প্রগতিবাদের অস্ত্র

কয়েক বছর পূর্বেকার একটি ঘটনা মনে পড়ে গেল,যা সমুদ্র-সৈকতে দৃষ্টিগোচর হয়েছিল। একটি যুবতী মেয়ে বালুর উপর বসে আলোকচিত্রী শিল্পীকে (বয়ফ্রেন্ড্ও হতে পারে) দিয়ে নিজের ছবি উঠাচ্ছিল। তার পরিধানে ছিল সামান্যতম পোষাক। নিজের অবশিষ্ট সামান্যতম লজ্জার কারণে সে দুই হাঁটু একত্র করে বসেছিল। ফটোগ্রাফার যেহেতু প্রগতিবাদী যুবক ছিল, তাই সে প্রগতিশীল পোজ নিতে চাচ্ছিল । সে যুবতীর নিকটে গিয়ে তার হাঁটুদ্বয় ফাঁক করতে চাইল। কিন্তু সে নিজের অবশিষ্ট লজ্জার কারণে তাতে রাজি হচ্ছিল না। এ অবস্থা দেখে ফটোগ্রাফার চিত্কার করে বলল, হায়, আমার মনে হয় তুমি গেঁয়ো ! তা না হলে তুমি আমার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে পারতে না।
একথা শুনা মাত্র মেয়েটির চোখ, নাক-মুখ ও দেহে যে লজ্জাটুকু অবশিষ্ট ছিল তাও কর্পূরের মতো উবে গেল। নির্দ্বিধায় নিজের হাঁটুদ্বয় ফাঁক করে দিয়ে একটি সুন্দর (?) প্রগতিশীল ছবির পোজ দেয়ার জন্য সে প্রস্তুত হয়ে গেল ।

নৈরাজ্যসৃষ্টি কল্পে শয়তানের এজেন্টরা এ জাতীয় সম্বোধন ও খেতাব দিয়ে মানুষের দুর্বল করে পঙ্কিলতার ভিতরে টেনে নেয়। মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে এ জাতীয় নেতিবাচক শব্দ গুলো মারণাস্ত্রের মতোই কার্যকর-প্রগতিবাদীরা এ কথা খুব ভাল করে জানে।
মুসলিম প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেও তারা এ অস্ত্র প্রয়োগ করছে। পশ্চাত্পদ ,বর্বর, সেকেলে, প্রতিক্রিয়াশীল, মৌলবাদী, জঙ্গি-সন্ত্রাসী, সাম্প্রদায়িক ইত্যাকার শব্দ মিসাইলের মোকাবিলায় ঈমান ও জ্ঞানের দিক থেকে দুর্বল ও নিঃস্ব মুসলমানদের প্রতিরোধ শক্তি দমে যায় এবং তাদের মধ্যে হীনমন্যতাবোধ সৃষ্টি হয়। এভাবে আধুনিক জাহিলিয়াতের নিশান বরদাররা মুসলমানদের জ্ঞানবুদ্ধি , চিন্তা-চেতনা ও যোগ্যতাকে হরণ করে নেয়। এভাবেই ইসলামি সভ্যতা-সংস্কৃতির বসতভৃমি পাশ্চাত্য তথা খ্রিস্ট-ইহুদিদের মানবতা বিধ্বংসী সভ্যতা-সংস্কৃতির লীলাভূমিতে পরিণত হয়।

প্রগতির নামে প্রহসন : আধুনিকতার নামে ইসলাম বিসর্জন

সারা বিশ্বে প্রগতির লু হাওয়া প্রবাহিত হচ্ছে। সকলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একই। প্রগতিশীল সমাজবিজ্ঞানীদের ধারনা আমাদের সমাজটা পরিবর্তন করা উচিৎ। সেকেলের সমাজ ব্যবস্থায় সার্বিক অধিকার প্রতিষ্ঠা অসম্ভব, বিধায় প্রগতিশীল সমাজবিজ্ঞানী হিসেবে তা পরিবর্তন করা সমীচীন। প্রগতির উল্টোটা প্রতিক্রিয়া। আর প্রতিক্রিয়া সেই দর্শন বা মতবাদ যা মনে করে মানুষের ইতিহাস ক্রমে অবনতিশীল। মানুষ ও সভ্যতা ক্রমেই অবক্ষয়ের দিকে ধাবি ত হচ্ছে। কেউ চিন্তা করেন, মুলত প্রগতির ধারণা মনে করে বর্তমান অতীতের চেয়ে শ্রেয় এবং বিশ্বাস করে যে ভবিষ্যৎ আরো ভালো হতে পারে এবং হবে। পক্ষান্তরে কেউ চিন্তা করেন, প্রাচীন যুগ আধুনিক যুগের চাইতে শ্রেয়, অর্থাৎ সময় যত গড়িয়ে যাচ্ছে মানুষের অবস্থার তত অবনতি ঘটছে। আধুনিক যুগে মানুষের পার্থিব ও মানসিক অগ্রগতি ঘটেছে বটে কিন্তু মানবিক মূল্যবোধ, সামাজিক বন্ধন, সহমর্মিতা, পারিবারিক সুসম্পর্ক সহ যাবতীয় প্রণয়ের বন্ধন ছিন্ন করে মানবতার অবনতি ঘটেছে।
প্রগতি ইংরেজি Progress শব্দটি, ল্যাটিন শব্দ Prograde থেকে উদ্ভূত। যার অর্থ অগ্রগতি, উৎকর্ষতা, জ্ঞান বিজ্ঞানের উন্নতি, সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া ইত্যাদি। প্রগতির আভিধানিক অর্থের মতামত সকলের কাছে প্রায় একই। তবে পারিভাষিক অর্থে যত মতানৈক্য পরিলক্ষিত হয়। এই মতপার্থক্য মূলত আদর্শিকভাবে হয়েছে। তাই প্রগতি বলতে বোঝায় এমন একটি নির্দিষ্ট উচ্চ বা শ্রেয় লক্ষ্যের অভিমুখে অগ্রসর হওয়াকে। আবার বর্তমান প্রগতিশীল ব্যক্তিগণের বক্তব্য হলো: প্রগতি মানেই সকল ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন। ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্মীয় সহ যাবতীয় বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিষ্ঠা করতে বদ্ধপরিকর।
তথাকথিত আধুনিক ধ্বজাধারী প্রগতিশীলরা মনে করেন, এই প্রগতির ছোঁয়া লাগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উত্তরণের লক্ষ্যে শিল্পবিপ্লবের সময় থেকে। সত্তর দশকে প্রগতির ধারণাকে উজ্জীবিত করেছে আধুনিক বিজ্ঞানের জয়যাত্রা। বিজ্ঞানের জয়যাত্রার সাথে সাথে শিল্পবিপ্লব ইউরোপে অর্থনৈতিক অগ্রগতি প্রগতির ধারণাকে আরো জনপ্রিয় করে তোলে। সামাজিক বিবর্তনের ধারণা সামাজিক প্রগতির সঙ্গে জড়িত ও সংযুক্ত। আবার সামাজিক প্রগতির ধারণা ইতিবাচক দর্শনের সঙ্গেই যুক্ত। অগাস্ট কোঁত সামাজিক প্রগতিকে মানুষের চিন্তাধারার প্রগতির সঙ্গে সমার্থক বলে বিবেচনা করেছেন। মনোজগতে মানুষের প্রগতির মানব সমাজের প্রগতির মাপকাঠি। জার্মান দার্শনিক হেগেন বলেন, ‘আত্মোপলব্ধিই মনুষ্যত্বের অগ্রগতি প্রকাশের প্রণালী। তিনি গুরুত্ব দিতেন মানুষের ব্যক্তিগত উপলব্ধির ওপর। কালমার্কসের মতে, সমাজের একটি স্তর থেকে অন্য স্তরে পৌঁছতে উৎপাদন কৌশলের যে পরিবর্তন তাই প্রগতি। প্রগতি হলো এমন একটি সামাজিক পরিবর্তন, যা অনুপ্রাকৃতিক নিয়মের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হয়ে মানুষের সামাজিক মূল্যবোধ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। আরও স্পষ্ট করে বলা যায়, প্রগতি হলো মানুষ যে সামাজিক ও নৈতিক গুণগুলোকে মূল্য দেয় সমাজের মানুষের জীবনে সে গুণগুলোর অধিকার, প্রকাশ, বিকাশ ও স্থায়ীভাবে রূপান্তরিত হওয়া। মোটকথা, প্রগতি হচ্ছে বিবর্তন ও সামাজিক পরিবর্তনের পরিচালক।
একদল সমাজবিজ্ঞানীদের মধ্যে বিতর্ক হয়েছে। রবার্ট নিসবেট মনে করেন যে, সমাজবিজ্ঞানীরা প্রগতির ধারণার জনক। আবার ঐতিহাসিক কার্ল বেকার বিশ্বাস করেন যে, প্রগতির ধারনার উদ্ভাবক হোল ইউরোপের এনলাইটেনমেন্ট আন্দোলনের লেখকরা। তাঁরা কেউ দার্শনিক ছিলেন না; কিন্তু তাঁরা বিশ্বাস করতেন যে, আধুনিক কালে মানুষের ইতিহাসে নব যুগের সুচনা হয়েছে এবং মানুষের সভ্যতা উত্তরোত্তর প্রগতির পথে এগিয়ে চলেছে। প্রথমদিকে অনেক সমাজবিজ্ঞানী এ মতবাদের বিরোধিতা করেছেন, তবে পরবর্তীকালে সমাজবিজ্ঞানীরাই প্রগতির সবচেয়ে বড় প্রবক্তা হয়ে দাঁড়ান।
সারা পৃথিবীর মুসলমানদেরকে প্রগতির নামে সুকৌশলে বস্তুবাদী, পূঁজিবাদী সূদী অর্থনীতি চালু ও ধর্মনিরোপেক্ষতাবাদ প্রচার করে চলেছে। প্রগতি ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ও সম্পূরক আদর্শ মাত্র। অথচ ‘ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ’ একটি নিরেট কুফরী মতবাদ। ইসলামের সাথে এর আপোষ করার কোন সুযোগ নেই। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ মানুষকে ইসলামী আদর্শ থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখার ব্যবস্থা করে।
ইনসাইক্লোপেডিয়া বৃটানিকাতে সেক্যুলারিজমের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, Any movement in society directed away from other worldliness to life on Earth… ‘এটি এমন একটি সামাজিক আন্দোলনের নাম, যা মানুষকে আখেরাতের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে কেবলমাত্র পার্থিব বিষয়ের দিকে দৃষ্টি নিবন্ধ করায়’। অর্থাৎ ধর্মীয় গোড়ামীকে উপেক্ষা করে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ প্রতিষ্ঠা, নারী-পুরুষ সমাধিকার, ধর্মকে পিছনে ফেলে বিজ্ঞানের উৎকর্ষতাকে পরিগ্রহণ ইত্যাদি। বস্তুতঃ ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ প্রথমে মুসলমানকে তাওহীদের গন্ডীমুক্ত করে তাগুতের পথে পরিচালিত করে। কিন্তু কেন? ইসলাম কি প্রগতির অন্তায়? না, ইসলাম কখনোই প্রগতির অন্তরায় নয়। আমাদের যদি সুস্থ চিন্তা চেতনা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ থাকে তবে আমরাই প্রগতিশীল আর যদি নিচু ও অসুস্থ মন-মানসিকতা থাকে তবে আমরা প্রগতির নামে অপব্যাখ্যা করে প্রহসনে নিমগ্ন। ইসলাম প্রগতির অন্তরায় না, বরং ইসলামের অপব্যাখ্যা ও ধর্ম বিবর্জিত জীবনই প্রগতির অন্তরায়।
যারা ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদকে উপেক্ষা করেন তারা মনে করেন প্রগতি হলো, ১৪০০ বছর পূর্বের সেই আইয়্যামে জাহিলিয়াতের তমাচ্ছন্ন ঘোর অন্ধকার থেকে উত্তরণের নাম। এই সংজ্ঞা মতে, ধর্মনিরপেক্ষতাকে উপেক্ষা করে ধর্মীয় অনুশাসনের মাধ্যমে যাবতীয় সংকীর্ণতা পিছনে ফেলে হযরত মুহাম্মাদ (ছা:) এর প্রদর্শিত আদর্শর অগ্রগতিকেই প্রগতি বলে, যা চিরন্তন ও সার্বজনীন। আদি পিতা হযরত আদম (আ:) দ্বীন ইসলামের প্রথম বাহক। যুগে যুগে প্রয়োজন বোধে মহান আল্লাহ্ দ্বীন ইসলামকে প্রগতিশীল করার উদ্দেশ্যে মানব জাতির মধ্য থেকে নবী-রাসূল নির্বাচিত করে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। সর্বশেষ হযরত মুহাম্মাদ (ছা:) এর মাধ্যমে প্রগতির চিরন্তন ও সার্বজনীন ভিত্তি স্থাপন করেছেন। যা শাশ্বত অপরিবর্তীত। আর ইসলামের অনুশীলনের মাধ্যমে রাসূল (ছা:) অন্ধকারাচ্ছন্ন জাহেলী যুগকে প্রগতিশীল স্বর্ণযুগে পরিণত করেছিলেন। সেই যুগের মানুষই পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। তারা ইসলামের বিধিবিধান অনুসরণ করেই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিলেন। এসম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ﻛُﻨْﺘُﻢْ ﺧَﻴْﺮَ ﺃُﻣَّﺔٍ ﺃُﺧْﺮِﺟَﺖْ ﻟِﻠﻨَّﺎﺱِ – ‘তোমরাই হ’লে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে’ (আলে ইমরান ৩/১১০)। নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ﺧَﻴْﺮُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻗَﺮْﻧِﻲْ ﺛُﻢَّ ﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﻳَﻠُﻮْﻧَﻬُﻢْ ﺛُﻢَّ ﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﻳَﻠُﻮْﻧَﻬُﻢْ- ‘আমার যুগের মানুষই সর্বোত্তম মানুষ। অতঃপর তার পরের যুগের মানুষ, অতঃপর তার পরের যুগের মানুষ’। (বুখারী, হা/২৬৫২; মুসলিম, হা/২৫৩৩)।
তাছাড়া তখন যেসকল দেশে ইসলামী আইনের অনুশাসন বিদ্যমান ছিল ঐ সকল দেশ প্রগতীর মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিল। এখনো যেসব দেশে ইসলামের অনুশাসন যত বেশী সেই সব দেশ তত উন্নত, সভ্য ও প্রগতির উচ্চ শিখরে অবস্থান করছে। যদি আমরা ইসলামী অনুশাসনের আদলে ইসলামী প্রগতিশীল হয় তবে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত নাযিল করা হবে এবং প্রবৃদ্ধিতে দেশকে সমৃদ্ধ করা হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ﻭَﻟَﻮْ ﺃَﻥَّ ﺃَﻫْﻞَ ﺍﻟْﻘُﺮَﻯ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﻭَﺍﺗَّﻘَﻮْﺍ ﻟَﻔَﺘَﺤْﻨَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺑَﺮَﻛَﺎﺕٍ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻭَﻟَﻜِﻦْ ﻛَﺬَّﺑُﻮﺍ ﻓَﺄَﺧَﺬْﻧَﺎﻫُﻢْ ﺑِﻤَﺎ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻳَﻜْﺴِﺒُﻮﻥَ ‘জনপদের অধিবাসীরা যদি ঈমান আনয়ন করে এবং আল্লাহভীতি অর্জন করে, তবে তাদের প্রতি আসমান-যমীনের যাবতীয় বরকতের পথ উন্মুক্ত করে দিব’ (আ‘রাফ ৯৬)।
আমাদের সমাজে এক শ্রেণির কিছু মানুষ আছে যারা ইসলামকে চিরন্তন প্রগতিশীল মনে করেন, তবে ইসলামের যোজন-বিয়োজনের প্রয়োজনও অনুভব করেন। আর তা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের ভুল অর্থ ও অপব্যাখ্যার মাধ্যমে কিয়াস করে থাকেন। আবার তারা বিজাতীয় মতবাদবে সরাসরি গ্রহণ না করে ঘুরিয়ে তা গ্রহণ করেন। তাদের মতে যুগের সাথে বা সামাজিকতার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। অথচ দ্বীন ইসলামকে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য মনোনীত করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ﺇِﻥَّ ﺍﻟﺪِّﻳْﻦَ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺍﻟْﺈِﺳْﻼَﻡُ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্র নিকট মনোনীত দ্বীন হচ্ছে ইসলাম’ (আলে-ইমরান ৩/১৯)। আর এই দ্বীনের মধ্যে কোন প্রকার রদ বদল বা যোজন-বিয়োজন করা প্রশ্নই আসে না। দ্বীন ইসলাম চিরস্থায়ী পূর্ণাঙ্গ ও সংযোজন-বিয়োজন মুক্ত সার্বজনীন প্রগতিশীল। এসম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ﺍَﻟْﻴَﻮْﻡَ ﺃَﻛْﻤَﻠْﺖُ ﻟَﻜُﻢْ ﺩِﻳْﻨَﻜُﻢْ ﻭَﺃَﺗْﻤَﻤْﺖُ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻧِﻌْﻤَﺘِﻲْ ﻭَﺭَﺿِﻴْﺖُ ﻟَﻜُﻢُ ﺍﻟْﺈِﺳْﻼَﻡَ ﺩِﻳْﻨًﺎ – ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নে‘মত পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম’ (মায়েদাহ ৫/৩)।

নারীবাদীরা কেন পতিতাবৃত্তির পক্ষে ?

সুপ্রীতি ধর নামক এক এক্সট্রিমিস্ট হিন্দুর সম্পদনায় পরিচালিত ওয়েম্যানচাপ্টার পত্রিকায় দীর্ঘদিন ধরে পতিতবৃত্তিকে প্রমোট করে লেখা হচ্ছে। সর্বশেষ ‘এই শহরে যৌনপল্লী দরদার’ শিরোনামে একটা লেখা ছাপা হয়।
লেখার সারমর্ম, লেখিকা রাস্তায় যাওয়ার সময় কোন এক পুরুষ তার পেছন পেছন “রেট কতো, রেট কতো” বলে চিৎকার করে। এতে লেখিকা বিরক্ত হয়। এক পর্যায়ে সে অনুধাবন করে রেট কতো শব্দদুখানা উচ্চারণ করা ব্যক্তিটি একজন নির্মাণ শ্রমিক। এতে সে বুঝতে সক্ষম হয়, ঢাকা শহরে নিম্নবিত্ত শ্রেণীর যৌনতা প্রাপ্তির সংকট হচ্ছে। এরপর রাস্তায় পরে থাকা ব্যবহৃত কনডম দেখেও তার একই দর্শন অনুধাবন হয়। এরপর তার বক্তব্য, রাস্তায় অনেক ভাসমান পতিতাকে সে খদ্দেরের সাথে দরদাম করতে দেখেছে। সর্বশেষ তার বক্তব্য- যেহেতু এক শ্রেণীর লোকের যৌনতার প্রয়োজন হচ্ছে, কিন্তু ফ্লাটের সামর্থ নাই। আবার আরেক শ্রেনীর নারীরও খদ্দের প্রয়োজন আছে, তাই ঢাকা শহরে কিছু পতিতাপল্লী তৈরী করে দিলেই সমস্যা চুকে যায়। (https://womenchapter.com/views/21417)

আমি লেখিকার যুক্তিতর্ক খণ্ডনে যাবো না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, নারীবাদী পত্রিকাগুলো কেন পতিতাবৃত্তি পেশার পক্ষে ? এর পেছনে কি কারণ থাকতে পারে ??

বাস্তবে আমরা জানি,
পতিতাবৃত্তি হচ্ছে নারীর জন্য চরম এক অপমানজক বিষয়। নারীকে পন্যবস্তুর মত পুরুষের দ্বারা গণভোগ করা। পতিতাদের সাক্ষাৎকার শুনলে বোঝা যায়, তারা ভয়ঙ্কর ও অনিরাপদ জীবন-যাপন করে, কত নৃশংস উপায়ে নির্যাতিত হয়। তবু কেন নারীবাদীরা পতিতাবৃত্তির পক্ষে বলে ??

এর অনেক কারণ থাকতে পারে। একটি হতে পারে, নারীবাদীরা অধিকাংশ ঐ পেশাভূক্ত নারী অথবা কোন এক সময় এ পেশায় সময় দিয়েছে । এরা লেজকাটা শেয়ালের মত, তারা চায় নারীরাও তাদের মত লেজকেটে ফেলুক। এ কারণেই তারা পতিতাবৃত্তির বিস্তার চায়।

এর উদাহরণে বলা যায়, গত ২০১৫ সালের ৫ই মে তারিখে বিশিষ্ট নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিন স্ট্যাটাসে বলেছিলো-
“মেয়েটার চরিত্র খারাপ। তার মানে মেয়েটার কোনও পুরুষের সঙ্গে, যে পুরুষ তার স্বামী নয়, সেক্স হচ্ছে। এই হলো আমাদের সমাজের ‘চরিত্র খারাপ’-এর সংজ্ঞা। ছেলেদের বেলায়ও বলা হয় চরিত্র খারাপ, ছেলেদের যদি প্রচুর মেয়ে টেয়ে নিয়ে সেক্স করার অভ্যেস থাকে। সেক্সের মতো স্বাভাবিক, সুস্বাদু এবং প্রয়োজনীয় জিনিস চরিত্র খারাপের উদাহরণ হিসেবে কী করে আসে, বুঝিনা। যদি বলা হয়, এমন সমাজই আমরা তৈরি করেছি, যে সমাজে স্বামী- স্ত্রীর সঙ্গমটাই বৈধ সঙ্গম, বাকি সব অবৈধ, তবে বলবো, সমাজ আমরাই তৈরি করি, সমাজ আমরাই ভাঙি। সমাজের পুরোনো নিয়ম-নীতি তো আমরা ভাঙতে ভাঙতেই এগোই। পুরোনো অনেক নিয়ম, যা না মানলে বিতিকিচ্ছিরি কাণ্ড হতো একসময়, এখন মানলেই বরং তা হয়। আমার মতে একটা মানুষের, পুরুষ বা নারী উভয়ের ক্ষেত্রেই, চরিত্র খারাপ মানে, মানুষটা লোভী, চুরি করে, মিথ্যে কথা বলে, ডাকাতি করে, অন্যকে ঠকায়, অন্যের সঙ্গে প্রতারণা করে, দূর্নীতি করে, নিষ্ঠুরতা করে, মানুষ খুন করে। ‘চরিত্র খারাপ’ এর প্রচলিত সংজ্ঞাটা অচিরে বদলানো দরকার।” (http://archive.is/GrAdn)

আরেকটি কারণ হতে পারে,
নারীবাদীরা চায় সমাজে পারিবারিক বন্ধনগুলো ভেঙ্গে যাক। আর পারিবারিক বন্ধন ভাঙ্গার সাথে সমাজে পতিতালয় বৃদ্ধির সঙ্গে একটা সমানুপাতিক সম্পর্ক আছে। এ সম্পর্কে কলকাতার মুভি ‘রাতের রজনীগন্ধা’য় এক পতিতার (চরিত্র: কমলিকা ব্যানার্জি) একটা ডায়লগ ছিলো- “ঐ শালারাই (খদ্দের) তো আমাদের লক্ষী, বুঝলি। ওদের জন্যই তো আমাদের খাবার জোটে। আমি তো প্রতিদিন ভগবানকে বলি- ভগবান ! ভদ্রলোকেদের (কলকাতার হিন্দু খদ্দের) ঘরে আরেকটু অশান্তি বাড়াও। ভদ্রঘরের বউরা যত অশান্তি বাড়াবে, আমাদের আয় তত বাড়বে।”

আরেকটা কারণ থাকতে পারে-
ধর্মের বিরুদ্ধচারণ। ধর্মে বলা আছে- নারী যেন বহুগামী না হয়। এর একটি কারণ- নারী বহুগামী হলে সন্তানের প্রকৃতপিতা খুজে পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু নারীবাদীরা চায় নারীরা যেন এক পুরুষের সীমানা থেকে বের হয়ে বহুগামী হয়। আর সমাজে বহুগামী নারীর একমাত্র প্রকৃষ্ট উদহারণ হলো পতিতারা। হয়ত বহুগামী নারীর দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতেই নারীবাদীদের পতিতাবৃত্তির পক্ষ অবলম্বন।

পতিতাবৃত্তির সামাজিক ফলাফল কখনই ভালো না। পারিবারিক বন্ধন নষ্ট, দূরারোগ্য রোগ বৃদ্ধি, জারজ প্রজন্ম বেড়ে যাওয়া, সমাজিক ভারসাম্য ধ্বংস, পরকীয়া, নারী পাচার-বাণিজ্য, শিশু নিপীড়ন-ধর্ষণ, সমাজে অরাজকতা বৃদ্ধি, নারীর চরম অপমানসহ এমন কোন সমস্যা নেই যা পতিতাবৃত্তি থেকে সৃষ্টি হয় না। তারপরও যখন নারীবাদীরা পতিতাবৃত্তির পক্ষে বলে তখন স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন উঠে, “আচ্ছা! নারীবাদীরা কি সত্যিই সমাজের ভালো চায় ?”

সেলফি আসক্তি, আমাদের করণীয়

বর্তমান সময়ে সেলফি-আসক্তি অনেকটা মনোরোগের পর্যায়ে চলে গেছে। মনস্তত্ববিদগণ এভাবেই তা ব্যাখ্যা করছেন। সেলফির বিচিত্র রূপ ও ব্যাপক বিস্তার সামনে রাখলে তাদের ব্যাখ্যার যথার্থতা বেশ বুঝে আসে।
.
কিছু কিছু সেলফি আছে যা সরাসরি নিজের প্রাণকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা। হিংস্র প্রাণীর সাথে সেলফি, চলন্ত ট্রেনের সামনে সেলফি, পাহাড়ের চূড়ার প্রান্তে পা ঝুলিয়ে সেলফি, আরো কত রকমের সেলফি যে মানুষ তুলছে এবং দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আহত-নিহত হচ্ছে তা একজন সাধারণ পত্রিকা-পাঠকেরও অজানা নয়। এখন তো সেলফির দৌরাত্ম্য ইবাদত-বন্দেগী পর্যন্তও পৌঁছে গেছে। মুসলমানের বহু কাঙ্ক্ষিত ইবাদত হজ্বে ও তাওয়াফেও সেলফির ছড়াছড়ি!
.
সেলফির মূল কথাটি হচ্ছে নিজেকে বা নিজের বিশেষ কোনো মুহূর্তকে নিজে ধারণ করা। এই ধারণের প্রেরণা কী, উদ্দেশ্য কী? সাধারণত তা হয় মনের ইচ্ছা পূরণ, ক্ষণিকের আনন্দ এবং অন্যের কাছে নিজেকে উপস্থাপন ।
.
মনের সকল ইচ্ছা পূরণ কি মানুষের জন্য কল্যাণকর? আর মানুষের কাছে সবকিছু উপস্থাপন করে কী লাভ? নিজেকে ও নিজের সকল মুহূর্তকে উপস্থাপন করতে হবে একমাত্র আল্লাহর কাছে। কুরআন মাজীদ আমাদের শেখাচ্ছে, ‘আমার সালাত, আমার ইবাদত, আমারজীবন, আমার মরণ আল্লাহর জন্য, যিনি রাব্বুল আলামীন।’
.
আমারহজ্ব, আমার তাওয়াফ তো মানুষের জন্য নয়, আমার নিজের ইচ্ছা পূরণ বা বিনোদনের জন্যও নয়, এ তো আল্লাহকে সন্তুষ্ট করবার জন্য। আমি কি চিন্তা করেছি, সেলফির মতো সামান্য একটি ইচ্ছাপূরণের দ্বারা আমার ইবাদতটিই মাটি হয়ে যাচ্ছে? সেলফির দ্বারা তো ইবাদতের স্বরূপই বদলে যায়। বলুন তো ইবাদতের মধ্যে যে আল্লাহর বান্দা সেলফিগ্রস্ত হয় তার উদ্দেশ্য কি ইবাদত থাকে, না ইবাদতের অঙ্গ-ভঙ্গি? সে তো ইবাদত করছে না, ছবি তোলার জন্য ইবাদতের অঙ্গ-ভঙ্গি করছে। কিংবা অন্তত আল্লাহকে ভুলে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই প্রাণহীন অঙ্গ-ভঙ্গির কী মূল্য তাহলে আল্লাহর কাছে হতে পারে? কুরআন মাজীদের এক জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
لَیْسَ الْبِرَّ اَنْ تُوَلُّوْا وُجُوْهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَ الْمَغْرِبِ وَ لٰكِنَّ الْبِرَّ مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ وَ الْمَلٰٓىِٕكَةِ وَ الْكِتٰبِ وَ النَّبِیّٖنَ وَ اٰتَی الْمَالَ عَلٰی حُبِّهٖ ذَوِی الْقُرْبٰی وَ الْیَتٰمٰی وَ الْمَسٰكِیْنَ وَ ابْنَ السَّبِیْلِ وَ السَّآىِٕلِیْنَ وَ فِی الرِّقَابِ وَ اَقَامَ الصَّلٰوةَ وَ اٰتَی الزَّكٰوةَ وَ الْمُوْفُوْنَ بِعَهْدِهِمْ اِذَا عٰهَدُوْا وَ الصّٰبِرِیْنَ فِی الْبَاْسَآءِ وَ الضَّرَّآءِ وَ حِیْنَ الْبَاْسِ اُولٰٓىِٕكَ الَّذِیْنَ صَدَقُوْا وَ اُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْمُتَّقُوْنَ.
পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফিরানোতে কোনো পুণ্য নেই; পুণ্য (বান তো সে) যে, ঈমান এনেছে আল্লাহর উপর, শেষ দিবসের উপর, সমস্ত ফেরেশতা, কিতাবসমূহ ও নবীগণের উপর… -সূরা বাকারা (২) : ১৭৭
.
ঈমানদারের জন্যও এ আয়াতে এই গভীর শিক্ষা আছে যে, তার ইবাদত-বন্দেগীও যেন শুধু অঙ্গভঙ্গিতে পর্যবসিত না হয়।
.
আরেক জায়গায় মুমিনদের লক্ষ্য করে ইরশাদ হয়েছে-
لَنْ یَّنَالَ اللهَ لُحُوْمُهَا وَ لَا دِمَآؤُهَا وَ لٰكِنْ یَّنَالُهُ التَّقْوٰی مِنْكُمْ كَذٰلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمْ لِتُكَبِّرُوا اللهَ عَلٰی مَا هَدٰىكُمْ وَ بَشِّرِ الْمُحْسِنِیْنَ.
আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না তার (কুরবানীর প্রাণীর) গোশত ও রক্ত; বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া…। -সূরা হজ্ব (২২) : ৩৭
.
অথচ কুরবানীর মতো ইবাদতও যারা ভিডিও করে থাকেন তারা কি কুরবানীর পশুর রক্ত-মাংসের মধ্যেই বাধা পড়ে গেলেন না?
.
আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ইবাদতের প্রাণ হচ্ছে ‘যিকরুল্লাহ’আল্লাহর স্মরণ। একারণেই সালাত ও কুরবানী, হজ্ব ও তাওয়াফ সব ক্ষেত্রেই কুরআন-সুন্নাহয় ‘আল্লাহর স্মরণ’কথাটি উল্লেখিত হয়েছে। ছবি তোলা, ভিডিও করা ইত্যাদির মাধ্যমে ইবাদতের এই বড় অনুষঙ্গটি যে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা তো বলাই বাহুল্য।
.
দ্বিতীয়ত, সেলফি যদি হয় বিনোদন তাহলে ইবাদত-বন্দেগীতে সেলফিগ্রস্ততার দ্বারা কি ইবাদতকে বিনোদনে পরিণত করা হয় না?
.
দ্বীন-ধর্মকে ক্রীড়া ও বিনোদনে পর্যবসিত করা তো অনেক বড় অপরাধ।
.
তৃতীয়ত, সেলফিতে যখন যোগ হয় লোকের বাহবা পাওয়ার চিন্তা তখন এর মাধ্যমে ইবাদত রিয়াগ্রস্ত হয়, যাকে হাদীস শরীফে বলা হয়েছে ‘শিরকে আসগর’।
.
চিন্তা করলে দেখা যায়, উপরের যে কোনো একটি বিষয়ই ইবাদতকে বিনষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। কাজেই সামান্য ইচ্ছা পূরণের জন্য হজ্ব-কুরবানীর মতো বাঞ্ছিত ও প্রতীক্ষিত ইবাদতকে নষ্ট করে ফেলা কত বড় নির্বুদ্ধিতা! দেখুন, শয়তান কত সহজে আমাদের বহু আকাক্সিক্ষত ইবাদতগুলো মাটি করে দেয়!
.
এরপর আসুন ঝুঁকিপূর্ণ সেলফি প্রসঙ্গে। যে সেলফির জন্য তরুণ-যুবকেরা জীবনের ঝুঁকি পর্যন্ত নিয়ে ফেলছেন তারা হয়তো সচেতন নন যে, এভাবে তারা একটি গর্হিত কাজে লিপ্ত হচ্ছেন। শরীয়তের বিধানে এটা বৈধ নয়। এ তো উপযুক্ত কারণ ছাড়া নিজেকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করা, যা পরিষ্কার নিষেধ। হাদীস শরীফে তো মৃত্যুর কামনা করতেও নিষেধ করা হয়েছে তাহলে নিজেকে মৃত্যু-ঝুঁকির মুখোমুখি করার তো প্রশ্নই আসে না।
.
মানুষের জীবন অতি মূল্যবান। এই একটিমাত্র জীবনকে কাজে লাগিয়ে যেমন মানুষকে আখিরাতের চিরস্থায়ী মুক্তি ও সাফল্য অন্বেষণ করতে হয় তেমনি পৃথিবীর অনেক এবং অনেকের দায়-দায়িত্বও পালন করতে হয়। তাহলে অর্থহীন কাজে এই জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলা মর্মান্তিক অবিবেচনা নয় কি? হায়! মানুষের প্রকাশ্য দুশমন শয়তান যে মানুষকে কতভাবে প্ররোচিত ও ক্ষতিগ্রস্ত করে!
.
প্রিয় বন্ধু! আপনি কি একজন সাহসী যুবক? আপনি কি আনন্দ পান অন্যের চেয়ে এগিয়ে যাওয়া বা আলাদা হওয়ার মধ্যেই? তাহলে আপনাকে স্বাগতম! ইসলাম আপনাকে স্বাগত জানায় অর্থহীন কাজে নয়, অর্থপূর্ণ কর্মের বিস্তৃত অঙ্গনে-মানবসেবায়, জাতিগঠনে, ন্যায়ের বিস্তারে, অন্যায়ের প্রতিরোধে। দেখুন, একজন বহু সাধ্য-সাধনা করে তেলতেলে মুলিবাঁশ বেয়ে উঠে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করল। এই কর্মে সে এমনই অভাবিতপূর্ব সাফল্য অর্জন করল যে, শুধু মাটির মানুষ নয়, গাছের বানরও অভিভূত হয়ে গেল; বলুন তো এতে তার কী প্রাপ্তি ঘটল?
.
তাই আজেবাজে কাজ নয়, এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্র হচ্ছে জ্ঞান-প্রজ্ঞা ও কর্ম-কুশলতা। চলুন না, এই সব ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে যাই। আর এগিয়ে যাই একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে সন্তুষ্ট করবার জন্য, একমাত্র যাঁর কাছেই আমাদের সকল কর্ম ও মুহূর্ত থাকবে চির অক্ষয়।
.
— গোলাম এলাহী
.
[ মাসিক আলকাউসার » জুমাদাল উখরা ১৪৩৮ . মার্চ ২০১৭ ]

ঈদ পোষাকের নাম বাজিরাও মাস্তানি, কিন্তু বাঙালী মুসলমান কি জানে এর অর্থ কি ?

ঈদের মাকের্টে এক জনপ্রিয় পোষাকের নাম হচ্ছে ‘বাজিরাও মাস্তানি’। একটা ইন্ডিয়ান মুভির নাম থেকে এই নাম এসেছে। কিন্তু বাংলার মুসলিম জনগণ কি জানে, কোন অর্থ প্রকাশ করছে এই নামটি ?
‘বাজিরাও মাস্তানি’ দুটো শব্দ নিয়ে তৈরী, ১) বাজিরাও, ২) মাস্তানি।
বাজিরাও কে :
বাজিরাও বলা হয় মারাঠাদের মন্ত্রীকে (পেশওয়া)। মারাঠা নেতারা অনেকে শূদ্র ছিলো বলে তারা মন্ত্রী হিসেবে ব্রাহ্মণ নিয়োগ করতো। বাজিরাও ছিলো সেই মারাঠাদের মন্ত্রী। মারাঠা বলতে অনেকে না চিনতে পারেন, তাদের জন্য বলছি, শিশুবেলার সেই ছড়া-“খোকা ঘুমালো, পাড়া জুড়ালো, বর্গী এলো দেশে। বুলবুলিতে ধান খেয়েছে, খাজনা দিবো কিসে?”-এই বর্গী শব্দ দ্বারা মারাঠাদের বুঝানো হয়, যাদের কাজ ছিলো ডাকাতি করা। মারাঠারা ছিলো কট্টর মুসলিম বিদ্বেষী। মুনীর চৌধুরীর লেখা রক্তাক্ত প্রান্তর নামক নাটকে মারাঠাদের পরিচয় পাওয়া যায়- যারা যবননিধন (মুসলিম হত্যা) করতে আশ্রমে অস্ত্র শিক্ষা নিতো।
মাস্তানি কে :
মুভিতে ‘বাজিরাও’ এর প্রথম স্ত্রী ছিলো ‘কাশীবাঈ’ (প্রিয়াঙ্কা চোপড়া এই চরিত্রে অভিনয় করেছে)। দ্বিতীয় স্ত্রী মাস্তানি ছিলো ‘ছত্রসাল’ নামে এক হিন্দু রাজার অবৈধ সন্তান। ‘ছত্রসাল’ এর সভায় এক ইরানী নর্তকী ছিলো, তার গর্ভে ছত্রসাল এর ঔরসে মাস্তানির জন্ম হয়। পরবর্তীতে বাজিরাও এর সাথে ছত্রসালের সম্পর্ক গড়ে উঠলে ছত্রসাল মাস্তানিকে বাজিরাওয়ের নিকট উপহার দেয়। উইকিপিডিয়ায় Bajirao I আর্টিকেলে বলা হয়েছে, Bajirao also took Mastani as a mistress. মিসট্রেস অর্থ হলো রক্ষিতা বা বাঁধা পতিতা। অর্থাৎ মাস্তানির মা ছিলো এক বেশ্যা, তার মেয়েও ছিলো বেশ্যার ঘরের বেশ্যা।
বাজিরাও মাস্তানি মুভির উদ্দেশ্য:
‘বাজিরাও মাস্তানি’ সিনেমাটি আসলে তৈরী করা হয়েছে ভারতের হিন্দুদের মুসলিম হত্যায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য। সিনেমার একটি দৃশ্যে দেখানো হয়, রণবীর সিং গণেশের মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে তার হাতের আঙুল কেটে রক্ত বের করছে। এসব দৃশ্য রাখা হয়েছে উগ্র হিন্দুদের তাতিয়ে তোলার জন্য, যার পরবর্তী স্টেপ মুসলিমনিধনে দাঙ্গা।
আর সেই কুখ্যাত ‘বাজিরাও মাস্তানি’ নাম নিয়ে বানানো ঈদের জামা পড়ছে মুসলমানরা, তাও আবার নিজেদের ধর্মীয় উৎসবে। বুঝুন অবস্থা, মুসলমান জাতি কতটাই না অবুঝ।

Noyon Chatterjee

মূর্তিপূজা নয় ; শুধু মূর্তি আর ভাস্কর্য রাখা সম্পর্কে ইসলাম কি বলে!

ভেবেছিলাম মূর্তি নিয়ে আর লিখবো না!কিন্তু না না লিখে কোনো উপায় দেখছি না!কিছুদিন ধরে দেখতেছি কিছু বন্ধু বুজে হোক আর না বুজে হোক কিছু তথাকথিত সুশীল আর নাস্তিকদের ফাদে পা দিয়ে মূর্তিকে ভাস্কর্য্য বলে হালাল করার জন্য চেষ্ঠা করছে!
আসুন আগে দেখে নেই মূর্তিপূজা নয় ; শুধু মূর্তি আর ভাস্কর্য সম্পর্কে ইসলাম কি বলে!

তোমরা পরিহার কর অপবিত্র বস্ত্ত অর্থাৎ মূর্তিসমূহ এবং পরিহার কর মিথ্যাকথন।’ -সূরা হজ্জ : ৩০

এইখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে মূর্তি বা ভাস্কর্য্যকে পরিহার করতে!শুধু মূর্তিপূজাকে নয়!আরো আছে যেখানে মূর্তি/ভাষ্কর্যকে হারাম করা হয়েছে!

“আল্লাহ ও তার রাসূল মদ ও মূর্তি এবং শুকর ও মৃত প্রাণী বিক্রি করা হারাম করেছেন।’ -সহীহ বুখারী হা. ২২৩৬

শুধু মূর্তি নয় এমনকি কোনো প্রানীর ছবি পর্যন্ত নিষিদ্ধ!

যে গৃহে কুকুর অথবা কোনো প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না। (আবু তালহা রা:. থেকে বোখারী, খ.২/পৃ. ৮৮০)।

মূর্তিকে হারাম করেই ক্ষান্ত হননি রিতীমতো মূর্তিকে ভেঙ্গে ফেলার আদেশ করা হয়েছে!

‘আল্লাহ তাআলা আমাকে প্রেরণ করেছেন আত্মীয়তার সর্ম্পক বজায় রাখার, মূর্তিসমূহ ভেঙ্গে ফেলার, এবং এক আল্লাহর ইবাদত করার ও তাঁর সঙ্গে অন্য কোনো কিছুকে শরীক না করার বিধান দিয়ে। (সহীহ মুসলিম, হা. ৮৩২)

কাফের সম্প্রদায়ের দুটো বৈশিষ্ট্য হচ্ছে :
১. মিথ্যা উপাস্যদের পরিত্যাগ না করা।
২. মূর্তি ও ভাস্কর্য পরিহার না করা।

‘এবং তারা বলেছিল, তোমরা কখনো পরিত্যাগ করো না তোমাদের উপাস্যদেরকে এবং কখনো পরিত্যাগ করো না ওয়াদ্দ, সুওয়া, ইয়াগূছ, ইয়াঊক ও নাসরকে।’ -সূরা নূহ : ২৩

যারা মূর্তি বা ভাস্কর্য্য পরিহার করতে পারে না তারা কি কাফের নয়?

কুরআন মজীদে মূর্তি ও ভাস্কর্যকে পথভ্রষ্টতার কারণ হিসেবে চিহ্ণিত করা হয়েছে।

‘ইয়া রব, এরা (মূর্তি ও ভাস্কর্য) অসংখ্য মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে!’
-সূরা ইবরাহীম : ৩৬
এগুলো(মূর্তি/ভাস্কর্য) অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে।’ -সূরা নূহ :২৪

কুরআনের ভাষায় মূর্তি ও ভাস্কর্য হল বহুবিধ মিথ্যার উৎস।

“তোমরা তো আল্লাহর পরিবর্তে উপাসনা কর (অসার) মূর্তির এবং তোমরা নির্মাণ কর ‘মিথ্যা’। -সূরা আনকাবুত : ১৭

এবার আসি প্রতিকৃতি(ভাস্কর্য/মূর্তি/চিত্রকর্ম) নির্মানকারীদের সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?

“প্রতিকৃতি তৈরিকারী (ভাস্কর, চিত্রকর) শ্রেণী হল ওইসব লোকদের অন্তর্ভুক্ত যাদেরকে কিয়ামত-দিবসে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি প্রদান করা হবে।’ -সহীহ বুখারী হা. ৫৯৫০

“এই প্রতিকৃতি নির্মাতাদের (ভাস্কর, চিত্রকরদের) কিয়ামত-দিবসে আযাবে নিক্ষেপ করা হবে এবং তাদেরকে সম্বোধন করে বলা হবে, যা তোমরা ‘সৃষ্টি’ করেছিলে তাতে প্রাণসঞ্চার কর!’
-সহীহ বুখারী হা. ৭৫৫৭, ৭৫৫৮;

“উল্কি অঙ্কণকারী ও উল্কি গ্রহণকারী এবং প্রতিকৃতি প্রস্ত্ততকারীদের (ভাস্কর, চিত্রকরদের) উপর লানত করেছেন। -সহীহ বুখারী হা. ৫৯৬২

প্রতিকৃতি(মূর্তি/ভাস্কর্য)নির্মানকারীকে জালেম বলা হয়েছে!

“ওই লোকের চেয়ে বড় জালেম আর কে যে আমার সৃষ্টির মতো সৃষ্টি করার ইচ্ছা করে। তাদের যদি সামর্থ্য থাকে তবে তারা সৃজন করুক একটি কণা এবং একটি শষ্য কিংবা একটি যব! -সহীহ বুখারী হা. ৫৯৫৩

এবার তো মূর্তি /ভাস্কর্য্য সব ইসলামে নিষিদ্ধ বুজলাম!কিছু আবাল আসবে, বলবে এইসব ভাস্কর্য্য/মূর্তি পূজা করার উদ্দেশ্যে তৈরী হলেই হারাম;অন্যথায় নয়!আসুন দেখে আসি মূর্তিপূজার ইতিহাস!

” নূহ আ.-এর সম্প্রদায়ের কিছু(পাঁচজন)পুণ্যবান লোক মৃত্যুবরণ করলে তখন শয়তান তাদের সম্প্রদায়কে এই কুমন্ত্রনা দিয়েছে যে, তাদের স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলোতে মূর্তি স্থাপন করা হোক এবং তাদের নামে সেগুলোকে নামকরণ করা হোক। লোকেরা এমনই করল। ওই প্রজন্ম যদিও এই সব মূর্তির পূজা করেনি কিন্তু ধীরে ধীরে প্রকৃত বিষয় অস্পষ্ট হয়ে গেল এবং পরবর্তী প্রজন্ম তাদের পূজায় লিপ্ত হল। -সহীহ বুখারী হাদীস : ৪৯২০

ইতিহাসে আমরা দেখতে পেলাম মূর্তিগুলো যারা নির্মাণ করেছিল তারা কিন্তু উপাসনার উদ্দেশ্যে করেনি।তারাও পূজা করার নিয়্যত করেনি। কিন্তু শয়তান তাদের এ কাজটিকে তাদের কাছে সুশোভিত করেছে।

জানি জানি এখনো সন্তোষ্ট হোননি!আপনাদের পেটে হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তাই না?মূর্তি ও ভাষ্কর্য্য এক না!সেটাই তো বলতে চাচ্ছেন?
ডিকশনারী আর অভিধান তো বুজেন?এগুলো তো আর আজকালকের মধ্যে লেখা হয় নি!খুলে দেখুন না কি লেখা আছে!

সংসদ বাংলা অভিধান অনুসারে মূর্তি এবং ভাস্কর্য একই জিনিস; দুটির মাঝে শাব্দিক পার্থক্য ছাড়া কোনো পার্থক্য নেই।

মূর্তি অর্থ ছায়া বা এমন আকৃতি-শরীর, যার ছায়া আছে।-503
ভাস্কর্য অর্থ ধাতু প্রস্তর প্রভৃতি দ্বারা মূর্তি নির্মাণশিল্প!-468

তবে অক্সফোর্ড ডিকশনারী অনুযায়ী মূর্তি বা ভাস্কর্য্য একই জিনিস হলেঔ সামান্য পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়!

ভাস্কর্য অর্থ ঃ Sculpture (স্কালপচার)।
যে আকৃতি বা ছবি খোদাই করে তৈরী করা হয়, তাকে ভাস্কর্য বলা হয়। যেমন বলা হয় ‘ভাস্কর্য বিদ্যা’ এর অর্থ হল ঃ The art of carving বা খোদাই বিদ্যা।
অন্যদিকে ,
মূর্তি অর্থ হল ছায়া। অর্থ্যাৎ এমন আকৃতি বা শরীর, যার ছায়া আছে।
– সংসদ বাংলা অভিধান পৃষ্ঠা- ৫০৩
ভাস্কর্য ও মূর্তির আভিধানিক অর্থে স্পষ্ট পার্থক্য দেখা গেল। ফলাফল দাড়াল, যে সকল আকৃতি খোদাই করে তৈরী করা হয়, তা হল ভাস্কর্য। রৌদ্র বা আলোর বিপরীতে এর ছায়া পড়ে না। রৌদ্রে বা আলোর বিপরীতে যেসব আকৃতির ছায়া প্রকাশ পায়, তা হল মূর্তি। বিভিন্ন অভিধানে মোটামোটি এভাবেই বলা হয়েছে!

পূজা করা হলেই মূর্তি হবে আর পূজা না করা হলে ভাস্কর্য হবে এ কথা ঠিক নয়। সুতরাং মূর্তি কিংবা ভাস্কর্যের পূজা করা হোক না হোক উভয়টি
ইসলামে নিষিদ্ধ!

তথাকথিত সুশীলরা খুব ভাল করেই জানেন যে, ভাস্কর্য ও মূর্তির মধ্যে আভিধানিক পার্থক্য কি? কিন্তু তারা ওটা নির্মাণের পক্ষে। আর মাদ্রাসার ছাত্ররা যেহেতু এর মধ্যকার পার্থক্যগুলো বুঝে না, তাই তাদেরকে ভুল বুঝানো যে, ওটি মূর্তি নয়। কাজেই তোমরা থেমে যাও। যা করেছ তা ভুল ছিল। তোমরা বোকা।চলেন কিছু উদাহরন দেই-

অনেকে হয়তো লেলিনের মূর্তির কথা শুনেছেন!এমনিভাবে যখন সাদ্দামের আকৃতি টেনে নামানো হল, তখন সকলে বলল, “সাদ্দামের মূর্তি নামিয়ে ফেলা হয়েছে।” তখন কেহ ভাস্কর্য বলেছে বলে শুনেছেন? আরো আছে-ফেরআউনের মূর্তি, আব্রাহাম লিঙ্কনের মূর্তি ইত্যাদি। এগুলো থেকে প্রমাণ পাওয়া গেল যে, ওই আকৃতিগুলোর ছায়া ছিল ও খোদাই করে নির্মিত নয় বলে ওগুলো মূর্তি;ভাস্কর্য্য নয়!যেমন-হাইকোর্টের পিছনে বসানো থেমিসের গ্রীক মূর্তি!

কিছু নামধারী মুসলিম থেকেও ব্যাপারটা আরো একটু পরিষ্কার হওয়া যাক! মুক্তমনা ব্লগ আর বিতর্কিত উইমেন চ্যাপ্টারের লেখক
হাসান মাহমুদের মতে-
নবীজি (সা.) মূর্তি-ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে সেটা নাকি কোরানের আয়াতের বিরুদ্ধে যেতো। আরাধনা করলে সেটা হয় প্রতিমা(হা হা!মূর্তি নয়!) আর না করলে হয় ভাস্কর্য (মূর্তি)। ইসলাম প্রতিমার বিরুদ্ধে, ভাস্কর্য ও মূর্তির বিরুদ্ধে নয়!

ইসলাম সংস্কারে যিনি রাজা রামমোহন রায় আর ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর হতে চান তিনি কি জানেন না ইসলাম হচ্ছ পৃথিবীর একমাত্র ধর্ম যেটি সৃষ্টির আদিলগ্ন থেকে অবিকৃত আছে!তবে এই ব্লগার আর যাই হোক একটা বিষয় স্বীকার করে গেছেন মূর্তি আর ভাস্কর্য একই জিনিস!
আর মূর্তি আর ভাস্কর্য যে ইসলামে নিষিদ্ধ সেটাতো কুরআন আর হাদীস থেকে জানতেই পারলেন!
এসব ব্লগারদের জন্যই আল্লাহর বানী-

“যারা দীন সম্পর্কে নানা মতের সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়, তাদের কোন দায়িত্ব তোমার নয়”। — (সূরা আল-আন‘আম: ১৫৯)

(নিম্নোক্ত অংশটি লেখার সময় -আব্দুল্লা শহীদ আব্দুর রহমান ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি)

কিছু দিন আগে হাসান মাহমুদ নামের এক ব্যক্তি দাবী করেছেন ইসলামে নাকি শুধু প্রতিমা নিষিদ্ধ;মূর্তি/ভাস্কর্য বৈধ!আর এই লেখাটি কিছূ দালাল মিডিয়াও প্রকাশ করেছে!
এখন সকল ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিকদের হাতিয়ার এসব প্রশ্ন!আমরা দেখবো কতটা বানোয়াট আর দুর্বল হাদীস দিয়ে সে এই দাবী করেছে!
যদিও এই লেখকের অনেক আগেই হুমায়েন আহমেদ একই দাবী করেছিলো 2005 এ “এখন আমরা কোথায় যাবো?কার কাছে যাবো?”
শিরোনামে যেটি প্রথম আলোয় প্রকাশ হয়েছিলো!লেখক হাসান মাহমুদ শুধু “মূর্তি বিড়ম্বনার ইসলামি আঙ্গিক” শিরোনামে বর্তমান প্রেক্ষাপটের সাথে কিছু তথ্য যুক্ত করেছেন!

শুরুতে যেনে নেই কে এই হাসান মাহমুদ! বাংলাদেশে নাস্তিকদের প্রথম মাদারব্লগসাইট মুক্তমনার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং মুক্তমনার উপদেষ্ঠা মন্ডলীর সদস্য !মুক্তমনায় তার আইডি নাম- ফতেমোল্লা!

হাসান মাহমুদ বা ফতেমোল্লা রিভার্স চরিত্র, সেটা জানার জন্য মুক্তমনায় তার কিছু ইংরেজী আর্টিকেলের শিরোনাম খেয়াল করুন:
১) ‘sharia – the most dangerous book in the world’
২) ‘sharia, the most dangerous law in the world – 2’
৩) ‘sharia : the anti – hero’
৪) ‘sharia : the women-eater’
৫) ‘sharia – the root cause of violence’
৬) ‘sharia – out of context’

এবার আসি তাদের যুক্তিগুলোতে!প্রথমে তিনি ঊল্লেখ করেছেন মহানবীর মৃত্যুর শত বছর পর জন্ম নেয়া মহানবীর (সা.) প্রথম জীবনীকার ইবনে ইসহাকের লেখা দি লাইফ অব মোহাম্মদ গ্রন্থের সেই বিতর্কিত ঘটনাটি !

আমাদের মহানবী (সা.) কাবা শরিফের ৩৬০টি মূর্তি অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। দেয়ালের সব ফ্রেসকো নষ্ট করার কথাও তিনি বললেন। হঠাত তাঁর দৃষ্টি পড়ল কাবার মাঝখানের একটি স্তম্ভে। যেখানে বাইজেন্টাইন যুগের মাদার মেরির একটি অপূর্ব ছবি আঁকা। নবীজী (সা.) সেখানে হাত রাখলেন এবং বললেন, ‘এই ছবিটা তোমরা নষ্ট কোরো না।’ কাজটি তিনি করলেন সৌন্দর্যের প্রতি তাঁর অসীম মমতা থেকে।

যদি ইবনে ইসহাকের বর্ণিত তথ্য সত্য হয়ে থাকে তাহলে জানার ইচ্ছা জাগে না? যে ছবিটি রাসূলুল্লাহ সা. রেখে দিলেন সেটি কোথায় গেল? কোন মাদ্রাসার ছাত্র সেটা নষ্ট করে দিল?
ইসহাক তো কোনো সাহাবী ছিলো না!তাছাড়া সহীহ হাদিসইতো নবীজীর প্রথম ও বিশ্বস্ত জীবনী!তাহলে ঘটনাটি কোনো সহী হাদীসেই থাকার কথা!

” রাসূল (সাঃ) বলেছেন- আমি তোমাদের জন্য দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি যতদিন আকড়ে ধরবে ততদিন পথভ্্রষ্ট হবে না। একটি হলো আল্লাহর কিতাব এবং অপরটি আমার সুন্নাহ্ (মিশকাত-১ম খন্ড হাদিস নং-১৭৭)”

নবীজি বলেন নি ওনার জীবনী রেখে যাচ্ছে যেটা ইসহাক লিখেছে!
সেখানে ভুল থাকতেই পারে!তাই বলে কুরআন হাদীস বাদ দিয়ে কারো বইকে মুসলমান রেফারেন্স হিসাবে নিতে পারে না!মুসলমানগণ ইবনে ইসহাকের তথ্য গ্রহণ করবেন, না আল্লাহর রাসূল সা. এর নির্দেশ মেনে চলবেন?

তারপরে তিনি জানালেন শেখ সাদীর মাজারের সামনেই একটি মর্মর পাথরের ভাস্কর্য আছে! ইসলামের দুজন মহান সুফিসাধক জালালুদ্দীন রুমি;ফরিদউদ্দীন আত্তার (নিশাপুর) ইরানে তাদের মাজারের সামনেও তাঁর আবক্ষমূর্তি আছে।
শেখ সাদী, রূমী, আত্তারের কবরে যে সকল মূর্তি আছে সেগুলো তারা নিজেরা স্থাপন করেননি। করার জন্য কাউকে নির্দেশও দিয়ে যাননি।

আপনারা অনেকে বলেছেন, ইরানে মূর্তি আছে, ইরাকে আছে, লিবিয়াতে মূর্তি আছে, ইন্দোনেশিয়াতে মূর্তি আছে। আরো অনেক মুসলিম দেশে আছে। তাহলে আমাদের দেশে থাকলে ক্ষতি কী?

বিভিন্ন মুসলিম দেশে যে সকল মূর্তি স্থাপিত আছে, সেগুলো তাদের সমস্যা। দায় তাদের। এর সাথে ইসলামের কী সম্পর্ক? ইসলামের সম্পর্ক হল, আল্লাহর বাণী ও রাসূলের আদর্শের সাথে। কুরআন ও সুন্নাহতে যা পাওয়া যাবে সেটা ইসলাম বলে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। কোন মুসলমানের আচার-আচারণ, কাজ-কর্ম ইসলাম নয়। যদি তা কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা অনুমোদিত হয়, তবে ভিন্ন কথা।যেমন-কোনো মুসলিম দেশের লোক যদি দাড়ি না রাখে তার মানে তো এই নয় দাড়িকে হারাম করা হয়েছে!
মুসলিম দেশে কোন খারাপ বস্তু থাকলে সেটা গ্রহণ করা যায়, কিন্তু কোন ভাল বিষয় থাকলে তা গ্রহণ করা যায় না। সেটা যতই জনকল্যাণ মূলক হোক। এটাই মনে হয় আপনাদের মূলনীতি। অনেক মুসলিম দেশে শরীয়াহ আইন চালু আছে;সেখানে প্রকাশ্যে বেপর্দা হয়ে চলাফেরা করা নিষেধ;মদ পান করা;বিবাহ বর্হিভূত অবৈধ সম্পর্ক করা ; সুদ খাওয়া; নারীকে সর্বোচ্চ ক্ষমতায় বসানো হয় না; গণতন্ত্র নেই। বরং রাজতন্ত্র আছে!এগুলো গ্রহণ করা যায় না?
গ্রহণ করার কথা বলাও অপরাধ। আর মুসলিম দেশে যদি ইসলাম পরিপন্থী কিছু থাকে তাহলে সেটা আমাদের অনুসরণ করতে হবে?
আপনাদের ব্যাপারে কী তাহলে আল্লাহর সে বাণীই প্রযোজ্য, যেখানে তিনি বলেছেন ঃ

“তারা সঠিক পথ দেখলেও তাকে পথ হিসাবে গ্রহণ করবে না। আর ভ্রান্ত পথ দেখলে পথ হিসাবে গ্রহণ করবে। এটা এ জন্য যে, তারা আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করছে এবং সে সম্পর্কে তারা ছিল অমনোযোগী।” আল আরাফ -146

তারপরে তিনি এই ঘটনাটি বলেন-
৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দে হজরত ওমর (রা.) জেরুজালেম জয় করেন। প্রাণীর ছবিসহ একটি ধুপদানি তাঁর হাতে আসে। তিনি সেটি মসজিদ-ই-নব্বীতে ব্যবহারের জন্য আদেশ দেন।

উমার রা. ধুপদানিটি মসজিদে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন প্রাণীর ছবিটি প্রদর্শনের জন্য নয়। ধুপদানিটি ধুপ দানের কাজে ব্যবহারের জন্য। প্রাণীর ছবি অস্পষ্ট থাকলে এ ধরনের সামগ্রী ব্যবহার করতে সমস্যা নেই।

তিনি সবক্ষেত্রে শুধু বিভিন্ন বইয়ের কাহিনী উল্লেখ করেছেন!কোনো হাদীসও নয়!একমাত্র কুরআনের যে আয়াতটি উল্লেখ করেছেন-

“তারা সোলায়মানের (আ.) ইচ্ছানুযায়ী দূর্গ, ভাস্কর্য, হাউযসদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং চুল্লির উপর স্থাপিত বিশাল ডেগ নির্মাণ করত।” (সুরা সাবা, আয়াত ১৩)

এখানে যে শব্দটির অর্থে ‘‘ভাস্কর্য’’ করা হয়েছে সেটির আরবী হল وَتَمَاثِيلَ সউদী আরব হতে প্রকাশিত এবং পরিবেশিত তাফসীরে বলা হয়েছে যে, এর ‘‘অর্থ হল ছবি, নক্সা, আকৃতি। প্রাণী ব্যতিত অন্য বস্তুসমূহের ছবি বানানো হত।এইখানে ভাস্কর্য অনুবাদ ভুল !

প্রাণী ব্যতীত যে কোন বস্তুই হোক তার ছবি, ভাস্কর্য, মূর্তি ইত্যাদি অংকন, নির্মাণ, স্থাপন ও প্রদর্শন করা যাবে। কারণ, হাদীসে যে সকল নিষেধাজ্ঞার কথা এসেছে তার সবই ছিল প্রাণীর ছবি বিষয়ে।

কেহ যদি কোন ফুল, ফল, গাছ, নদী, পাহাড়, চন্দ্র, সুর্য, ঝর্ণা, জাহাজ, বিমান, গাড়ী, যুদ্ধাস্ত্র, ব্যবহারিক আসবাব-পত্র, কলম, বই ইত্যাদির ভাস্কর্য তৈরী করে সেটা ইসলামে অনুমোদিত।যেমন-আমাদের দেশের শাপলা চত্বর!

এবার চলুন মা আয়েশার ছোট বেলার পুতুল খেলার সেই কাহিনী শুনে আসি!
আমরা সবাই জানি, হজরত আয়েশা (রা.) নয় বছর বয়সে নবীজীর (সা.) সহধর্মিণী হন। তিনি পুতুল নিয়ে খেলতেন। নবীজীর তাতে কোনো আপত্তি ছিল না, বরং তিনিও মজা পেতেন এবং কৌতুহল প্রদর্শন করতেন।

এবার জানুন প্রকৃত ঘটনা!আয়েশা রা. যখন পুতুল নিয়ে খেলতেন তখন তিনি বয়সে ছোট ছিলেন বলে ইসলামী অনুশাসন তার উপর বর্তায়নি। বিধায় রাসূল সা. তাকে পুতুল খেলতে নিষেধ করেননি।
যেমন সাত বছরের আগে নামাজ রোযাও ফরজ নয়;ছোট শিশুদের উপর ফরয গুলো প্রযোজ্য নয়!তার মানে এই নয় বড় হয়ে গেলে নামাজ রোযা করবে না! যেমন-আয়েশা রা. যখন বয়স্ক হলেন, তখন সামান্য ক্ষুদ্র ছবিও তাকে রাখতে নিষেধ করেছেন। আয়েশা রা. এর মুখেই শোনা যাক। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সা. একদিন সফর থেকে ফিরে আসলেন। আমি একটি পর্দা টানিয়েছিলাম। যাতে ক্ষুদ্র প্রাণীর ছবি ছিল। রাসূলুল্লাহ সা. যখন এটা দেখলেন, ক্রোধে তার মুখমণ্ডল বিবর্ণ হয়ে গেল। তিনি বললেন, হে আয়েশা! কেয়ামতের দিন সবচেয়ে কঠিন শাস্তি তার হবে, যে আল্লাহর সৃষ্টির সাদৃশ্য নির্মাণ করে।’ অতপর আমি সেটাকে টুকরো করে একটি বা দুটি বালিশ বানালাম।
সহীহ বুখারী হা. ৫৯৫৪; সহীহ মুসলিম হা. ২১০৭)

তাছাড়া অনেক ঘটনা ইসলামী আইন হওয়ার আগে পরেও হতে পারে!
আয়েশার এই ঘটনাটি মূর্তি নিষিদ্ধ করার আগের ঘটনাও বটে!একটা উদাহরন দেই-ইসলামে প্রথমে দাসী হালাল ছিলো পরে তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে!তাই এখন কেউ চাইলেই দাসী ব্যবহার করতে পারবে না কারন দাসী ব্যবহার করা যেতো তা নিষিদ্ধ হবার আগে শুধু!এই বিষয়টাও দেখতে হবে!আর একটা হাদীস দিয়ে পরিষ্কার করি!

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) স্বীয় গৃহে (ক্রুশের বা প্রাণীর) ছবিযুক্ত কোন বস্তুই রাখতেন না। দেখলেই তা ভেঙ্গে চূর্ণ করে দিতেন’। (বুখারী হা/৫৯৫২; মিশকাত হা/৪৪৯১)

তারপরে তিনি বলছেন মুসলিম শাসকরা অর্ধৈক পৃথিবী শাসন করেছে!সব মূর্তি ভেঙ্গে দেয়নি কেনো?
মুসলিমরা প্রতিমা ভাঙ্গেন নি কারণ তারা অন্য ধর্মের প্রতি সম্মান রাখেন। যখন কোন অমুসলিম তার ঘরে বা স্বীয় উপাসনালয়ে প্রতিমা, ভাস্কর্য রাখেন তখন সেটা ভাঙ্গা হারাম। ইসলাম এর কোন অনুমতি প্রদান করেনি।

এরপর তিনি আমেরিকার মহানবীর ভাস্কর্যের কথা বলেছেন!তিনি নিজেই উল্লেখ করেছেন বিভিন্ন মুসলিম দেশের অনুরোধে ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে!তার মানে বুজাই যাচ্ছে ইসলামে মূর্তি /ভাস্কর্য নিষিদ্ধ বলেই সব মুসলিম দেশ আপত্তি জানিয়ে অনুরোধ করেছিলো!না হলে তো করতো না!

তিনি যতগুলো রেফারেন্স দিয়েছেন সব গুলো সন্দেহ জনক!যেখানে কুরআন আর হাদীসে অসংখ্য রেফারেন্স স্পষ্ট মূর্তি/ভাস্কর্য নিষিদ্ধ করছে সেখানে আমরা কেনো সন্দেহ জনক রেফারেন্স গ্রহন করবো?

“রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, ‘তুমি সন্দিগ্ধ বিষয় পরিত্যাগ করে নিঃসন্দেহ বিষয়ের দিকে ধাবিত হও’। তিনি আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি সন্দিগ্ধ বিষয়ে পতিত হ’ল, সে ব্যক্তি হারামে পতিত হ’ল’।

বাস্তবে তিনি কোন আয়াত, হাদীছের আরবী পাঠ প্রদান করতে সক্ষম হননি। স্রেফ কিছু অনুবাদ পেশ করেছেন। হয়তো তিনি আরবী ভাষায় অজ্ঞ হবার কারণেই এমনটা হয়েছে। আর আরবী ভাষায় অজ্ঞ হলে ইসলামের কোন বিষয়ে মতামত প্রদান করা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। যা তার পরবর্তী লেখনীই প্রমাণ করছে। তিনি ‘‘তারিখ আল তারারি ’’ নামের গ্রন্থের উল্লেখ করেছেন যেটি বাস্তবে বিশ্বের বুকে নেই। সঠিক নামটি হল ‘‘তারীখ আত-ত্বাবারী।’’ যেটি ইমাম ইবনে জারীর আত-ত্বাবারী রহিমাহুল্লাহ (মৃঃ ৩১০ হিঃ) আরবী ভাষায় রচনা করেছেন। যিনি গ্রন্থের নাম লিখতেই ভুল করেন তিনি কেন এ বিষয়ে লিখতে মনস্থ করলেন তা বোধগম্য নয়।

এরপর তিনি মূর্তি বিরোধী আন্দোলনকে সংবিধান বিরোধীও বলেছেন!
আসলে কি তাই?সংবিধানে আছে, ‘‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম…..।’’ (দেখুন : বাংলাদেশের সংবিধান পৃঃ ৯, মেট্রো পাবলিকেশন্স, ঢাকা)। যেহেতু ইসলামে এভাবে ভাস্কর্য তৈরী করা হারাম সেহেতু বাংলাদেশের ‘‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’’ মোতাবেক এভাবে কোন মূর্তি, ভাস্কর্য রাখা অবৈধ বলা যেতেই পারে!যদিও রাষ্ট্রীয় ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়িতে যেতে যাই না!

এবার আসি কেহ যদি মূর্তি ভাঙ্গতে চাইলে আপনাদের ব্যাথা লাগে কেন? এ ব্যাথা লাগার অনুভূতিই প্রমাণ করে আসলে আপনাদের ভালবাসা ও সম্মান মূর্তির জন্য নিবেদিত। এটাই তো স্পষ্ট মূর্তিপূজা। ভাবতে আশ্চর্য লাগে, কত বড় মূর্খতা ও!

“ইবরাহীম আ. তার পিতা ও সমপ্রদায়কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা এ মূর্তিগুলোর সামনে অবস্থান কর কেন?’ তারা বলল, ‘আমাদের পূর্ব-পুরুষদের এ রকম করতে দেখেছি।’ ইবরাহীম বলল, ‘যদি তোমরা ও তোমাদের বাপ-দাদারা স্পষ্ট ভ্রান্তিতে থাকে তবুও তাদের অনুসরণ করবে?’ -সূরা আম্বিয়া 52-54

এত সুন্দর ইসলামী ব্যাখ্যার পর যদি কেউ কেউ মূর্তি /ভাস্কর্যের পক্ষে কথা বলে তাদের জন্য আল্লাহ এই আয়াত-

“আর নিজের কাছে সত্য পথের দিশা প্রকাশ হওয়ার পরও রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথের বিপরীত পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে ফিরিয়ে দেব যে দিকে সে যেতে চায় এবং প্রবেশ করাব জাহান্নামে। আর আবাস হিসাবে তা খুবই মন্দ!” নিসা 115

লেখক: আরিফ আজাদ