয়।
নিজেদের সাধারণ মুসলমানদেরকে বাতিল আকীদা-বিশ্বাস থেকে রক্ষা করার জন্য এবং সতর্ক করার জন্য কোন বিষয় খোলাসা করলে এটাকে বিভেদ সৃষ্টি বলে না।

২.ইসলাম আর কুফরের মাঝে কি সন্ধি হতে পারে? দুটো তো দুই মেরুর জিনিস! যতক্ষণ না শিয়াগণ সকল কুফরী আকীদা থেকে তাওবা করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের কোলে ফিরে আসে।

(#আট.)
১৪০০ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে, যুগে যুগে ইহুদী খৃষ্টান মুশরিক শিয়া সহ সমস্ত কুফরী শক্তি ইসলামের বিরুদ্ধে বহু অপচেষ্টা চালিয়েছে। তারীখে ইসলামের সবচে’ মযলূম শহীদ খলীফায়ে রাশেদ হযরত উসমান রাযি. এবং হযরত হুসাইন রাযি. এর সেই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে মু’তাযিলা ও গ্রিক দর্শনের ফিতনা, ক্রুসেড ও ভয়াবহ তাতারী আক্রমণ গণহত্যা সহ এমন বহু ভয়ংকর সব ট্রাজেডি ইসলামের ইতিহাসে সংঘটিত হয়েছে, সাময়িক ভাবে তখন মনে হয়েছিল- দুনিয়ার বুক থেকে ইসলাম এবার নিশ্চহ্ন হয়েই যাবে! কারণ এমন পরিস্থিতিতে সাধারণভাবে টিকে থাকার কথা নয়।
এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ খৃস্টধর্ম, হযরত ঈসা আ. এর প্রকৃত শিক্ষাকে ইহুদী পৌল বিকৃত করতে সমর্থ হয়।
অবশ্য ইহুদী আব্দুল্লাহ বিন সাবা শিয়া গ্রুপ সৃষ্টিই করেছিল ইসলামকে বিকৃত করার জন্য, সে সুর তো শিয়াদের কণ্ঠে বাজতেই থাকবে। যেমন ইহুদী পৌল খৃষ্টধর্মের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে।
.

কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ, ইসলামের এক চুল পরিমাণও ক্ষতি কিংবা এক হরফ বিকৃতি সাধনে কেউই সমর্থ হয়নি।
হবে কিভাবে? এ যে মহান আল্লাহর দৃপ্ত ঘোষণা –
انا نحن نزلنا الذكرى و انا له لحافظون!
‘আমি নিজেই এ কুরআন নাযিল করেছি, আমি নিজেই এর সংরক্ষক !’, সূরা হিজর, আয়াত নম্বর ৯
এটা ইসলামের মু’জিযা এবং সত্যতার প্রমাণও বটে!
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
(#নয়.)
মুতা, তাকিয়্যা, গালিগালাজ এগুলো তো শিয়াদের আইকন। এটা থেকে লোভ সামলানো তাদের জন্য তো বড়ই কঠিন, করবেই!
তাদের নাপাক যবান থেকে ৪/৫ জন সাহাবী বাদে প্রথম ৩ খোলাফায়ে রাশেদীন থেকে শুরু করে কেউই রক্ষা পায় নি।

কুকুর কামড় দিলে আমরা মানুষ তো জবাবে কুকুরকে কামড় দিতে পারি না।
আমরা তাদের জবাবে শুধু হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কয়েকটি হাদীস পেশ করতে পারি, এবং দোয়া করতে পারি-
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ((لاَ تَسُبُّوا أَصْحَابِي فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا أَدْرَكَ مُدَّ أَحَدِهِمْ وَلاَ نَصِيفَهُ)). قَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ. وَمَعْنَى قَوْلِهِ: ((نَصِيفَهُ)) يَعْنِي نِصْفَ الْمُدِّ.

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُغَفَّلٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ((اللَّهَ اللَّهَ فِي أَصْحَابِي اللَّهَ اللَّهَ فِي أَصْحَابِي لاَ تَتَّخِذُوهُمْ غَرَضًا بَعْدِي فَمَنْ أَحَبَّهُمْ فَبِحُبِّي أَحَبَّهُمْ وَمَنْ أَبْغَضَهُمْ فَبِبُغْضِي أَبْغَضَهُمْ وَمَنْ آذَاهُمْ فَقَدْ آذَانِي وَمَنْ آذَانِي فَقَدْ آذَى اللَّهَ وَمَنْ آذَى اللَّهَ فَيُوشِكُ أَنْ يَأْخُذَهُ)).
যার সারমর্ম হলো – রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন:
‘আমার সাহাবাকে গালি দিওনা, সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণও স্বর্ণ দান করে ফেলে, তবু তাদের একজনের এক মুদ পরিমাণ কিংবা এর অর্ধেকেরও কাছে যেতে পারবে না।
আমার সাহাবীদের ব্যাপারে সাবধান! আমার সাহাবীদের ব্যাপারে সাবধান! যে তাদেরকে ভালবাসবে সে তো আমার ভালবাসার তাগিদেই তাদেরকে ভালবাসবে, আর যে তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে সে যেন আমার প্রতি বিদ্বেষ এর কারণেই করল। যে তাদেরকে কষ্ট দিবে সে আমাকেই কষ্ট দিল, আর যে আমাকে কষ্ট দিল সে আল্লাহকে কষ্ট দিল, আর যে আল্লাহকে কষ্ট দিল, আশংকা হয় আল্লাহ তাকে পাকড়াও করবেন! ‘

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে হিফাযত করুন, হিদায়াত দান করুন, আমীন!
_____________________
#শেষ_কথা:
আমি স্পষ্টভাবেই বলছি, শুনুন-
আমরাও এ দন্দ্বের অবসান চাই, এক হতে চাই। তবে একটাই শর্ত-
শিয়াদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এবং প্রধান নেতা জনাব ইমাম খোমেনী সাহেবকে বলুন, সকল কুফরী আকীদা থেকে নিজেদের বারাআত যাহির করে (সম্পর্কচ্ছেদ ও দায়মুক্তি) জনসম্মুখে এবং মিডিয়ার সামনে ঘোষণা দিতে।
তখনই দেখবেন পুরো বিশ্বের সকল উলামায়ে কেরাম তাদেরকে বুকে টেনে নিতে একটুও দ্বিধা করবে না। আমরা এ জন্য সর্বদা প্রস্তুত। আমাদের সাথে তো শিয়াদের জমিজমা নিয়ে বিরোধ নেই!

#.
আর আমরা সবাই সবসময় আল্লাহর কাছে এ দোয়া করতে থাকি-
اللهـم أرنا الحق حقا وارزقنا اتباعه و أرنا الباطل باطلا و ارزقنا اجتنابه!
“হে আল্লাহ! আমাদেরকে সত্য দেখান এবং সত্যের অনুসরণের তাওফীক দান করুন, এবং আমাদের সামনে বাতিল স্পষ্ট করে দিন ও এর থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দান করুন!”
আমীন!! ইয়া রব্বাল আলামীন!!!

জীবনী: বিশ্ব তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা আমীর হযরত মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলভী রহঃ

বংশ পরিচয় : নাম ইলিয়াস। পিতার নাম : তত্কালীন যুগশ্রেষ্ঠ আলেম ও আবেদ মাওলানা ইসমাইল রহঃ । ঐতিহাসিক নাম : আখতার ইলিয়াস । জন্মস্থান : ভারতবর্ষের উত্তর প্রদেশের মুযাফ্ফর নগর জেলার অন্তর্গত কান্ধলা নামক শহরে ১৩০৩ হিজরিতে জন্মগ্রহন করেন।

শৈশব : তার শৈশবকাল নিজ নানার বাড়ি কান্ধলায় এবং নিজ পিতা হযরত মাওলানা ইসমাইল সাহেব রহ এর সান্নিধ্যে দিল্লীর নিজামুদ্দীনে অতিবাহিত করেন। তখন তার পুরো পরিবার কান্ধলায় অবস্থান করছিলো। পরিবারের নারী-পুরুষ সকল সদস্যবৃন্দের মধ্যে ঈর্ষনীয় ধর্মপরায়নতা ছিল। সদাসর্বদাই তারা অধিক পরিমাণে কুরআন তিলাওয়াত ও যিকিরে মশগুল থাকতেন।

প্রাথমিক শিক্ষা : পরিবারের অন্য শিশুদের মতো তাঁরও মকতব থেকে শিক্ষাজীবনের সূচনা হয়। পারিবারিক ঐতিহ্য অনুযায়ী শৈশবেই কুরআন হিফয সম্পন্ন করেন। এই পরিবারের হিফজুল কুরআন এর প্রচলন এতো ব্যপক ছিল যে মসজিদের দুই কাতার পর্যন্ত মুয়াজ্জিন ছাড়া কোন গাইরে হাফেজ দাঁড়াত না।

মুহতারাম নানীর ভবিষ্যৎবাণী : হযরত ইলিয়াস রহঃ এর নানীজান অত্যন্ত উঁচু স্তরের খোদাভীরু নারী ছিলেন। তিনি রাবেয়া বসরী রহঃ এরআদর্শ ও গুণে গুণান্বিত পুণ্যবতী এক অনন্য নারী। তার সম্পর্কে হযরত ইলিয়াস রহঃ বলেন, “আমার নানী জানের নামাযের দৃষ্টান্ত আমি শুধু হযরত গাঙ্গুহী রহঃ এর মধ্যে দেখেছি। সেই মহীয়সী নারী নিজ প্রাণপ্রীয় নাতী হযরত ইলিয়াস রহঃ সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী করতে গিয়ে বলেন আখতার। আমি তোমার কাছ থেকে সাহাবা কেরাম রাঃ এর সুগ্রাণ পাচ্ছি।” এছাড়াও শৈশবকাল থেকেই হযরত ইলিয়াস রহঃ এর মধ্যে সাহাবাসুলভ দ্বীনি ব্যকুলতার একটা ছাপ বিদ্যমান ছিল, যা দেখে শাইখুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদুল হাসান রহঃ পর্যন্ত বলতেন, “মৌলবী ইলিয়াস কে দেখলে আমার সাহাবা কেরামের কথা মনে পড়ে যায়।” পরবর্তীকালে তার ব্যক্তিত্বে দ্বীনি জযবা ও আবেগের যে সুসংগঠিত প্রকাশ ঘটেছিল তা তাঁর, স্বভাবের মধ্যেই নিহিত ছিল। পরিবেশ, শিক্ষা ও আল্লাহ ওয়ালাদের সান্নিধ্য তার সেই সেই স্বভাবে স্ফুলিংগ এর প্রজ্বলন ঘটিয়েছিল মাত্র। তাই দেখা যায় শিশু ইলিয়াস এমন কিছু কাজ করতেন যা সাধারণ শিশুদের স্তর থেকে ভিন্ন হতো । তাঁর সমবয়সী মকতব সাথী রিয়াজুল ইসলাম কান্ধলভী রহঃ বলেন, মকতব জীবনে মৌলভী ইলিয়াস একবার লাঠি হাতে বলেন, “মিয়াঁ রিয়াজ চলো বে নামাযীদের বিরুদ্ধে জিহাদ করি।”
লেখাপড়ায় গভীর অধ্যবসায় : হজরত ইলিয়াস রহঃ ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় গভীর মনযোগী ছিলেন। প্রতি দিনের সব পরা শেষ করে বাকি সময় যিকির ও অন্যান্য অযিফায় কাটিয়ে দিতেন। শেষ রাত্রে নিয়মিত তাহাজ্জুদ, নামাজ, যিকির, দুআ ও রোনাজারি-আহাজারিতে নিমগ্ন থাকতেন।

গাঙ্গুহে অবস্থান : পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার পিছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় তথা কৈশোর থেকে যৌবন পর্যন্ত ১০ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত দীর্ঘ ১০ বছর সময় তিনি গাঙ্গুহী রহঃ এর মতো পরশপাথরের সান্নিধ্যে অতিবাহিত করেন। হজরত ইলিয়াস রহঃ বলতেন, যখনই হজরত গাঙ্গুহী রহঃ এর সান্নিধ্য ও বরকতপ্রাপ্ত কোন বুজুর্গ গাঙ্গুহে আসতেন তখনই বড়ভাই আমার সবক বন্ধ করে দিয়ে বলতেন, এখন তোমার সবক এটাই যে তুমি তাদের সাহচার্যে থাকবে ও তাদের মূল্যবান কথা হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করবে।

দেওবন্দ মাদ্রাসায় ভর্তি ও শিক্ষা সমাপন : শাইখুল হাদীস হযরত মাওলানা শাইখুল হিন্দ মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী রহঃ এর কাছে হাদীস পড়ার জন্য ১৩২৬ হিজরীতে দারুল উলুম দেওবন্দে ভর্তি হন এবং শাইখুল হিন্দ রহঃ এর কাছে বুখারী শরীফ ও তিরমিযী শরীফ পরেন।
ইসলাহী সম্পর্ক : হজরত রশিদ আহমাদ গাঙ্গুহী রহঃ সাধারণত ছাত্রদের কে বাইআত করাতেন না। কিন্তু ইলিয়াস রহঃ এর অবস্থা পর্যাবেক্ষণ করে ছাত্র অবস্থায়ই তাকে বাইয়াত করান। হযরত ইলিয়াস রহঃ বলেন যখন আমি যিকির করতাম তখন হৃদয়ের গভীরে এক ধরণের প্রবল চাপ অনুভব করতাম। বিষয়টি হযরত গাঙ্গুহী রহঃ কে জানালে তিনি বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে বলেন যে, হযরত কাসেম নানুতুবী রহঃ এমন অভিযোগ হাজী ইমদাদুল্লাহ রহঃ এর সমীপে উত্থাপন করেছিলেন। তখন হাজী সাহেব তাকে লক্ষ করে বলেছিলেন “আল্লাহ আপনাকে দিয়ে দ্বীনের বড় কোন খেদমত নিবেন” সুতরাং আশা করি তোমাকে দিয়েও আল্লাহ তায়ালা দ্বীনের বড় কোন খেদমত নিবেন।

মুবারকময় কর্মজীবনঃ শিক্ষাজীবন সমাপ্তের পর ১৩২৮ হিজরিতে মাওলানা ইলয়াস (র.) সাহারানপুর মাযাহিরুল উলুম মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। ১৩৩০ হিজরি মোতাবেক ১৭ এপ্রিল ১৯১২ সালে তিনি মামা মৌলভী রওফুল হাসান সাহেবের কন্যাকে বিবাহ করেন। ১৩৩৩ হিজরিতে হজ্ব পালনের জন্য তিনি মক্কা শরীফ গমন করেন। মেঝ ভাই ও বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পর তিনি ভক্ত ও অনুরক্তদের অনুরোধে বস্তি নিযামুদ্দিনে অবস্থিত মসজিদ ও মাদ্রাসার সার্বিক দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আর ১৯২০ সালে তিনি ভারতের মেওয়াত অঞ্চল থেকে তাবলীগী দাওয়াতের সূচনা করেন। এটি দিল্লীর দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত। প্রাচীনকালে এই অঞ্চলটি ছিল ‘মেও’ জনগোষ্ঠীর আবাসভূমি। বর্তমানে গোরগাঁও, আলাওয়ার, ভরতপুর ও মথুরার কিছু অংশ নিয়ে মেওয়াত এলাকা বিস্তৃত। এই অঞ্চলের জনগণ ছিল নামেমাত্র মুসলমান। তাদের আচার-আচরণ ছিল বহুক্ষেত্রে আরব জাহেলিয়াতের কাছাকাছি। আর্যদের এ দেশে আগমনের বহু পূর্ব থেকে মেও গোষ্ঠীরা এই এলাকায় বসবাস করতো। দিল্লীর মুসলিম সালতানাতের যুগে মেওয়াতীরা বনজঙ্গলে আশ্রয় নিয়ে লুটপাট করতো। ১২৬০ সালে গিয়াসুদ্দীন বলবান মেওয়াতী দস্যুদের শায়েস্তা করার জন্য এক বড় অভিযান পরিচালনা করেন। এমন একটি এলাকা থেকেই তাবলীগ জামাতের সূচনা বিস্ময়কর।
প্রথমে মক্তব শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ইছলাহ ও সংশোধনের প্রয়াস চলে। পরে ১৩৪৪ হিজরিতে দ্বিতীয় হজ্ব থেকে ফিরে এসে তিনি দাওয়াতের ধারা বদলিয়ে গাশত শুরু করলেন। তারপর তাবলীগ জামাতের বিকাশের কথা অনেকেরই জানা।

জীবনের শেষ দিকে মাওলানা ইলয়াস (র.) ইলম ও ফিকিরের প্রতি তাকিদ ও তারগীব দিতে লাগলেন। যারা অশিক্ষিত, তাদের প্রতি বেশি দরদ দেখালেন। যাকাত আদায় করা ও তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করার ওপর জোর দিলেন।

আধ্যাত্মিক খেলাফত লাভ : ফকীহুন নাফস আল্লামা রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী রহঃ এর ইন্তেকালের পর শায়খুল হিন্দ রহঃ এর পরামর্শে খলীল আহমদ সাহরানপুরী রহঃ এর সাথে ইসলাহী সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেন এবং তার বিশেষ তত্ত্বাবধানে আধ্যাত্মিক উৎকর্ষতা সাধন করেন ও খিলাফত লাভ করেন। এছাড়াও শাহ আব্দুল রহিম সাহেব রায়পূরী রহঃ, মাহমুদ হাসান দেওবন্দী রহঃ ও আশরাফ আলী থানভী রহঃ প্রমূখ বুযুর্গকে তিনি খুব মুহাব্বত করতেন। এবং তারাও হযরত ইলিয়াস রহঃ কে নিজ সন্তানের মতো স্নেহ করতেন।

ইন্তেকালঃ ১৯৪৪ সালের ১২ জুলাই মৃত্যুর একদিন আগে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কাল কি বৃহস্পতিবার? বলা হলো ‘জ্বি হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, আমার কাপড়-চোপড় দেখে নাও কোনো নাপাকি আছে কিনা। নেই শুনে খুশি হলেন। ভোররাতে ফজরের আযানের কিছুক্ষণ আগে তিনি ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

বাবা দিবস : বাবা হিসেবে শায়খুল হাদিস ছিলেন অতুলনীয়

জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান উলামায়ে কেরামকে আমরা শুধু একজন রাহবার হিসেবেই চিনি। তাদের বিস্তৃত জীবনের বাহিরের অংশটুকুই আমরা জানি। কিন্তু একজন বাবা হিসেবেও তারা যে ছিলেন অতুলনীয় এবং পরিবার গঠনেও যে তারা আমাদের আদর্শ হতে পারেন তা হয়তো কখনো ভেবে দেখি নি। আমাদের ভাবনার আড়ালে থাকা সেসব শ্রেষ্ঠ বাবাদেরকে পাঠকের সামনে তুলে ধরবে আওয়ার ইসলাম।
ধারাবাহিক স্মৃতিচারণের প্রথম পর্বে থাকছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ ও বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ. । প্রিয় বাবাকে নিয়ে আওয়ার ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছেন তার সুযোগ্য সন্তান মাওলানা মাহফুজুল হক। তার স্মৃতি, আবেগ ও অনুভূতিগুলো পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন আতাউর রহমান খসরু।
বাবা হিসেবে শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ. ছিলেন অতুলনীয়। শত ব্যস্ততার মধ্যে আব্বা আমাদের যথেষ্ট সময় দিতেন। আমরা ১৩ ভাই-বোন। ৫ ভাই ও ৮ বোন। আমাদের আমাদের নিজে পড়াতেন। আমি নিজেই আব্বার কাছেই আরবি অক্ষর জ্ঞান লাভ করেছি। আব্বা নিজের সন্তান এবং সন্তানের সন্তানদের সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখতেন। সরাসরি পড়ালেখার জন্য সময় দিতেন এবং প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ারও খবর নিতেন।তত্ত্বাবধান করতেন।
আব্বা ছিলেন খুবই হাসি-খুশি মানুষ। পরিবারের সব সদস্যের সঙ্গে তিনি সরল একটা সম্পর্ক বজায় রাখতেন। বড়দের সঙ্গে কিছুটা গাম্ভীয বজায় রেখে চললেও ছোটদের ব্যাপারে ছিলেন সরল। ছোটদের মতো করেই তিনি তাদের সঙ্গে মিশতেন।

আব্বা আদর ও শাসন কোনোটার চেয়ে কোনো কম ছিলো না। আদরের সময়ও সর্বোচ্চ আদর করতেন এবং শাসনের সময়ও সর্বোচ্চ শাসন করতেন। যেমন আমার যখন দুই বছর বয়স তখন আমি বাসার দোতালা থেকে জানালা দিয়ে রাস্তায় পড়ে যাই। আমাদের প্রতি আব্বা এতোটা স্নেহশীল ছিলেন যে, আব্বা সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে পারেন নি। সিঁড়িতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। একইভাবে আমাদের সবার বড় ভাই –তখন তার বয়স খুব কম- এক সময় শরিয়তের বিধান মানার ক্ষেত্রে আব্বার অবাধ্য হলে তাকে ঘর থেকে বের করে দেন। শাসনের ক্ষেত্রে এতোটাও করেছেন।
পরিবারের ব্যাপারে আব্বার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন ছিলো পরিবারের সব সদস্য হাফেজ হবেন। আব্বা এটা করেও গেছেন। তিনি চাইতেন সন্তানরা আলেম হবেন। সাধারণত বড়দের সন্তানরা বাবার মাদরাসায় পড়ে। মাদরাসা অন্য শিক্ষকগণ তখন তাদের শাসন করতে সংকোচ করেন। মাদরাসায় পড়ার সময় আমরা তখন বুঝতে পারি নি যে আমরা বিশেষ কারো সন্তান। তিনি চাইতেন আমরা যেনো সাধারণ দশটা ছেলের মতো পড়ালেখার স্বাভাবিক লেখাপড়াটা করতে পারি। অগ্রসর হতে পারি।
আমরা যখন কোনো শ্রেণিতে উঠতাম তখন আব্বা আমাদের লক্ষ্য করে ওই শ্রেণির গুরুত্ব কিতাবগুলো নিজে পড়ানোর দায়িত্ব নিতেন। যেমন আমরা বেশ কয়েকজন আব্বার কাছে তাফসিরে জালালাইন পড়েছি। মেশকাত পড়েছি। শুধু তাই নয়; মাদরাসার সেরা শিক্ষকদের তত্ত্বাবধান যেনো আমরা পাই সে চেষ্টাও আব্বার ছিলো।
লেখাপড়ার শেষ করার পর শিক্ষকতার জীবনে আমরা কিভাবে সফল হবো, কাদের অনুসরণ করলে, তাদের পরামর্শ নিলে ভালো করবো সেভাবেই তিনি আমাদের প্রতিপালন করেছেন। পথচলার নির্দেশনা দিয়েছেন। লেখালেখির জন্য উৎসাহিত করেছেন।
উৎসব আনন্দের দিনগুলো আব্বা আমাদের সাথে পুরোপুরি মিশে যেতেন। সবাইকে নিয়ে আনন্দ করতেন। আব্বাসহ আমরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যেতাম। আমাদের ঘুরতে নিয়ে যেতেন। যেমন, আব্বা-আম্মাসহ আমরা সবাই মিলে সাভার স্মৃতি সৌধে গিয়েছি।
আব্বার জীবনের বড় একটা দিক ছিলো কঠিন থেকে কঠিন মুহূর্তেও দীনের প্রশ্নে কোনো আপস না করা। আব্বা তিন সরকারের আমলে তিনবার জেলে গেছেন কিন্তু আদর্শের প্রশ্নে পিছুপা হন নি। আব্বা যখন কোনো রাজনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হতেন, জেল-জুলুমের শিকার হতেন আমরা ভয় পেলে, ভেঙ্গে পড়লেও আব্বা ভয় পেতেন না, ভেঙ্গে পড়তেন না। তিনি আমাদেরকে সাহস যোগাতেন। বলতেন, আমি তো দীনের জন্য ত্যাগ স্বীকার করছি। তোমরা চিন্তা কইরো না, আমার কিছু না হবে।
সব শেষে বলবো, শত ব্যস্ততার মধ্যেও আব্বা পরিবারকে সময় দিয়ে, ছেলে-মেয়ে সন্তান-সন্তুতিদের শিক্ষা-দীক্ষার তত্ত্বাবধান করে একটি আদর্শ পরিবার গঠনে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তার কোনো তুলনা হয় না। আব্বা আমাদের গর্ব, জাতির জন্য উত্তম দৃষ্টান্ত।
সূত্র: আওয়ার ইসলাম

বাবা দিবস: বাবা হিসেবে ফজলুল করীম পীর সাহেব চরমোনাই রহ: ছিলেন শতভাগ সফল

জাতির আধ্যাত্মিক রাহবার উলামায়ে কেরামকে আমরা শুধু একজন দাঈ হিসেবেই চিনি। তাদের বিস্তৃত জীবনের বাইরের অংশটুকুই আমরা জানি। কিন্তু একজন বাবা হিসেবেও তারা যে ছিলেন অতুলনীয় এবং পরিবার গঠনেও যে তারা আমাদের আদর্শ হতে পারেন তা হয়তো কখনো ভেবে দেখিনি। আমাদের ভাবনার আড়ালে থাকা সেসব শ্রেষ্ঠ বাবাদের পাঠকের সামনে তুলে ধরবে আওয়ার ইসলাম।

ধারাবাহিক স্মৃতিচারণের দ্বিতীয় পর্বে থাকছেন আধ্যাত্বিক আলেম ও বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মাওলানা সৈয়দ ফজলুল করীম রহ. (পীর সাহেব চরমোনাই)।

প্রিয় বাবাকে নিয়ে আওয়ার ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছেন তার দ্বিতীয় ছেলে প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী । তার স্মৃতি, আবেগ ও অনুভূতিগুলো পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন শহনূর শাহীন।

সৈয়দ ফজলুল করীম পীর সাহেব চরমোনাই রহ. বাবা হিসেবে ছিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবাদের একজন। দীনের জন্য তিনি সারাটা জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন। হাজারো ব্যাস্ততার মাঝে তিনি আমাদের সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নিতেন। দেখা যেতো মাসের প্রায় ২৭-২৮ দিন বাড়ির বাইরে থাকতেন। তখন তো মোবাইল ফোনের অতটা প্রচলন ছিল না তবুও বিভিন্নভাবে তিনি আমাদের খোঁজ রাখতেন। সফরে বের হওয়ার আগে আমাদের সবাইকে ডেকে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশান দিতেন। সারা মাসের বাজার সদাই করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা করে যেতেন। আমার বয়স যখন দেড় বছর তখন আমার আম্মা মারা যান। এরপর আত্মীয় স্বজনদের পীড়াপীড়িতে আব্বা আমাদের দ্বিতীয় আম্মাকে আনেন। তাও আম্মা ছিলেন আমার নানুরই ভাইয়ের মেয়ে।

বাবা হিসেবে শায়খ রহ. আমাদের সাথে খুব মিশতেন। বাড়িতে এলে আমাদের সব ভাই বোনকে একসাথে বসে খাবার খেতেন। ফলের মৌসুমে তিনি নিজে গাছ থেকে ফল পেরে এনে আমাদের খাওয়াতেন। বাবা ছিলেন একদম সহজ সরল নিরহংকারী একজন মানুষ। তিনি নিজের কাজ নিজেই করতেন। পুকুরে মাছ ধরতেন, বিল্ডিংয়ের কাজের সময় দেখেছি বাবা রাজমিস্ত্রীদের সাথে কাজ করতেন, এমনকি বাবা নিজ হাতে বাড়ির বাথরুম পরিস্কার করতেন।

বাবা আমাদের আদরও করতেন আবার কঠোর শাসনও করতেন। বিশেষ আমল আখলাখের ব্যাপারে বাবা ছিলেন খুবই কঠোর। আমরা যদি জামাতে নামাজ পড়তে না পারতাম তাহলে বাবা সেদিন আমাদের খেতে দিতেন না।

রমজান মাসে প্রতিদিন বাবা আমাদের নিয়ে একসঙ্গে সেহরি করতেন। ঈদের দিনে নিজের হাতে রান্না করতেন এবং দুপুরে
নামাজের পর মসজিদে আসা সকল মুসুল্লিকে বাবা নিজে মেহমানদারি করাতেন।

এলেম, আমল, উদারতায় ও দানশীলতায় তিনি ছিলেন অনন্য। সাত ও এক বোনের মধ্যে আমি দ্বিতীয় সন্তান হিসেবে বাবাকে যতটুকু দেখেছি তাতে নির্দ্বিধায় বলতে পারি আধ্যাত্মিকতায় বাবা ছিলেন ইমাম গাযযালি, ইমাম আবু হানিফা রহ. এর মূর্ত প্রতিচ্ছবি। শরীয়তের ব্যাপারে বাবা ছিলেন অনন্য এক আপোসহীন ব্যক্তিত্ব। শরীয়তের হুকুম আহকামের ব্যাপারে বাবা কখনোই আপোস করতেন না। রাজনৈতিক জীবনের দিকে তাকালে দেখবেন রাজনীতি করতে গিয়ে নারী নেতৃত্বসহ শরীয়তের কোনো বিধানের ব্যাপারে কখনোই কোনো আপোস করেননি।

অর্থ-বিত্ত, যশ-খ্যাতি নিয়ে তার কোনো আগ্রহ ছিল না। একবার চাঁদপুর সফরকালে চাঁদপুর টার্মিনালে এক পুলিশ অফিসার বাবাকে পাঁচশ টাকা হাদিয়া দেন। বাবা তখন আমাকে বললেন, দেখো এই পুলিশ কর্মকর্তা কতো টাকাই বা বেতন পান অথচ আলেম ওলোমদের কতো সম্মান করেন। বাবা ওই পাঁচশ টাকা আমার হাতে দিয়ে বললেন, টাকাটা মাদরাসার লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে দিয়ে দেবে।

কর্মময় জীবনে বাবাকে দেখেছি প্রাণ চঞ্চলা। সামান্য অসুস্থতা বা ব্যস্ততা বাবাকে দায়িত্ব পালনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। ছোট বেলায় আমিনুল করীম নামে আমার এক ভাই মারা যায়। আব্বা তখন সফরে ছিলেন। সন্তানের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে বাবা আসেন এবং দাফন কাফন শেষে সেদিন বিকেলেই বাবা আরেকটি মাহফিলের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান।
বাবা হিসেবে শায়খ ছিলেন অতুলনীয়
বাবা আমাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন আমরা প্রত্যেকে দীনের খাদেম হবো। আল্লাহ তাআলা বাবার স্বপ্নকে পূরণ করছেন। বাবা আমাদের সাত ভাইকেই আলেম বানিয়েছেন। আমার বোনও একজন আলেমা।

আমি চরমোনাই আালিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালন করছি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়ামের দায়িত্ব পালন করছি। রেজাউল করীম ইসলামী আন্দোলন এবং তরিকার আমীরে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মাদরাসায়ও বিভন্ন দায়িত্ব পালন করছেন। ফয়জুল করীম তরিকা ও দলের পাশাপশি মাদরাসার খেদমত করে যাচ্ছেন। আমাদের বড় ভাই মোশতাক ঢাকা রামপুরায় জাতীয় মহিলা মাদরাসা পরিচালনা করছেন। এভাবে আমাদের প্রত্যেক ভাই দীনের জন্য বিভিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

সন্তানদের যেভাবে মানুষ করে যেতে পেরেছেন সেই আলোকে বলা যায় বাবা হিসেবে শায়খ রহ. ছিলেন শতভাগ সফল।

আমাদের ভাইদের মধ্যে যাতে কোনো দ্বন্দ্ব সংঘাত না হয় সেজন্য তার জীবদ্ধশায় শরীয়াহর আলোকে সম্পত্তির বণ্টন করে গেছেন।

একসাথে চলতে গেলে পরিবারের সদস্যদের মাঝে পারস্পরিক মনোমালিন্য হতে পারে। একারণে তিনি আমাদের পারস্পরিক বিরোধ মেটানোর জন্য আবু জাফর সাহেবকে আহবায়ক করে পারিবারিক কমিটি করে দিয়ে গেছেন। কোনো বিষয়ে এরপরও সমাধান না হলে খাস কমিটি আছে। বর্তমানে খাস কমিটির মুরুব্বি আমাদের ডা. মোখতার হোসাইন সাহেব।

সর্বোপরি এলেম, আমল, দায়িত্ববোধ, দূরদর্শীতা, সচেতনতা ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, বাবা হিসেবে সন্তানদের আদর স্নেহ ও শাসনের দিক থেকে সব মিলিয়ে বাবা ছিলেন অন্যন্য অতুলনীয়।
সূত্র: আওয়ার ইসলাম

আইনুদ্দীন আল আজাদ একটি নাম, একটি চেতনা, একটি বিপ্লব

১৮ জুন এক বেদনা বিধুর দিন। এই মাতৃভূমি হারিয়ে ছিলো ক্ষণজন্মা এক প্রতিভাকে। পরিপূর্ণ বিকশিত হবার পুর্বে বাগান থেকে ঝরে গেলো একটি গোলাপ। যার সুরের মুর্ছনায় আন্দোলিত হতো লাখো তারুণ্যের হৃদয়-মন। জেগে উঠতো বিপ্লবকামী তারুণ্যের ঘুমন্ত বিবেক। তিনি আর কেউ নন ইসলামী সংগীত সম্রাট একবিংশের হাসসান ইবনে সাবিত, বিবেক জাগানিয়া বিল্লাল, হজরত মাওলানা আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.।

১৯৭৭ সালের ১লা মার্চ জন্ম নেয়ে এই মানব শিশুটি যে একদিন যুগের বিল্লাল হবেন সে কথা কে জানতেন? যিনি জীবনের পুরোটা সময় গেয়ে গেছেন, বলে গেছেন দ্বীনের তরে। আইনুদ্দীন আল আজাদ একটি নাম, একটি চেতনা, একটি বিপ্লব। ইসলামী বিপ্লবের পথকে গতিশীল করতে আমৃত্যু ইসলামী সংস্কৃতির বিজয়ের লক্ষে কাজ করে গেছেন। সেই লক্ষে তিনি জাতীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন কলরব প্রতিষ্ঠা করেছেন ২০০৪ সালে।

তিনি শুধু সংগীতের মাঝে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। ইসলামকে প্রতিষ্ঠার জন্য রাজপথে লড়াই করেছেন। তিনি ছিলেন রাজপথের লড়াকু সৈনিক। তিনি ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন-এর সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর ঢাকা মহানগরীর প্রশিক্ষণ সম্পাদক ছিলেন।

তিনি আমাদের মাঝ থেকে চলে গেলেন ২০১০ এর ১৮ জুন। চোখের জলে ভাসিয়ে গেলেন লাখো ভক্তকে। রেখে যায় গালিব ও রুহির মতো ছুট্ট দুটি সন্তান।

তার গেয়ে যাওয়া সংগীত এ্যালবাম গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- দুর্নিবার, অবগাহন, কবর পথের যাত্রী, এলো রমজান, খুজিগো তোমায়, শিক্ষিত শয়্তান, কি হবে, মানুষ, জনতার আর্তনাদ, বীর মুজাহীদ উসামা, যদি, বঝে শুনে, বুশের কবর, রক্ত ভেজা পথ, ভোট, তেল, তাইতো, দামামা, বদলে যাবে দিন, যায় যদি যাক প্রাণ, নাংঙা তলোয়ার, বন্ধু ইত্যাদি।

শাহাদাত বার্ষিকীর এই দিনে এই মহান ব্যক্তিকে জানাই হৃদয়ের গভীর থেকে লাখো সালাম। আল্লাহ তাকে জান্নাতের উঁচু মাকাম দান করুন, আমীন।