শিক্ষণীয় গল্প: মা-বাবার সেবা করা স্ত্রীর দায়িত্ব নয়!

সোহেল চুপচাপ স্ত্রী ঝুমুরের কথা শুনলো! তারপর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, তুমি সত্য বলেছো। আল্লাহ্‌ তোমাকে শ্বশুর শাশুড়িকে সেবা করতে বাধ্য করেননি। কিন্তু মানবিকতা বলে তো একটা কথা আছে। আমি মা বাবার একমাত্র সন্তান। উনারা দুজনেই অসুস্থ, আমি চাকুরী করি। এখন উনাদের পাশে থাকা কি তোমার দায়িত্ব না?

– দায়িত্ব বলছো কেন? আল্লাহ্‌ তো আমাকে এই দায়িত্ব দেননি! তুমি অন্য ব্যবস্থা করো। দেখো তাদের দেখাশোনা করতে কোন কাজের লোক পাওয়া যায় কিনা!

– কাজের লোক কি নিজের লোকের মত দেখাশোনা করবে? আমাদের বাঙালী সমাজ কি শ্বশুর শাশুড়িকে দেখাশোনা করা দায়িত্ব মনে করেনা?

– তুমি ইসলাম নিয়ে কথা বলো। বাঙালী সমাজে অনেক কিছু আছে যা ইসলাম বিরোধী।

সোহেল বেশ কিছুক্ষন নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলো। তারপর ধীরে ধীরে বললো, আলহামদুলিল্লাহ্‌। তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি আশা করবো তুমি সব সময় বাঙালী সেন্টিমেন্ট পরিহার করে চলবে। আমার সাথে কোন ক্ষেত্রে যেন এই সেন্টিমেন্ট না দেখাও।

– অবশ্যই দেখাবোনা। ইসলামের উপর থাকলে আমার কোন কথা থাকবেনা।

– তোমাকে আবারো ধন্যবাদ। আমার বাবা মায়ের যেহুতু আমি ছাড়া কেউ নেই সেহুতু ব্যবস্থা আমাকেই করতে হবে। আর কাজের লোক দিয়ে যেহুতু প্রপারলি আমার কাজ সম্পাদন হবেনা তাই দ্রুত আমি আরো একটি বিয়ে করে মা বাবার কাছে রেখে আসবো। ইসলাম আমাকে চারটি বিয়ের অনুমতি দিয়েছে। তোমার নিশ্চয় কোন আপত্তি নেই?

ঝুমুর এক দৃষ্টিতে সোহেলের দিকে তাকিয়ে থাকলো। সোহেল একটু পিঠ চাপড়ে দিয়ে বললো, চলো ঘুমাতে যাই।



সোহেল ঘুম থেকে উঠে দেখে ঝুমুর পাশে নেই। বেড রুম থেকে ড্রয়িং রুমে এসে দেখে সে ব্যাগ গুছিয়ে বসে আছে। একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, তুমি এই সকালে কোথায় যাচ্ছো?

– তুমি রেডি হয়ে নাও। আমাকে বাবা মায়ের কাছে রেখে আসো। এই সময় উনাদের পাশে আমার থাকা উচিৎ।

– কেন তোমার বাবা মায়ের কি হয়েছে?

– আমি আমার শ্বশুর শাশুড়ির কথা বলছি।

– ও আচ্ছা! আমাকে দশটা মিনিট সময় দাও। রেডি হতে এর থেকে এক সেকেণ্ডও বেশি সময় লাগবেনা….

শিক্ষণীয় গল্প: বোরকা পরা মেয়েকে ইভটিজিং

.
রাস্তাদিয়ে বোরকা পরা এক মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে।

চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দেয়া ছেলেদের মধ্যে একজন বাজি ধরে বললো, আমি যদি মেয়েটির ফোন নাম্বার এনে দিতে পারি তাহলে আমাকে কী দিবে…???

অন্যরা সমস্বরে বল্ল একটা গ্রিল খাওয়াব!
– আচ্ছা ঠিক আছে! .

মেয়ের পিছুনিলো ছেলেটি। ফাকা রাস্তায় সুযোগ বুঝে মেয়েটাকে সরাসরি বললো, “আমি কী আপনার ফোন নাম্বার পেতে পারি?”

হঠাৎ এমন অপরিচিত লোকের কথায় মেয়েটি কিছুটা ভয় পেয়ে গেল! অত:পর কিছুক্ষণ চুপ থেকে উওর দিলোঃ- ১৮-১২, ২৪-৩০

ছেলেটি বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করলো, “এটা কোন অপারেটর?”
মেয়েটি বললঃ- “এই অপারেটরের নাম ‘ইসলাম’”
কোরআনের ১৮ (আঠারোতম) পারার, ১২ (বারো) নং পৃষ্ঠা ও ২৪ (চব্বিশ) নাম্বার সূরার ৩০ (ত্রিশ) নাম্বার আয়াত। বাড়ি গিয়ে ডায়াল করবেন!
ছেলেটি ব্যর্থতার চিহ্ন মুখে নিয়ে বন্ধুদের কাছে ফিরলে সবাই তাকে নিয়ে রসিকতা শুরু করলো।
ছেলেটি বন্ধুদের সাথে রাগ করে বাড়ি চলে গেলো। এবং কোরআনের নির্দিষ্ট স্থানটি বের করে দেখলো তাতে লেখা
রয়েছেঃ– “হে নবী, মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।”
[সূরা আন-নূর ( মদীনায় অবতীর্ণ ), আয়াত নং-৩০]

অতপর ছেলেটি কুদৃষ্টির বদলে মেয়েটিকে সম্মান করতে শুরু করলো।
বোঝার ব্যাপারহলো, সকল সমস্যার সমাধান মহান গ্রন্থ ‘‘আল কুরআন’’
যদি কেউ তার যথাযথ ব্যাবহার করতে জানে!

আল্লাহ আমাদের সবাইকে বুঝার তাওফিক দিন! (আমিন)

গল্প: স্বর্গের ক্যাম্পেইন

এক মন্ত্রী মৃত্যুর পর পরজগতে গেল। তো সে যখন স্বর্গে ঢুকবে, তখন দেবতা তাকে বলল, ‘স্বর্গে কিছু সংস্কার চলছে; তুমি দুদিন শুধু নরকে ঘুরে আসো। এরপর স্বর্গে ঢুকো। ’

মন্ত্রী রাজি হলো। নরকে শয়তান তাকে সাদর আমন্ত্রণ জানাল। এরপর সে তাকে নরক ঘুরে দেখাতে লাগল। মন্ত্রী অবাক হয়ে দেখতে লাগল যে নরক অনেক সুন্দর। অনেক আরামের ব্যবস্থা, সুন্দর সুন্দর প্রাসাদ থাকার জন্য। খেলাধুলার জন্য পুল, গলফ মাঠ আরো অনেক কিছু। অনেক সুস্বাদু পানীয়, খাবারদাবারের ব্যবস্থা। আর অসংখ্য সুন্দরী অপ্সরী। মানুষ অনেক আরামে আছে ওখানে। দুদিন পর দেবতার কাছে মন্ত্রী বলল যে সে নরকেই থাকতে চায়।

দেবতা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি সত্যি ওখানে থাকতে চাও?’

মন্ত্রি, ‘হ্যাঁ’।

দেবতা রাজি হলো। কিন্তু এরপর মন্ত্রী নরকে গিয়ে দেখল যে নরক পুরো অন্য রকম। কোনো সুন্দর জায়গা নেই। শুধু আগুন আর কয়লা। মানুষজনকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। দৈত্যরা মানুষজনকে শাস্তি দিচ্ছে। অসংখ্য সাপ আর হিংস্র প্রাণী ঘুরে বেড়াচ্ছে; খুবই কুৎসিত আর জঘন্য জায়গা।

মন্ত্রী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল শয়তানকে ‘নরকের এই হাল কেন? আগে আমি কী দেখলাম!’

শয়তান হেসে বলল, ‘আরে ওইটা তো ছিল একটা ক্যাম্পেইন। তোমরা যেমন নির্বাচনের আগে মানুষকে স্বর্গের স্বপ্ন দেখিয়ে পরে নরক উপহার দাও; আমিও তাই করেছি। তোমার তো এটা বোঝার কথা। ’

শিক্ষণীয় গল্প: জীবনের সেরা ঈদ

সেহরি খেয়ে ফজরের নামাজ পড়ে হালিম সাহেব ও তার স্ত্রী পাশাপাশি শুয়ে আছে। কয়েকদিন পরেই তো ঈদ। হালিম সাহেবের ঈদ মানেই টেনশনের পরিমাণটা আরো কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়া। ছোট একটি চাকরি করে। মাস শেষে যে বেতন পায়, তা দিয়ে কোনোমতে চলে যায় তার সংসার। কিন্তু ঈদ এলেই তার কলিজায় যেন পানি থাকেনা। ঈদ বোনাস যা পাবে তা দিয়ে হয়তো ছেলে আর মেয়ের ঈদের কেনাকাটা হয়ে যাবে। নিজের কথা না হয় বাদই দিলো। কিন্তু বউকে তো কিছু কিনে দিতে হবে! তারপর বৃদ্ধ মা বাবা..! শ্বশুর, শ্বাশুড়ী..!
.
হালিম সাহেব তার স্ত্রীর পাশে শুয়ে এসবই ভাবছে..! এমন সময় স্ত্রী বললো…
– শুনছো..!?
– হ্যাঁ বলো..
– তোমার ছেলে এবার ঈদের কেনাকাটা নিজে মার্কেটে গিয়ে করবে ওর বন্ধুদের সাথে। তাই ওর জন্য কেনাকাটা করতে নিষেধ করেছে। ও টাকা চেয়েছে..!
– কত টাকা লাগবে ওর..?
– ও তো বললো ৫০০০ টাকা..!
.
টাকার অংকটা শুনতেই হালিম সাহেবের গলাটা শুকিয়ে গেলো..! বাবার কষ্ট অনুধাবন করার মতো বয়স ছেলের এখনো হয়নি। হালিম সাহেব আরো চিন্তায় পড়ে গেলো। এমন সময় স্ত্রী বলে উঠলো…
– শোনো এবারের ঈদে আমার কিছু লাগবেনা। গতবার যা কিনেছিলাম তা এখনো নতুন রয়ে গেছে। তুমি শুধু ছেলে মেয়ের জন্য, তোমার জন্য আর আব্বা আম্মার জন্য কিছু কিনো।
হালিম সাহেব হেসে দিয়ে বলে…
– তুমিও আমার মতোই ভাবছো..!? তোমার কিছু লাগবেনা..!?
স্ত্রী একটু অভিমানের সুরে বললো…
– প্রতি ঈদে সবার জন্য কেনাকাটা করো ঠিকই কিন্তু নিজের জন্য কিছুই কিনোনা..!
– আরে কিনলেও ঈদ হবে, না কিনলেও ঈদ হবে। এমনতো না যে ঈদে নতুন জামাকাপড় কিনতেই হবে..!
.
হালিম সাহেবের স্ত্রী মনে মনে বলে, সেকি জানিনা কি কারণে নিজের জন্য কিছু কিনতে চাওনা! সংসারটা কি করে চালাও তুমি, সেটা আমার চেয়ে ভাল আর কে জানে..!?
আর হালিম সাহেবও মনে মনে ভাবতে থাকে… বউটা আমার কষ্ট বুঝতে পারে, সেজন্য সেও আমার মতো কিছু কিনতে চাচ্ছেনা। আল্লাহর অশেষ রহমত এমন বউ পেয়েছিলাম। অন্য কোনো মেয়ে হলে আমার ঘর ছেড়ে দিয়ে কবেই চলে যেত..!
.
হালিম সাহেব দুইদিন পরে ঈদ বোনাস পেয়ে মেয়ের জন্য, বৌয়ের জন্য, নিজের মা বাবার জন্য এবং শ্বশুর শ্বাশুড়ির জন্য ঈদের কেনাকাটা করে আনলো। বরাবরের মতো নিজের জন্য কিছুই কিনলোনা।
.
বাসায় এসে বৌয়ের হাতে ছেলের জন্য ৫০০০/- টাকা দিয়ে বললো…
– টাকাটা আজই ছেলের হাতে দিয়ে দিও। ছেলেটা প্রথমবার টাকা চাইলো..!
স্ত্রী অভিমান করে বসলো…
– এবারও তুমি তোমার জন্য কিছু কিনোনি তাইনা..!? যাও তুমি কিছু না কেনা পর্যন্ত ঈদে আমি এসব গায়েই জড়াবোনা..!
– শোনো তোমাদের মুখে হাসি দেখলে আমার আর কিছুরই দরকার হয়না..!
.
তারপরের দিন….
ছেলে ৫০০০/- টাকা পেয়ে ঈদের কেনাকাটা করে সন্ধ্যার সময় মহা আনন্দে বাসায় ফিরে আসলো। মা বাবা ছেলেকে বললো…
– কি কেনাকাটা করলি বাবা..!?
ছেলে শপিং ব্যাগ থেকে প্রথমে নিজের জন্য একটি পাঞ্জাবি বের করলো। তারপর আরও একটি পাঞ্জাবি এবং একজোড়া চামড়ার সেন্ডেল ব্যাগ থেকে বের করে বাবার হাতে দিয়ে বললো…
– এগুলো তোমার জন্য..!
বাবা কিছুটা অবাক হয়ে বললো…
– এগুলো কিনতে বলেছে কে তোকে…!?
ছেলে বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো…
– বাবা, প্রতি ঈদে তুমি তোমার জন্য কিছুই কিনতে চাওনা। শুধু আমাদের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য নিজের সাধ আল্লাদ একেবারে কোরবানি করে দিয়েছো..! এটা আমার ভাললাগেনি। তাই এবার আগে থেকেই আমি এই প্লান করে রেখেছিলাম।
.
ছেলের কথা শুনে হালিম সাহেব চোখের পানি আটকে রাখতে পারলোনা..! হালিম সাহেবের স্ত্রীও তার কাপড়ের আচঁল দিয়ে নিজের চোখদুটো মুছছে.! এমনসময় ছেলে তার পকেট থেকে ২০০০/- টাকা বের করে বাবার হাতে দিয়ে বললো…
– আমি জানি ঈদের কেনাকাটা করে তোমার হাতে অবশিষ্ট কিছুই নাই যে, ঘরের বাজার করবে..! তাই ৫০০০/- টাকা থেকে এই ২০০০/- টাকা বাচিঁয়েছি। ঘরের বাজারের জন্য..!
.
মা বাবা দুজনেই আবেগাপ্লুত হয়ে ছেলেকে বুকে টেনে নিলো। ছেলেকে জড়িয়ে ধরে দুজনেই কাঁদতে লাগলো, আর মনে মনে বলতে লাগলো… আমাদের আর কোনো কষ্ট নেই। ছেলে আমাদের বড় হচ্ছে। মা বাবার কষ্ট বুঝতে শিখেছে!

হালিম সাহেবের এবারের ঈদটা যেন জীবনের সেরা ঈদ..!

এক মুজাহিদ সহধর্মিণীর জিহাদি প্রেরণা

“রাতে পল্টনে কাজ আছে , সাহরি খাওয়ার দাওয়াত আছে…”

সংক্ষিপ্ত এতটুকু কথা বলেছিলে আমাকে। আমায় কেন বলনি , বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিতে রাজপথে (গ্রীক দেবী মূর্তি পুন:স্থাপনের প্রতিবাদে ১লা রমজান রাত দেড়টায় ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত) মুজাহিদ কাফেলার সঙ্গী হতে রওয়ানা হয়েছো!!!

ভেবে ছিলে আমি বাঁধা দিবো??? (নাউযুবিল্লাহ্)

তোমার মাথার পাগড়ি টা স্বহস্তে বেঁধে দিতে পারিনি বলে নিজেকে খুব দুর্ভাগা মনে হচ্ছে। তোমাকে রওয়ানা করিয়ে দিতে পারলে নিজেকে সান্তনা দিতাম হয়ত এই ওসিলায় নাজাত পাবো!!

হে বীর মুজাহিদগন তোমাদের বলছি
____________________________

যে দ্বীনের ঝাণ্ডা হাতে আজ তোমরা রাজপথে সেই দ্বীনের মশাল হাতে দৃঢ় কদমে এগিয়ে যাও , ভেঙ্গে ফেল বাঁধার সব শৃঙ্খল , তাকবির ধ্বনি তে কাঁপিয়ে দাও জালিমের ভীত, দুর্দমনীয় গতিতে পথের সকল কন্ঠক দু’পায়ে দলে হুংকার দিয়ে এগিয়ে যাও!

কাণ্ডারী_হে!!

__________

জাতীর এই ক্রান্তিলগ্নে তোমাদের দিকে তাকিয়ে আছে অসহায় মানুষ, এবার তোমাকেই শক্ত হাতে হাল ধরতে হবে,
মনে রেখো!!

এ পথ বড় বন্ধুর , ক্ষনে ক্ষনে ধেয়ে আসবে বাঁধার প্রাচীর , জেল -জুলুম, নির্যাতন -অত্যাচারে হতবিহ্বল না হয়ে রব্বে কারীমের নুসরাত আর ঈমানের বলে বলীয়ান
হয়ে কারাভ্যন্তরে গড়ে তুলবে বিপ্লবের সীসা ঢালা প্রাচীর ।।।

ঘরের কোনের আলস্য মৃত্যুকে দূরে ঠেলে শামিল হবে শহীদের কাফেলায় , তোমার পরিবার যেন শহীদের পরিবার হিসেবে হাজিরা দিতে পারে আল্লাহ্‌র দরবারে।
গাজী হয়ে ফিরে আসলে আবার চলবে তোমার দুর্বার পথ চলা!!

বিজয় তোমার হবেই!!! (ইনশাআল্লাহ )

এগিয়ে যাও, যা…….ও!!!

“ফাল্লহু খইরুন হাফিযাও ওয়াহুয়া আরহামুর্ রহিমীন”

নারীবাদীর সাথে মূর্তি নিয়ে কথোপকথন

এক নারীবাদীকে বললাম, নারীমূর্তির এই নগ্নরুপ নিশ্চয়ই আপনার বোন-বউ পছন্দ করবে? তাইনা?

কী বলছেন এসব? আপনার কি মা-বোন নাই?
তাদের লজ্জা নিয়ে কথা বলছেন!
একজন পুরুষ কি পছন্দ করবে তার নগ্নমূর্তি?

তবে দুটোকেই পাশাপাশি স্থাপন করলে বোধহয় সবারই মর্জিসই হবে?

রেগেমেগে বলল, হুজুর আপনারা তো ভারি নষ্ট! শুধু নারী নিয়ে কুচিন্তা করেন!! মূর্তিতে পর্যন্ত চোখ লেগে যায়!!!

হুম, কুকর্মগুলো আপনারা করেন তো তাই আরকি!

তার মানে? কী বলতে চাচ্ছেন আপনি?
না, মানে জন্মদিনে, নববর্ষে, ভ্যালেন্টাইনস-ডেতে, হলে, হাওড়ে, বিলে যত নারীর “সর্বনাশ” ঘটে, তাতে কিন্তু হুজুররা যায়না।

একটু রাস্তা ঘাটে চলাফেরা করি তাই এই ন্যাংটো মূর্তি দেখে ভাবলাম, আমাদের প্রগতিশীলরা কতদূর এগিয়েছে একটু দেখি! কিন্তু আপনি হতাশ করেছেন আমাকে।

শুনুন, আপনারাই বলে থাকেন, এই মূর্তি ভাস্কর্য এসব পুজোর জন্য নয়। বরং আমাদের সভ্যতা-সংস্কৃতির একটা বিষয় মাত্র।

আর অধিকাংশ মানুষের চর্চিত চরিত্রই তো আমাদের সংস্কৃতি। তাইনা?
এই ন্যাংটামি তবে আমাদের সংস্কৃতি নয়, কারন, আপনার মত প্রগতিশীলের বউ পর্যন্ত এটা অপছন্দ করে।
তবে কার সুখের জন্য এসব? বলুন? জবাব দিন!

চেতনাবাদীর অহংকারী মুখটা কেমন ভিখারীর মত পাংশু হয়ে গেল। ভন্ডামীর তাড়নায় ফাল পাড়ার পরিনতি যা হয়!

তাইতো আহমদ ছফা বলেছেন, যারা মৌলবাদী তারা শতকরা একশো ভাগ মৌলবাদী। আর যারা প্রগতিশীল, তারা ১০ভাগ প্রগতিশীল, ৫০ভাগ সুবিধাবাদী, ১৫ ভাগ কাপুরুষ আর ৫ ভাগ একেবারে জড়বুদ্ধিসম্পন্ন।

শিক্ষনীয় ঘটনাঃ স্বামী স্ত্রীর দ্বন্ধ নিরসনে “হজরত ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর হেকমত”

এক ব্যক্তির বউ তার স্বামীর উপর খুব রাগ করেছিল।
স্বামীর সঙ্গে কথা বলে না।
স্বামী অনেক চেষ্টা করেও বউকে কথা বলাতে পারলো না।

অবশেষে এক রাত্রিতে বিরক্ত হয়ে বউকে বললো,”আজ ফজরের আযান হওয়ার আগে যদি কথা না বল তবে তোমার উপরে তিন তালাক।”

কিন্তু বউ কথা বললো না।
তালাক হয়ে যাওয়াটাই সে কামনা করছিল।
সুতরাং কথা না বলে কোন প্রকারে ফজরের আযান পর্যন্ত কাটিয়ে দিতে পারলেই স্বামীর এই কথা তালাক হিসাবে গণ্য হয়ে যায়।
এই স্বামীর বন্ধন থেকে মুক্তি পাওয়ার একটা সুযোগ হলো।
সুতরাং সে মুখ আরও শক্তভাবে বন্ধ করলো।

এদিকে স্বামী আরও বিপদে পড়ে গেল।
এতদিন কথা বলেনি সেই ভাল ছিল।
কিন্তু এখন দেখি এই কথা দ্বারা একেবারে তালাক হয়ে যাবে।
হায়, ফজর হতে তো আর বেশী দেরি নাই, এমন কথা কেন বললাম!

লোকটি খুব বিব্রত হয়ে মাসাআলার খোঁজে বাহির হয়ে পড়লো।
কেমন করে তালাক থেকে বউকে বাঁচান যায়?
অনেক আলেম উলামার কাছে ছোটাছুটি করলো কিন্তু তার পক্ষে কোন ফতোয়া পাওয়া গেল না।
যদি এভাবে কথা বন্ধ রাখে তবে ফজরের আযান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বউ তালাক হয়ে যাবে।

অবশেষে লোকটি হযরত ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর খেদমতে হাজির হয়ে তার দুঃখের কথা ব্যক্ত করলো, “হুযুর এই বউ তালাক হয়ে গেলে আমি বাঁচবো না। আমাকে রক্ষা করুন।”

ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) বললেন, “তোমার বউ তালাক হবে না।
তুমি বাড়ি যাও।
বউ তোমারই থাকবে।”

এই ফতোয়া শুনে আলেম উলামা অবাক হয়ে বলাবলি করতে লাগলেন যে, ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) কে আমরা এত শ্রদ্ধা করি তিনি একজন সামান্য ব্যাক্তির দুঃখ দেখে স্থির থাকতে পারলেন না!
শরীয়তের মাসআলাকে হেরফের করে ফতোয়া দিয়ে দিলেন?

কিন্তু ব্যাপারটা ঘটলো অন্যভাবে।
বিজ্ঞ ইমামের পক্ষেই এরুপ জটিলকে সহজ করা সম্ভব ছিল।
লোকটির বাড়ির কাছে একটি মসজিদ ছিল।
ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) ফজর হওয়ার আগেই সেই মসজিদে গিয়ে উচ্চস্বরে আযান দিতে লাগলেন।

বউটি আযান শুনা মাত্র আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে স্বামীকে বলতে লাগলো, “আমার তালাক হয়ে গেছে।
আমার বিদায়ের ব্যবস্থা করুন।”

লোকটি বললো,”কেমন করে হলো তোমার তলাক?”
বউ বললো,”ঐ দেখুন মসজিদে ফজরের আযান হচ্ছে।

আমি ফজরের আযান পূর্ব পর্যন্ত কথা বন্ধ রেখেছিলাম তাই সে অনুযায়ী তালাক হয়ে গেছে।”

লোকটি আবার চিন্তায় পড়ে গেল।
ইমাম সাহেবের কণ্ঠে আযানের আওয়াজ শুনে মসজিদের দিকে ছুটে গেল।
বললো,”হুযুর আপনি বললেন, বউ তালাক হবে না কিন্তু বউ তো তালাক হয়ে গেল। এখন আমি কি করি?”

ইমাম সাহেব জিঞ্জাসা করলেন,”কেমন করে তালাক হলো?”
লোকটি বললো,”এই যে ফজরের আযান হয়ে গেল এর আগ পর্যন্ত সে কথা বন্ধ রেখেছিল।”

ইমাম সাহেব বললেন,”এই আযানের পরে কথা বলেছে কিছু?”
লোকটি বলল,”জী হ্যাঁ কথা বলেছে।”

ইমাম সাহেব বললেন,”তবে ঠিক আছে।
তোমার বউ তালাক হয়নি।
ফজরের আযানের এখনও দেরী আছে।
তার আগেই তোমার বউ কথা বলে ফেলেছে।
যে আযান শুনে কথা বলেছে সেটা ছিল তাহাজ্জুদের আযান।”

লোকটি আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠলো।
বাড়ি গিয়ে বউকে জড়িয়ে ধরে বললো,”সে তাহাজ্জুদের আযান শুনে কথা বলে ফেলেছে।”

সব কিছু শুনে বউটি হতভম্ব আর আলেমগণ হতবাক!

সূত্রঃ {আল-এফাযাতুল য়্যাওমিয়্যাহ খন্ড ৪ পৃষ্ঠা ২৩৪}

শিক্ষণীয় গল্প: স্বামী স্ত্রী পরস্পর নামাজের তাগিদ দিতে হবে

স্বামীঃ আসরের নামাজ পড়েছ?
স্ত্রীঃ না।
স্বামীঃ কেন পড়নি?
স্ত্রীঃ মাত্র হাতের কাজ শেষ করলাম খুব ক্লান্ত ঘুম আসছে।
স্বামীঃ মাগরিবের সময় তো হয়ে গেল তাড়াতাড়ি এশার আযানের আগেই মাগরিব পড়ে আসর কাযা পড়ে নাও।

পরদিন স্বামী ব্যবসার কাজে কিছুদিনের
জন্যে বাইরে গেল।
স্ত্রীঃ তার ফোনের অপেক্ষায়।
কিন্তু যে সময়ে পৌঁছে যাবার কথা সে সময়
পার হয়ে গেলেও স্বামীর কোন ফোন এলোনা।
স্ত্রীঃ নিজেই ফোন দিল।
রিং হচ্ছে তবে সে রিসিভ করছেনা।
স্ত্রীঃ বেশ চিন্তায় পড়ে গেল।
কোন দুর্ঘটনা ঘটলো না তো?…
কয়েকঘণ্টা পর স্বামীর ফোন আসল।
স্ত্রীঃ তুমি ঠিক আছো তো?
স্বামীঃ হুম… আলহামদুলিল্লাহ্।
স্ত্রীঃ কখন পৌঁছেছ?
স্বামীঃ এই তো, ঘণ্টা চারেক হল।
স্ত্রীঃ চার ঘণ্টা এর মধ্যে তুমি একবারও
আমাকে জানানোটা প্রয়োজন মনে করলানা?
আমিও তো কল করেছিলাম।
রিং হয়েছে তাও রিসিভ করনি।
তুমি কি আমাকে পাত্তা দিচ্ছোনা?
স্বামীঃ (কিছুক্ষণ চুপ থেকে) তুমি এই
সামান্য ডাকে সাড়া না দাওয়াতেই রেগে যাচ্ছ। অথচ গতকাল যখন তোমার কানে আল্লাহর ডাক আজান পৌঁছেছিল, তখন তুমিও কিন্তু সময় মত সাড়া দাওনি।
স্ত্রীঃ আমি বুঝতে পেরেছি। প্লিজ! আমাকে মাফ করে দাও।
স্বামীঃ আমি না, আল্লাহ তোমাকে মাফ
করে দিক।
আজ আমি নামাজের প্রতি গাফলতি করলে হয়ত তুমিও এইভাবে আমাকে বুঝাতে।  তুমি রাগ করো না। আমি এমন করেছি কারণ আমি চাই আল্লাহ জান্নাতেও আমদেরকে একসাথে রাখুক।
আল্লাহ্ তাআলা আমাদের সকল কে ঈমানের
সাথে দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামায পড়ার তৌফিক দান করুক৷ আমিন৷

শিক্ষণীয় ঘটনা: বিবাহ উৎসবে সে মেয়েটি

👉যে মেয়েটির অন্তর আল্লাহর ভয়ে প্রকম্পিত থাকতো, নামাজকে বেশী ভালোবাসতো আজ তার বিয়ে। মহাধুমধামে চলছে সব আয়োজন। চারদিকে উৎসব। মাগরিব নামাজের পর তাকে মেক-আপ দেয়া হলো, সুন্দর সাদা বিয়ের পোশাক পরানো হলো। এই করতে করতে এশার আজান হলো। তখন তার
মনে পড়ল, তার ওজু নষ্ট হয়ে গেছে।

সে তার মাকে বিষয়টা জানাল :
মা, আমি ওজু করে এশার নামাজ
পড়তে চাই।
‘তার মা এতে বিস্মিত হলেন : ‘
তুমি কি পাগল হয়ে গেছ? দেখছ না
সবাই তোমার অপেক্ষা করছে,
তোমার মেক-আপের কী হবে?
পানিতে তো সব ধুয়ে যাবে।
‘তখন তিনি বললেন, আমি তোমার
মা, আমি নির্দেশ দিচ্ছি, তুমি এখন
নামাজ পড়বে না। তুমি যদি এখন ওজু
কর, তবে আমি কষ্ট পাব।
মেয়ে জবাব দিল, ‘নামাজ না পড়ে
আমি এখান থেকে যাব না।
মা, তুমি জান, নামাজের মাফ নেই।
মানুষ আল্লাহর অবাধ্য হতে পারে
না।
‘তার মা জবাব দিলেন, মেক আপ
ছাড়া তোমাকে দেখলে
মেহমানরা তোমাকে নিয়ে কী
বলবে? তাদের চোখে তোমাকে
কি সুন্দর লাগবে? তোমাকে দেখে
তখন তারা কৌতুক করবে।
মেয়ে তখন বলল, মা, তুমি কি এই
নিয়ে চিন্তা করো যে, আমি সৃষ্টির
দৃষ্টিতে সুন্দর কি না? আমার স্রষ্টা
নিয়ে কি ভাবো? আর আমি ভাবছি,
আমি যদি আমার নামাজ বাদ দেই,
তবে তাঁর দৃষ্টিতে আমি সুন্দর হবো
না।
মেয়েটি তখন তার ওজু করতে শুরু করল,
তার সব মেক-আপ মুছে গেল। কিন্তু সে ওসবের কিছুরই পরোয়া করল না। তারপর নামাজ শুরু করল। যথারীতি নামাজ আদায় করতে লাগল। কিন্তু তখনও জানত না, এটাই তার শেষ নামাজ!
হ্যাঁ, সে যখন সিজদায় গেল, তখনই তার
রুহ বের হয়ে গেল। নামাজ পড়তে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এক মুসলিম নারী তার প্রভুর কাছে চলে গেলেন তার সামনে সিজদায় থেকে।

তিনি নামাজকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন। মেয়েটি চেয়েছিলেন তার রবের কাছাকাছি হতে। আর নামাজেই রবের সবচেয়ে কাছাকাছি হওয়া যায়। কে তার চেহারা নিয়ে, সাজগোজ নিয়ে কী বলল, সে তার পরোয়া করত না। তার ভাবনা জুড়ে ছিল আল্লাহ তার সম্পর্কে কী ভাবছেন। প্রিয় বন্ধুরা! সব মুসলমানের চিন্তা এমনই হওয়া উচিত নয় কি?

(শিক্ষা: কখন মৃত্যুর ডাক এসে যায় বলা যায়না। তাই সর্বদা রবের কাছাকাছি হওয়ার চেষ্টায় নিমগ্ন থাকা।)

-এই সত্য কাহিনীটি বলেছেন শেখ
আবদুল মহসিন আল আহমদ। ঘটনাটি ঘটেছে সৌদিআরবের রাজধানীর আভায়। তবে তিনি মেয়েটি বা তার পরিবারের পরিচয় প্রকাশ করেননি।

ইসলাম গ্রহণের গল্প: জাহান্নামের আগুনে জ্বলার বিধান কি সত্য?

স্বপ্নে দেখছি আমার মা আগুনে জ্বলছে, সত্যই কি এটি বিধাতার হুকুম?
.
.
আমি যখন মক্কার উম্মুল কুরা ইউনিভারসিটিতে অধ্যয়ন করি তখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ছাত্রদের সাথে, পরিচয় ও সাক্ষাতের সৌভাগ্য হয়েছিল। তন্মধ্যে একটি ছাত্রের ঘটনা আমি তুলে ধরছি যা আমার হৃদয় গভীর ভাবে স্পর্শ করেছিল। সে একজন নব মুসলিম তার নাম ‘‘আব্দুর রহমান’’ । পূর্বে নামছিল নারায়ন। তার বাসস্থান উত্তর প্রদেশ, ইন্ডিয়া। সে একজন ঠাকুর বংশের ছেলে। কীভাবে ও কি কারণে সে ইসলাম গ্রহণ করেছে তা জানতে চাওয়ায় সে বলল :
আমার গ্রামে একটি প্রাইমারি স্কুল ছিল। সেখানেই আমি লেখাপড়া করতাম। একই গ্রামের আব্দুল্লাহ্ নামে আমার এক বাল্য বন্ধু ছিল। এক সাথে একই ক্লাসে লেখা পড়া করতাম। সে সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে। আমি তার বাড়িতে যেতাম। সেও আমার বাড়িতে আসতো। সুখে দুঃখে আমরা একজন আরেকজনের সব সময় খোঁজ খবর নিতাম । ক্লাস রুমে একই সাথে বসতাম।একজন অপরজনের পাশেই ছিলাম। এমনিভাবে দীর্ঘদিন অতিবাহিত হচ্ছিল। আমরা যখন ৭ম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত ছিলাম, একদিন তার মা হঠাৎ মারা গেল। তাই আমি তাকে সান্তনা দেয়ার জন্য তার বাড়িতে গেলাম। তার মা অত্যন্ত পর্দা মেনে চলত। জীবদ্দশায় তার বাড়িতে কতবার গিয়ে ছিলাম কিন্তু একটি বারও আমার নজরে পড়েনি। যদিও আমি ছোট ছিলাম, মনে মনে ভেবে ছিলাম, মৃত্যুর পর এবার একনজর তাকে দেখব । কিন্তু………।
মুর্দার খাটে করে তাকে কাফন পড়িয়ে এমন ভাবে তার উপর আর একটি পর্দার ব্যবস্থা করে কয়েক জনের কাঁধে করে বাড়ি থেকে বের করল। অন্য কারো অনুমান করা সম্ভব নয় যে আব্দুল্লাহর মা কত বড় ছিল? লম্বা ছিল, না খাটো ছিল? মোটা ছিল, না পাতলা ছিল?
সবাই তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন দোয়া পড়তে পড়তে কবরস্থানের দিকে যাচ্ছে। তাই আমি তাদের সাথে কবরস্থানের দিকে রওয়ানা হলাম। আর মনে ইচ্ছা ছিল যে, কবরে নামানোর সময় একটু দেখব। কিন্তু আমার মনের আকাঙ্ক্ষা আর পূরণ হলো না। কারণ তার মাকে কবরের নামানোর পূর্বেই কবরের চতুর পার্শ্বে পর্দা দিয়ে ঘিরে তার পর তাকে সসম্মানে নামানোর ব্যবস্থা করল। ভাবলাম এটা হয়তো তাদের ধর্মের বিধান।
যাক পরিশেষে আমার বন্ধুকে কিছু সান্তনা দিয়ে আমার বাড়িতে ফিরে আসলাম। আল্লাহর কি ইচ্ছা কয়েকদিন পরেই আমার মাও ইহজগৎ পরিত্যাগ করলেন। আমার মুসলিম বন্ধুটিও এমন দুঃখের দিনে পাশে এসে আমাকে সান্তনা দিতে ত্রুটি করেনি। আমার মা ও উচ্চ পরিবারের মহিলা ছিলেন বিধায় তিনি তার জীবদ্দশায় সাধারণ মানুষের চোখে দেখা দিতেন না।
হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী মাকে শ্মশানে নিয়ে চিতায় পুড়াতে হবে। তাই বাড়ি থেকে বের করা হলো। আমার মার উপরে এমন এটি পাতলা কাপড় ছিল যে, ভিতর থেকে তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দেখা যাচ্ছিল। আমার বন্ধু আমার পাশে ছিল তাই কিছুটা সংকোচ বোধ করছিলাম। তার পর আমার আম্মাকে নিয়ে যাওয়া হলো শ্মশানে, রাখা হলো চিতায়। আগুন দেয়ার সাথে সাথে তার উপরে পাতলা আবরণটি পুড়ে গিয়ে আমার মা প্রায় উলঙ্গ অবস্থায় আগুনে জ্বলছে। আমার লজ্জায় মাথানত হয়ে আসছে। আমার বন্ধুর দিকে তাকাতে পারছি না। কিন্তু উপায় নেই, এতো আমাদের ধর্মের বিধান।
আগুন যখন ভালভাবে ধরেছে তখন দেখি আমার মা তখন বাঁকা হতে চাচ্ছে। আবার কখনো সোজা আবার কখনো দাঁড়াতে চাচ্ছে। এদিকে আসে পাশে অনেক লোক কারো হতে লাঠি ও বল্লম। তারা সবাই তাকে আঘাত করে সেই আগুনেই যথাযথ ভাবে পুড়তে বাধ্য করছে। কি করুন দৃশ্য! এ বেদনা দায়ক দৃশ্য আমাকে যেন হতবাক, অচেতন করে ফেলেছে।
হঠাৎ আমার সামনে ভেসে উঠল বন্ধু আব্দুল্লাহর মায়ের কাফন দাফনের সুন্দর দৃশ্য। কত সম্মান জনক ভাবে তাকে মাটি দেয়ার পর তার চির শান্তির জন্য সবাই দোয়া করে বিদায় নিল। তিনি যখন বেঁচে ছিলেন তখন ও তার সম্মানের কিছু কমতি ছিল না। মৃত্যুর পরও তাকে যথাযথ সম্মানে কবর দেয়া হলো। মনে হয় পরগজতেও তাঁর সম্মান অক্ষুণ্ণ থাকবে।
আমার জ্ঞান আবার ফিরে আসল। দেখছি আমার মা আগুনে জ্বলছে। কত কষ্ট, কত যাতনা ও কত বেদনা আমি পেয়েছি যা আজ বর্ণনার ভাষা নেই। আমার মা আমাকে অত্যন্ত স্নেহ ও আদর করতেন।
আমার মা অভিজাত পরিবারে সসম্মানে জীবন যাপন করেছিলেন। হিন্দু ধর্মে হলেও আমার মা সাধারণ মানুষের সাথে দেখা দিতেন না। বাড়ির বাহিরে যেতেন না। অন্যান্য মেয়েদের মত ঘোরাফেরা করতেন না। আস্তে আস্তে কথা বলতেন। শান্ত মেজাজের ছিলেন তিনি। ঝগড়া ফাসাদকে তিনি কখনো পছন্দ করতে না। এমন সুন্দর স্বভাবের মা ছিলেন আমার। সুখ ও শান্তিতে ইজ্জতসহ বসবাস করতেন তিনি, অথচ মৃত্যুর সাথে সাথে তাকে এমন করে বেইজ্জত করা হলো। তার চেহারা অপর কেহ দেখেনি কিন্তু জীবনটা চলে যাওয়ার সাথে সাথে একী অবস্থা? তিনি কোন দিন কাউকে আঘাত করেননি, এমন কি কারো সাথে ঝগড়া করেননি, গালিও দেননি। কিন্তু তার আত্মা বিদায় নেয়ার সাথে সাথে এ ভাবে মানুষ তাকে আঘাত করছে কেন? চোখের সামনে এই যদি হয় তার অবস্থা তবে পরজগতে ? এ কঠিন অবস্থায় নানা ধরনের প্রশ্ন জাগছিল আমার হৃদয়ে। তন্মধ্যে সব চেয়ে বড় যে প্রশ্নটি আমার হৃদয়ে উদ্ভব হয়েছিল তা হলো : সত্যই কি এটি বিধাতার হুকুম?
এর পর হতে আমি ধর্ম নিয়ে গভীর ভাবে গবেষণা শুরু করলাম। এক এক করে হৃদয়ের সকল প্রশ্নের জবাব খুঁজতে শুরু করলাম। পরিশেষে আমি অন্ধকার থেকে আলোর সন্ধান পেলাম। ভ্রান্ত পথ ছেড়ে মহান সৃষ্টিকর্তার সঠিক পথে চলে আসলাম। বুঝতে আর দেরি হলো না যে, ইসলাম একমাত্র আল্লাহ মনোনীত ধর্ম, যাতে রয়েছে দুনিয়াতে সম্মান মৃত্যুর পর সুখ ও পরকালেও শান্তি। তাই পড়ে নিলাম লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ্।
এ ঘোষণা ছিল সম্পূর্ণ নিরালায়, একমাত্র সৃষ্টিকর্তার সামনে। তাই আমার ইসলাম গ্রহণ আমার বাবা, ভাই,বোন কেউই জানতো না। এর পর থেকে বেশী সময় কাটতো একা একা, লোকের অগোচরে আমার রুমেই পড়ে নিতাম নামাজ সমূহ। আমার ঈমান অটল রাখার জন্য প্রার্থনা করতাম সেই মহান করুণাময় আল্লাহ তা’য়ালার কাছে। আমি গোপনে বিভিন্ন ইসলামী বই পড়তাম। যত জ্ঞান অর্জন করি ততই আমার আল্লাহর প্রতি ঈমান ও ইয়াকীন বৃদ্ধি হয়েছিল। এমনভাবে অনেক দিন কেটে গেল।
এদিকে আমার পরিবারের অনেকেই আমার প্রতি নজর রাখছে। একে অপরকে জিজ্ঞাসাও করছে যে, সে এমন একা একা থাকতে প্রিয় মনে করে কেন? কেউ বিভিন্ন সন্দেহও করছে আমার ব্যাপারে। আবার কেউ কল্পনা করছে মা মারা যাওয়ার কারণেই হয়তো সে মানসিক ভাবে আঘাত পেয়েছে। তবে আমার ব্যাপারটা তাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে দুর্গা পূজার সময়। তারা ইচ্ছা করেছিল আমাকে মণ্ডপে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু আমি আল্লাহর উপর ভরসা করে সম্পূর্ণ অস্বীকার করলাম। সবাই জিজ্ঞাসা করছে কেন তুমি মণ্ডপে যাবে না? কি হয়েছে? সেই মূর্তে আমার এ অনুভূতি হয়েছিল যে আমি এখন এক মহা পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছি। এই পরীক্ষায় আমাকে অবশ্য উত্তীর্ণ হতে হবে। তাই শাস্তির ভয় না করে মৃত্যুকে বাজি রেখে ঘোষণা দিলাম যে, আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি।
এ খবর মুহূর্তের মধ্যে পৌঁছে গেল সবার কানে। এদিকে বাবা রেগে আগুন হয়ে আসল আমার রুমে। তার এক হাতে ছিল একটি লাঠি আর অপর হাতে ছিল একটি ছড়ি। এবার বাবা উচ্চ স্বরে চিৎকার করে বলছে যে, তুমি নাকি ইসলাম গ্রহণ করেছ? আমি নির্ভয়ে বললাম, হ্যাঁ, আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে পড়েছি ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’’এবার বাবা নির্দয় হয়ে আমার উপর বেদম মার শুরু করলেন। আর মুখে বলতে ছিল ইসলাম গ্রহণের স্বাদ তোমার মিটিয়ে দিব। তার লাঠির আঘাতের বেগ কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছিল, আর আমার মুখে ছিল ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’’। আঘাতের প্রচণ্ডতায় আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। আমি জানি না কতক্ষণ জ্ঞানহারা অবস্থায় ছিলাম, আর এ সময়ের মধ্যে আমার প্রতি কি নির্মম নির্যাতন চালান হয়েছে তা এক মাত্র আল্লাহ ভাল জানেন। তবে আমার চেতনা ফিরে আসার পর দেখি আমার শরীর ফেটে গিয়ে তা থেকে রক্ত ঝরছে।
আশে পাশে চেয়ে দেখি আমার ভাই-ভাবীরা দাঁড়ান অবস্থায়। তারা সবাই বলছে, বাবা এবার এসে তোমাকে না কি বলি দেবে। অতএব তুমি এখন বলবে আমি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করব। এ ছাড়া তোমার পরিত্রাণ পাওয়ার আর কোন উপায় নেই। আমি নির্ভয়ে স্ব-জোরে তাদেরকে বলে দিলাম, আমি প্রকৃত স্রষ্টার সন্ধান পেয়েছি, সত্য ও সঠিক ধর্ম ইসলাম গ্রহণ করেছি। যদি আমার দেহ থেকে শিরোচ্ছেদ হয়ে যায় তার পরও আমি আমার ধর্ম ত্যাগ করব না। আমি বিশ্বাস করেছি সেই মহান করুণাময় আল্লাহকে, যার হাতে আমার জীবন ও মরণ, যিনি পারেন বিপদ থেকে রক্ষা করতে। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে ইজ্জত দিতে পারেন। যাকে ইচ্ছা তাকে অপমান করতে পারেন। তিনি ফকিরকে বাদশাহ করতে পারেন এবং বাদশাহকে ফকির বানাতে পারেন। তিনিই যাকে ইচ্ছা হেদায়েত দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা তাকে পথভ্রষ্ট করেন। তিনিই একমাত্র সর্বময় ক্ষমতার মালিক।
আমার কথা শেষ হতে না হতেই বাবা আবার লাঠি হাতে নিয়ে ছুটে আসল এবং নিষ্ঠুর ভাবে প্রহার শুরু করল। প্রতিটা আঘাতে আমি আল্লাহকে স্মরণ করছি আর মুখে উচ্চারিত হচ্ছে ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’’। ব্যথার উপর আঘাত কত যে কষ্ট তা হয়তো আজ মুখে বর্ণনা করার মত নয়। এখানেই শেষ নয় বরং আমার শরীরে লবণ লাগিয়েছে তারা। ব্যথা, যন্ত্রণা ও জ্বালায় আবার অজ্ঞান হয়ে গেলাম। সচেতন হয়ে দেখি, গভীর অন্ধকারে আমি মাটিতে পড়ে আছি, তারা আমার অদূরেই সবাই মিলে পরামর্শ করছে। আমি শুনতে পাচ্ছি, বাবা বলছে, না, তা হবে না। তাকে জবাই করতেই হবে। ধর্ম ত্যাগের কি অপরাধ তা যেন অন্যেরা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারে। সময় ঠিক করল আগামী কাল প্রকাশ্যে দিবালোকে হত্যা করা হবে। তবে সমস্যা হলো বাকি রাত টুকু কীভাবে কাটবে? কেউ বলছে সে তো অজ্ঞান অসুবিধা কোথায়। অন্যজন বলছে, যদি রাত্রের মধ্যে জ্ঞান ফেরে, তারপর সে পালিয়ে যায়? কেউ প্রস্তাব দিচ্ছে যে তাকে ঘরে তালা দিয়ে রাখা হোক। বাবা বললেন না, সে মুসলমান হয়েছে ধর্মত্যাগী, অপবিত্র কোন মানুষকে আমাদের কোন ঘরে রাখা যাবে না। পরিশেষে সিদ্ধান্ত হলো যে তুলসী গাছের পাশে একটি পরিত্যক্ত কূপে তাকে বাকি রাতটা রাখা হবে । জ্ঞান ফিরলেতো আর কোন অসুবিধা নেই।
সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমাকে সেই কূপে ফেলে দেয়া হলো। আল্লাহর কি কুদরত আমি যেন সেই কূপে আস্তে করে বসে পড়লাম। সেখানে কোন পানি নেই, গভীরতা তেমন না। আমার শরীরের ব্যথা আস্তে আস্তে কমতে শুরু করল।
অন্ধকারে কিছুই দেখতে পারছি না। একা একা উঠতে চেষ্টা করছি কিন্তু ব্যর্থ হলাম। কারণ কূপের মুখ একটি কড়াই দিয়ে ঢাকা, শুধু তাই নয় বরং সেই কড়াইয়ের উপর রয়েছে একটা ভারী পাথর। তাই নিরাশ হয়ে বসে আছি। বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দিয়েছি, মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আর মোমিন হিসাবে আমার মৃত্যু হবে এটাই আমার আনন্দ।
হঠাৎ করে উপরে দিকে একটা শব্দ পেলাম। নজর করলাম কে যেন কড়াইটি সরিয়ে দিল। তারপর আওয়াজ ছোট করে বলছে, দাদা ! দাদা!
আমি বললাম কে?
সে বলল আমি তোমার ছোট ভাই উত্তম। তোমার হাতটি একটু উঁচু করে আমার হাত ধর। আমি তাই করলাম সে আমাকে কূপ থেকে টেনে উপরে উঠিয়ে বলল দাদা! এখন রাত তিনটা ত্রিশ মিনিট। সিদ্ধান্ত হয়েছে সকালবেলা তোমাকে বাবা প্রকাশ্যে বলী দিবে। আর এ সিদ্ধান্তের কারণে আমার ঘুম আসেনি। সবাই ঘুমিয়েছে এই সুযোগে আমি এসেছি দাদা।
আমাকে ক্ষমা কর দাদা। আর কালবিলম্ব না করে তুমি এক্ষুনি চলে যাও। অনেক দূরে চলে যাবে, যাতে কেউ তোমার খোঁজ না জানে। আমি তার চেহারার দিকে লক্ষ করলাম। তার দু নয়ন থেকে অশ্র“ ঝরছে আর এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। সে আমারে অত্যন্ত ভালোবাসত। সেও আমার অতি প্রিয়। আমার হাত ধরে অনুরোধ করেছে দাদা আর বিলম্ব করা কিছুতেই ঠিক হবে না। যদি কেউ টের পেয়ে বসে তবে………।
আমি আমার চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারলাম না। ছোট ভাইটির মুখে একটি চুমু দিয়ে তার থেকে বিদায় নিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করতে করতে সরে পড়লাম। রাতের অন্ধকারের এ ঘটনায় আমার ঈমান আরও কয়েক গুন বৃদ্ধি পেলো যে, রাখে আল্লাহ মারে কে? তাই কিছুদূর গিয়ে আল্লাহর কাছে সিজদায় পড়ে গেলাম। সেই প্রভুর দরবারে জানিয়ে দিলাম। হে মহান স্রষ্টা সকল প্রশংসা একমাত্র তোমারই, সকল ক্ষমতার মালিকও এক মাত্র তুমিই, তাতে কোনই সন্দেহ নেই।
তারপর আমি আমার বাল্যবন্ধু আব্দুল্লাহর বাড়ি সরাসরি চলে গেলাম। আল্লাহর কুদরতের আমি বেঁচে আছি এ খবর দিয়ে তাদের পরামর্শে অনেক দুরে এক মাদ্রাসায় গিয়ে উঠলাম। সকল চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে ইসলাম সম্পর্কে ভাল ভাবে জানার জন্য মনোনিবেশ করলাম। আমার বন্ধু আব্দুল্লাহ মাঝে মাঝে বিভিন্ন খবরা খবর জানিয়ে পত্র লিখত। এমন ভাবে দীর্ঘ দিন কেটে গেল। হঠাৎ একটি পত্র পেলাম, তাতে সে লিখেছে আমার বাবা ভীষণ অসুস্থ। অনেক দিন অসুস্থতার কারণে তিনি বিছানাতেই প্রস্রাব-পায়খানা করছে। বেহুঁশ অবস্থায় ঘরের মধ্যে অবস্থান করছেন। দুর্গন্ধের কারণে কোন ছেলেও তার কাছে যায় না।
এসে দেখলাম অবস্থা করুণ। ভাই ভাবীরা টেলিভিশন সহ আনন্দ উল্লাসে ব্যস্ত। কেউ তার খবর রাখে না। আমি নিজ হাতেই বিছান পত্র সহ সবকিছু পরিষ্কার করলাম। তার শরীর ভিজা গামছা দিয়ে মুছে দিয়ে আতর ব্যবহার করলাম। তারপর ডাক্তারকে নিয়ে এসে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলাম। ডাক্তারের পরামর্শে ঔষধ সহ কিছু ফল ক্রয় করে নিয়ে আসলাম।
আল্লাহর কি অশেষ মেহেরবানি মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই বাবার জ্ঞান ফিরে আসল। আমি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানালাম। তিনি মাঝে মাঝে চক্ষু মেলে দেখেন। কিছু বলতে চাচ্ছেন কিন্তু বলতে পারছেন না। আমাকে চিনতে পারছেন কি না আল্লাহই ভাল জানেন। কারণ আমার মুখে আছে দাড়ি, মাথায় আছে টুপি, পরনে পায়জামা ও পাঞ্জাবি। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, ঔষধ সহ পথ্য সেবন যথানিয়মে চলছে। আর তাকে মাঝে মাঝে বসানোর ব্যবস্থা করতাম, হাত- পা নড়াচড়ার ব্যবস্থা করতাম। তাতে তিনি দ্রুত সুস্থ হতে লাগলেন। একদিন হঠাৎ চোখ খুলে তিনি আমাকে বলছেন,
তুমি কে?
আমি আপনার মেজ ছেলে।
তুমি? তুমি না ইসলাম গ্রহণ করেছ?
হাঁ!
কি জন্য এখানে এসেছ?
আপনার খেদমত করার জন্য।
কে তোমাকে পাঠিয়েছে?
আমার সৃষ্টিকর্তা সেই মহান করুণাময় সমস্ত জগতের প্রতিপালক আল্লাহ আমাকে পাঠিয়েছেন।
তোমার সৃষ্টিকর্তা পাঠিয়েছেন?
তুমি তো মুসলিম আর আমি তো হিন্দু?
বাবা আমাদের ধর্ম ইসলাম। ইসলাম আল্লাহর মনোনীত ধর্ম। আমাদের ইসলাম এতো সুন্দর ধর্ম যে, যদি পিতা অন্য ধর্মাবলম্বী হয় তারপরও জীবদ্দশায় এ পৃথিবীতে তার খেদমত, তার সাথে ভাল ব্যবহার করতে সেই সৃষ্টিকর্তা নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সৃষ্টিকর্তা এরশাদ করছেন: তোমার মাতা পিতা যদি তোমাকে আমার সাথে শরীক করার জন্য পীড়াপীড়ি করে যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই তাহলে তুমি তাদের কথা মানবে না। তবে পৃথিবীতে তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস করবে। (সূরা লোকমান ১৫)
.
.
বাস্তব কাহিনী