১৯৪৭-এ ভারতের জম্মুর মুসলিম গণহত্যা যা ইতিহাসের এক বিস্মৃত অধ্যায়

১৯৪৭ এর ভারতের জম্মুর মুসলিম গণহত্যাঃ যা ইতিহাসের এক বিস্মৃত অধ্যায়
জম্মু ও কাশ্মীর, পাশাপাশি দুটো আলাদা এলাকা। কাশ্মীর মুসলিমপ্রধান, জম্মু হিন্দুপ্রধান। ১৯৪৭ সালের অক্টোবর মাসের আগে জম্মু মুসলিমপ্রধান অঞ্চলই ছিলো, কিন্তু ঐ এক মাসের মধ্যেই মুসলিম গণহত্যা চালিয়ে জম্মুকে হিন্দুপ্রধান অঞ্চলে পরিণত করা হয় ।

১০ই আগস্ট ১৯৪৮ এ লন্ডনের টাইমস পত্রিকায় এই গণহত্যা নিয়ে ছাপা হয়েছিলঃ ২ লক্ষ ৩৭ হাজার মুসলমানকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়, সেইসব মুসলমান ব্যতীত যারা সীমানা দিয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল। এই গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিলো কাশ্মীরে ব্রিটিশ নিয়োজিত রাজা হরি সিং এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ডোগরা সেনাবাহিনীর দ্বারা। ডোগরা সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করেছিল আরএসএসের হিন্দু এবং শিখেরা।

১৯৪৭ এর অক্টোবরের এই গণহত্যার পাঁচদিন পরেই পাঠানরা কাশ্মীর আক্রমণ করে, নয়দিন পরেই হরি সিং ভারতে যোগদান করে। এই গণহত্যার ফলে ৬১% মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জম্মুতে রাতারাতি মুসলমানরা ৩৫% এ নেমে আসে। ১৯৫১ সালের আদমশুমারি করতে গিয়ে এজন্য দেখা যায়, জম্মুতে গ্রামের পর গ্রাম কোন মানুষ নেই। ১২৩ টি গ্রাম সম্পূর্ণ জনমানবহীন ছিলো, জম্মুর কাঠুয়া জেলার ৫০ শতাংশ মুসলিম গায়েব হয়ে গিয়েছিল। (সূত্রঃ http://goo.gl/zRA54Q, http://goo.gl/mlVShF)

গোটা বিশ্ব এই গণহত্যা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না, কারণ ভারতীয় সরকার এই গণহত্যাকে ধামাচাপা দিতে চেষ্টার কোন কমতি রাখেনি। এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে যায় ১৯৮৯ সালের ভাগলপুর দাঙ্গার কথা। ভারতীয় ইতিহাসবিদ গোলাম আহমাদ মোর্তজা তার বইতে লিখেছেন, ঐ দাঙ্গায় লোগিয়ন নামক এক গ্রামে পুলিশের এক হিন্দু এএসআই-এর নেতৃত্বে যে গণহত্যা চলে তাতে ১০৮ জন মুসলমানকে হত্যা করে মাটি চাপা দিয়ে দেয় সন্ত্রাসী হিন্দুরা। সাথে সাথে প্রমাণ লুকাতে ওই গণকবরকে পরিণত করা হয় ফুলকপি ক্ষেতে। অমরপুর নামক এক এলাকায় মুসলমানদের হত্যা করে মাটিতে পুতে ফেলা হয় এবং গণকবরের উপর তৈরি করা হয় রসুন ক্ষেত।

এখন তথ্যপ্রযুক্তির যুগ হওয়ায় আমরা জানতে পেরেছি কাশ্মীরের মুক্তিকামী নেতা বুরহান ওয়ানীর হত্যাকাণ্ডের কথা। এই হত্যাকাণ্ডের জের ধরে আরও ৩০ জন মুসলমানকে গুলি করে শহীদ করেছে ভারতীয় হায়েনারা। (http://goo.gl/eE9S05) ফেসবুক ইন্টারনেট না থাকলে এই হত্যাকাণ্ডের খবর ৪৭-এর জম্মু হত্যাকাণ্ডের মতোই ধামাচাপা পড়ে যেতো, ফুলকপি বা রসুনক্ষেত তৈরী করে মুসলমানদের লাশগুলো ঢেকে দিতো ঠাণ্ডা মাথার হিন্দু খুনীরা।

এসব ইতিহাস পড়েও মুসলমানরা শিশুর মতোই আলাভোলা থেকে যায়, কিছুতেই হিন্দুদের নৃশংস রূপটি তারা বোঝার চেষ্টা করে না। অনেকটা ‘লাইফ অফ পাই’ সিনেমার মূল চরিত্রটির মতো যার কাহিনী আমাকে আমার এক ফ্যান বলেছিলো, যে ছোটবেলায় না বোঝার কারণে বাঘের খাঁচার ভিতরে হাত ঢোকাতে চেষ্টা করেছিল। তার বাবা টের পাওয়ায় অল্পের জন্য সে রক্ষা পায়। (https://youtu.be/QCMPzZXNjUQ)

তার চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধায়ক বাবা পরে ছেলেকে শিক্ষা দেয়ার জন্য জন্য বাঘের খাঁচার গ্রীলে একটা ছাগল বেঁধে রাখে। বাঘ তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে দৌড়ে এসে ছাগলটিকে থাবা দিয়ে ছিঁড়ে ফেলে, বাচ্চাটি এই নির্মম দৃশ্য দেখে তার মায়ের কোলে মাথা লুকায়। (https://youtu.be/ghxNSQpj6pM)

বর্তমান মুসলমানদের দেখলেও আমার ঐ মায়ের কোলে মাথা লুকানো নাবালক ছেলেটির কথাই মনে হয়। এদেরকে যতোই বোঝান না কেন, হিন্দুরা তোমার শত্রু, তারা ততোই মাথা লুকিয়ে বাচ্চামানুষের মতো বলতে থাকে, যান যান বেশি সাম্প্রদায়িকতা দেখাবেন না। তবে অচিরেই বাঙালি মুসলমানদের এই ইম্যাচিউরিটি ও ছেলেমানুষির অবসান ঘটবে, যখন হিন্দুপ্রীতির খেসারত দিতে গিয়ে তাদেরকেও সিরিয়ার মুসলমানদের মতো উদ্ধাস্তু হয়ে সাগরে ভাসতে হবে।

Leave a comment